চার বছরের ছোট ছেলে আসিফ (ছদ্মনাম)। সেই ছোটবেলা থেকেই একটু জেদি ও অস্থির প্রকৃতির। এ সমস্যা আরও প্রকট হয়ে ধরা পড়ে, যখন ঢাকার স্বনামধন্য একটি স্কুলে ভর্তি হয় সে। স্কুলের শিক্ষকেরা জানান, আসিফ কারও কথাই শোনে না। ক্লাসে নাম ধরে ডাকলেও কোনো উত্তর দেয় না। সহপাঠীদের সঙ্গেও মেশে কম। সারাক্ষণই থাকে একা একা। সেই সঙ্গে প্রায়ই শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকে আসিফ।
তার এ সমস্যা কাটাতে অভিভাবকেরা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। নানা পরীক্ষার পর চিকিৎসক জানান, আসিফের শারীরিক কোনো সমস্যা নেই। ওর যা সমস্যা তা সবই মানসিক। আর এই মানসিক সমস্যাই তাকে দিন দিন শারীরিকভাবে দুর্বল করে তুলছে। আর তাই শারীরিক চিকিৎসার চেয়ে তার এখন বেশি প্রয়োজন মানসিক চিকিৎসা।
আমাদের দেশে এমন শিশু-কিশোরের সংখ্যা কম নয়, যারা আসিফের মতো সমস্যায় ভুগছে। শৈশবেই শিশুর এই মানসিক রোগের চিকিৎসা না করা হলে কৈশোরে এই শিশুর আচার-আচরণ কিশোর-অপরাধের পর্যায়ে চলে যেতে পারে। এ সমস্যার হাত থেকে শিশুকে বাঁচাতে প্রথমেই প্রয়োজন অভিভাবক ও শিক্ষকদের সচেতনতা। আর তাঁদের এই সচেতনতা বাড়াতেই নিয়মিত কর্মশালার আয়োজন করে আসছে অর্গানাইজেশন ফর চিলড্রেনস কেয়ার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (অরকিড)। এরই ধারাবাহিকতায় ১৬ মার্চ ঢাকায় এই কর্মশালার আয়োজন করে প্রতিষ্ঠানটি। ‘শিশু-কিশোরদের আচরণগত সমস্যা চিহ্নিতকরণ ও আমাদের করণীয়’ শীর্ষক এই কর্মশালায় অরকিডের নির্বাহী পরিচালক মনোবিজ্ঞানী উম্মে কুলসুম জানান, শিশুর অনেক মানসিক সমস্যাই আমরা সচেতনতার অভাবে এড়িয়ে যাই। এসব সমস্যার মধ্যে রয়েছে অতিরিক্ত জেদ, সমবয়সী বন্ধুদের সঙ্গে মিশতে না পারা, ভাঙচুর করা, মিথ্যা বলা, মারামারি করা ইত্যাদি। শুরুতেই এসব সমস্যাকে গুরুত্ব না দেওয়ার কারণে এটা একসময় শিশুর অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়। এভাবেই শুরু হয় শিশুর মানসিক রোগ। আর এই রোগের কারণে একটা সময় শিশুর আচার-আচরণ অপরাধের পর্যায়ে চলে যেতে পারে।
প্রথম আলোকে উম্মে কুলসুম বলেন, এসব সমস্যা ছাড়াও শৈশবে বিভিন্ন সমস্যায় ভোগে শিশুরা। এসব সমস্যার মধ্যে রয়েছে শিশুর লিখতে না পারা, খেতে না চাওয়া, নিজেকে আঘাত করা, আত্মবিশ্বাসের অভাব, নার্ভাসনেস ইত্যাদি অনেক কিছুই। অভিভাবকদের একটু সচেতনতাই পারে শিশুকে এসব সমস্যার হাত থেকে রক্ষা করতে। আর তাই অভিভাবক ও শিক্ষকদের নিয়ে তাঁরা নিয়মিত আয়োজন করে আসছেন বিভিন্ন কর্মশালার। এ ছাড়া শিশুদের মানসিক বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দেওয়ার জন্য একটি ক্লিনিক পরিচালনা করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি।
আয়োজকেরা জানান, আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে আরও একটি কর্মশালার আয়োজন করছেন তাঁরা। এতে অংশ নিতে চাইলে অরকিডের কার্যালয়ে নিবন্ধন করতে হবে।
ফোনঃ ৮৩৫৫৮৭৮।
— আরাফাত সিদ্দিকী
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মার্চ ২৫, ২০০৯
Leave a Reply