প্রতিদিন সকালে প্রৈতির ঘুম ভাঙ্গে অজানা এক ভয় নিয়ে। তবে ভয়টা যে সম্পূর্ণ অজানা তা কিন্তু নয়। ভোরবেলায় ঘুম ভাঙ্গার পর তার মনে হয় আজ কি ঠিকে ঝি রহিমার মা আসবে? তিন মাস যাবত সতেজ সকালের নির্মল আনন্দ থেকে বঞ্চিত প্রৈতি। তিন মাস আগে তার বাসার কাজের মেয়েকে দুদিনের কথা বলে নিয়ে গেছে ওর বাবা, আজ অবধি কোন হদিস নেই। বহু কষ্টে শিষ্টে একটা ঠিকেঝি জোগাড় হল, তবে প্রায়ই তার নাগা লেগেই আছে। আর তখন প্রৈতি দেখতে পায় মাথার ওপর আকাশ। প্রীতর সাথে এই নিয়ে সকাল বেলাতেই এক চোট হয়ে যায়। দুজনের অফিস অতসব বাড়ির কাজের ঝামেলা কি আর সহ্য হয়। এই শুধু প্রীত আর প্রৈতির সমস্যা নয় আজ আমাদের ঘরে ঘরে এমন একজন পাওয়া যাবে না যে কাজের লোকের সমস্যায় ভূক্তভোগী নয়। ভাল একটি কাজের লোক পাওয়া আজ আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার মতো মনে হয়। কারণ পত্রিকা খুললে কাজের লোকের চোর-ডাকাতি আর খুন করে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাও চোখে পরে। তাই আর কাজের লোকের উপর নির্ভর নয়। দেখি না বিদেশিদের মতো আমরাও কাজের লোক ছাড়া চলতে পারিকিনা। সেই সমাধানই কিছু উপায় নিয়ে কথা বলেছেন হাসান মাহমুদ
বিকল্পটা কি?
বাড়ির কাজের জন্য যদিও রোবট এরই মধ্যে আবিস্কার হয়ে গেছে। তথাপি তা আমাদের সাধ্যের অতিত। আমাদের সাধ্যের মধ্যে আছে অনেক ছোট খাট যন্ত্র যা কাজের লোকের বিকল্প হিসেবে আপনাকে সাহায্য করবে। তাই কাজের লোক না থাকলেও গায়ে বাতাস লাগিয়ে বেড়ানো কোন ব্যাপারই নয়। ব্যাপার শুধু একটি কষ্ট করে যন্ত্রগুলো কিনে নেয়া।
টোস্টার : কাজের লোক না থাকলে সকালে নাস্তার জন্য আলু, রুটি, সবজির দিক থেকে ঘুরে দাঁড়ান একটু। এখন অত সময় কই, নাস্তার পেছনে দেয়ার। তাই ড্রাইনিং টেবিলের কাছে রাখুন টোস্টার। কারণ এখন সময় ব্রেড-এগ কফি বা ফলের রসের। দু মিনিটে টোস্ট করে নিন ঝামেলা নেই কোন।
কফি মেকার: কাজের লোক নেই বলে কি আর চা কফি খাওয়া হবে না। তাই কি হয়? তাহলে কিনে নিন কফি মেকার, পরিমাণ মতো চিনি, দুধ আর চা কিংবা কফি দিয়ে যন্ত্র চালু করলেই নিমেশেই পাবেন ক্লান্তি ঝেড়ে ফেলার জন্য চা বা কফি। চা করলে যন্ত্রেই ছাকনির সুবিধা আছে তা ছেকে নিতে হবে।
জুসার: বাড়িতে অতিথি এলে বা বা”চাদের জন্য কিংবা নিজেও খেতে পারেন পুষ্টিকর ফলের রস। আর তার জন্য আপনার লাগবে একটি জুসার। খোসা আর বিচি ছাড়িয়ে ফলের টুকরো দিয়ে দিন জুসারে। আর টিভিতে দেখা বিজ্ঞাপন চিত্রের মতো তরতাজা হয়ে উঠুন ফলের রসে।
রাইস কুকার: অনেকেই ভাত রান্না নিয়ে পড়েন নানা বিপাকে। কখনো হয় শক্ত কখনো আবার খুব বেশি নরম। কারণ ভাত রান্নার দায়িত্বটা পালন করত বাড়ির কাজের লোক। এবার আপনার মুশকিল আহসান করবে রাইস কুকার। ফ্যান গালার ঝামেলাও নেই। মাপ মতো চাল আর পানি দিয়ে অন করুন। আপনা আপনি ভাত রান্না হল। যতক্ষণ না খাবেন ততক্ষণ ভাত গরম থাকবে।
ভাকুয়াম ক্লিনার: বাইরে যাওয়ার সময় দরজা জানালা বন্ধ করে যান। ঘরে জুতো খুলে ঢোকেন। ঘরে ধুলোবালির বালাই নেই। সপ্তাহে দুদিন ভ্যাকিউম করুন। ব্যাস সব ঠিকঠাক।
মাইক্রো ওভেন: মাইক্রো ওভেন আর রেফ্রিজারেটার দুটি কাজের লোকের সমান কাজ করে। মাইক্রো থাকলে সবজি আধ সেদ্ধ করে রান্না করা যাবে সময়ও কম লাগবে। তাছাড়া বাইরে থেকে ফিরে এক প্লেটে ভাত ভাজি আর তরকারি নিয়ে গরম করে খেতে পারেন কোন ঝামেলায় না গিয়ে।
ওয়াশিং মেশিন: কাপড় ধোয়ার জন্য বরাবরই আপনার কাজের লোকের উপর নির্ভর করতে হয়। তাই কাজের লোকের অভাবে তো আর হাত গুটিয়ে বসে থাকা যায় না। আর অত ভারি চাদর কিংবা জিন্স এর প্যান্ট আপনার পক্ষেও ধোয়া সম্ভব নয়। তাই দরকার ওয়াশিং মেশিন। বাজারে দু ধরনের ওয়াশিং মেশিন আছে। অটোমেটিক ও সেমি অটোমেটিক। সেমি অটোমেটিক মেশিনে দুটি টাব থাকে। একটিতে কাপড় ও ডিটারজেন্ট দিয়ে অন করলেই ধোয়া হয়ে যাবে। ধোয়ার সময়ে আপনি নিজেকে ব্যস্ত করতে পারেন অন্য কাজে। কারণ ধোয়া সম্পূণৃ হলে মেশিনই আপনাকে জানান দেবে। প্রথম টাবের কাজ শেষে এবার দ্বিতীয় টাবের কাজ শুরু করতে হবে। এখানে কাপড় ধোয়া সম্পূর্ণ হবে এবং শুকোনোর কাজটাও হবে। এ টাবের কাজ শেষ হলে কাপড় বের করে শুকিয়ে নিন।
রুটি মেকার: একটি রুটি মেকার ফুড প্রসেসর থাকলে সকালে আপনার নাস্তায় অতি সহজে পেতে পারেন রুটি। তাতে কাজের লোক থাক আর না থাক কিছু যায় আসে না। আটামাখা থেকে শুরু করে সব কাজ হবে রুটি মেকারে।
ফুড প্রসেসর: নানা রকম তরকারি নানা মাপে কাটার জন্যে ফুড প্রসেসর-এ আলাদা আলাদা ব্লেড থাকে। ডিম ও দুধের খাবার তৈরির জন্য আলাদা জার থাকবে। তাছাড়া মিক্সামের জন্যও আলাদা জ্বার থাকবে।
সহযোগিতা: এই সকল যন্ত্র গুলো আপনি কিস্তিতে কিনতে পারেন। নামীদামী কোম্পানিগুলো ক্রেতাদের সুবিধার জন্য সহজ কিস্তির ব্যবস’া করেছে। তবে নগদ মূল্যের চাইতে কিস্তি মূল্য কিছুটা বেশি হবে। তাছাড়া আজকাল ব্যাংকও পারিবারিক ঋণ দি”েছ।
কোথায় পাবেন: স্টেডিয়াম, এলিফ্যান্ট রোড, ফার্মগেট, নিউ মার্কেট, গুলশান, বনানী, উত্তরার বিভিন্ন মার্কেটে এই সকল যন্ত্রগুলো কিনতে পাওয়া যায়। তবে কেনার আগে কোম্পানির সত্যতা ও নিশ্চয়তা সম্পর্কে সতর্ক হোন। নকল যন্ত্র কিনে প্রতারিত হবেন না।
হোম ডেলিভারি ও অফিস ডেলিভারি: আজকাল অনেক পরিবারেই স্বামী-স্ত্রী দুজনেই চাকরি করেন। রান্না-খাওয়া নিয়ে তাদের চিন্তার অবসান করতে অনেকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। তারা দু-বেলা খাবার পৌছে দেবে আপনার ঘরে কিংবা অফিসে। তাছাড়া যে কোন অনুষ্ঠানেও তারা খাবার সরবরাহ করে থাকে। অনেক দোকানে তৈরি করা সিঙ্গারা, পিঠা, সহ অনেক রকম নাস্তা পাওয়া যায়। যা প্যাকেট খুলে ভেজে নিলেই খাওয়া যায়। তাই বিকেলের নাস্তার ঝামেলাটাও চুকে গেল। এরকম তৈরি খাবারের প্যাকেটের গায়ে সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাত করণ পদ্ধতি লেখা থাকে।
শেষ কথা: এত কথা বলার পরে কি আর কোন কথা থাকে? না থাকে না। এখন থাকে শুধু কাজের লোকের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে নেয়ার পালা।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, এপ্রিল ২০, ২০১০
Leave a Reply