সাধ আর সাধ্যের মধ্যে সঠিক সমন্বয় ঘটানো সত্যিই অনেক সময় কঠিন হয়ে পরে। মনে সাধ জাগতে পারে অনেক কিছুই কিন্তু তা যদি সাধ্যের মধ্যে না হয় তবে মন খারাপ হয়ে যায়। গৃহকর্তার পছন্দ, রুচি, চাহিদা, প্রয়োজনীয়তা ইত্যাদি কিছুর মধ্যে একটা যদি সুষ্ঠু পরিকল্পনা থাকে, তবে বাজেটের চাপে ধাক্কা খেতে হবে না। পরিমিত, কম বাজেটের মধ্যেও আপনী আপনার গৃহকোন সুন্দর করে সাজাতে পারেন যদি একটু মেধা ও বুদ্ধি খরচ করেন। কম বাজেটেও সুন্দর হয়ে হেসে উঠবে আপনার ঘরটি। একটি বাড়ির প্রথম ঘর হল লিভিং রুম। বাইরের যেকোন মানুষ আপনার লিভিং রুম বা বসার ঘরে প্রবেশ করে। এখানেই বেশী লোকের সমাবেশ ঘটে। যেকোন আড্ডা, টিভি দেখা বা পরিবার-প্রিয়জনের সাথে গল্পে মেতে ওঠার জন্য পারফেক্ট স্থান হল আপনার লিভিং রুমটি। তাই গৃহ সজ্জার প্রথম কিস্তি শুরু হয় লিভিং রুম থেকে। আপনার লিভিং রুমকে সাজিয়ে তুলতে কিছু বিষয় বিবেচনায় আনতে পারেন। প্রথমেই যা করতে হবে তা হল সঠিক প্লানিং। সঠিক পরিকল্পনা মত কাজ করলে সাধ্যের মধ্যে কম বাজেটেই সুন্দর করে সাজিয়ে ফেলতে পারবেন লিভিং রুমকে।
সঠিক স্থান নির্বাচন
প্রথমেই আপনাকে সঠিক স্থান নির্বাচন করতে হবে অপনার লিভিং রুমের জন্য। লিভিং রুমের প্যাটার্ন কি হবে তা আগে ঠিক করে নিতে হবে। আপনার লিভিং রুম যদি সিঙ্গেল হয় তবে একরকম হবে আর যদি ড্রইং কাম ডাইনিং অথবা ড্রইং কাম স্টাডি হয় তবে এই দুই প্রকারের লিভিং রুমের ইন্টেরিয়র বাজেটের মধ্যে পার্থক্য থাকবে অবশ্যই।
কম বাজেটের মধ্যে লিভিংরুম সাজাতে চাইলে মাঝারি মাপের কোন ঘরকে বেছে নিন। অনেক আলো বাতাস আসে এমন রুম হলে সবচাইতে ভালো হবে।
রংয়ে রঙিন ঘর
একটি ঘরের মুড বা সৌন্দর্য্য অনেকাংশে নির্ভর করে দেয়ালের কালারের উপর। কালার নির্বাচনে তাই মনোযোগী হোন। লিভিং রুমের কোন এক দেয়ালকে বেছে নিয়ে তাতে কোন উজ্জল রং ব্যবহার করতে পারেন। সেক্ষেত্রে ঘরের বাকি তিন দেয়ালের রং হবে হালকা। যে ঘরে আলো কম ঢুকে এবং আয়তনে ছোট, সেই ঘরে হালকা উজ্জল রং যেমন অরেঞ্জ এর বাইল্ড শেড বা প্রইট ইয়েলো কালার লাগালে ঘরকে উজ্জ্বল বলে মনে হবে। বাজারে যেসব রং পাওয়া যায় তা তিন ধরনের হয়।
১. ডিসটেম্পার ২. অ্যাক্রিলিক ইমালশন এবং ৩. প্রিমিয়াম কোয়ালিটি পেইন্ট।
তিন রকমের রঙের মধ্যে পার্থক্যটা মূলত ফিনিসিং এর এবং তার ফলস্বরুপ দামের। কম বাজেটে অন্তত বছর চার ভাল থাকবে এমন হলে অ্যাক্রিলিক ইমালসন এবং এনামেল পেইন্ট লাগাতে পারেন। এই প্রকার কালারের একটা সুবিধা হল দেয়ালে ময়লা জমলে তা পরিস্কার করা যায়।
কোথায় কি করবেন
প্রথমে ঠিক করে নিন কোথায় কি রাখবেন। দেখতে সুন্দর আকারে ছোট এমন সব আসবাব রাখবার চেষ্টা করুন। বুকশেল্ফ বা স্টোরেজের স্মার্ট লুক না হলে সেগুলো লিভিং রুমে না রাখাই ভালো। যদি আপনার ড্রইং কাম ডাইনিং হয় তবে সেক্ষেত্রে পার্টিশন হিসেবে বুকশেল্ফ বা স্টাইলিশ শোকেস ব্যবহার করতে পারেন। অথবা মাল্টি পারপাস ক্যাবিনেট যেখানে আপনার টিভি, মিউজিক সিস্টেম, বুকশেল্ফ, শোকেস ইত্যাদির সমন্বয় ঘটিয়ে একটার মধ্যে সবকিছুর অ্যারেঞ্জমেন্ট করা যায় এমন ক্যাবিনেট পার্টিশন হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। একেবারেই যদি লো বাজেট এবং সিম্পল পার্টিশন ব্যবহার করতে চান তবে বাঁশের চিক ব্যবহার করতে পারেন। এই সিম্পল বাঁশের চিকে আপনী ছোট ছোট আয়নার টুকরা, মাটির ঘন্টা, পুতুল, পাখি, চুমকী, পুতি ইত্যাদি ডিজাইন করে লাগিয়ে স্টাইলিশ একটা লুক আনতে পারেন।
লিভিং রুমের মেঝেতে দেয়ালের কালার এবং ঘরের অন্যান্য আসবাবের সাথে মিলিয়ে কার্পেট ব্যবহার করুন। ওয়াল টু ওয়াল কার্পেট বিছাতে হবে এমন কোন মানে নেই। সেন্টার টেবিলের নিচে শুধু ছোট কাশ্মীরি কার্পেট রেখে বাকি ফ্লোর খালি রাখতে পারেন। আবার চাইলে আপনি শতরঞ্জীও রাখতে পারেন। এরকম আরো অনেক কিছু চাইলে আপনি আপনার পছন্দমত করিয়ে নিতে পারেন। এতো হল আপনা ঘর সাজানোর গোড়ার দিকে কিছু । আরো কিছু তথ্য দেয়ার চেষ্টা করা হবে পরবর্তী লেখায়।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, এপ্রিল ২০, ২০১০
Leave a Reply