জীবনে চলতে-ফিরতে যেসব আইনি জটিলতায় পড়তে হয়, পাঠকের উকিল বিভাগে ১৫ দিন পরপর তারই সমাধান পাওয়া যাবে।পাঠকের উকিল বিভাগে আইনি সমস্যার সমাধান দেবেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট নাহিদ মাহতাব। স্পষ্ট করে নিজের সমস্যাটি লিখে পাঠান। প্রয়োজনীয় কাগজের অনুলিপি দিন।
খামের ওপর লিখুন :
পাঠকের উকিল, নকশা, দৈনিক প্রথম আলো
সিএ ভবন, ১০০ কাজী নজরুলইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা
আমি একজন ছাত্র। বয়স ২৫ বছর। ছয় মাস আগে আমাদের প্রতিবেশী ২১ বছর বয়সী অবিবাহিত বাকপ্রতিবন্ধী একটি মেয়ে গর্ভপাত করে। মেয়েটির পরিবারের লোকজন পূর্বশত্রুতার জের ধরে আমার ওপর এর দায়ভার চাপানোর চেষ্টা চালায় এবং মেয়েটিকেও আমার কথা ইশারায় শিখিয়ে দেয়। এলাকায় তারা প্রভাবশালী বিধায় মেয়েটির সঙ্গে জোরপূর্বক আমার বিয়ে নিবন্ধন করানোর পাঁয়তারা করলে ভয়ে আমি নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাই। তারা আমাকে না পেয়ে আমার মা-বাবাকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিয়ে মেয়েটির নামে আমার মায়ের নিজ নামের ১৫ শতাংশ জমি কেনা হিসেবে নিবন্ধন করিয়ে নেয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমি চার মাস পরে বাড়িতে ফিরে আসি এবং দুই মাস হলো বাড়িতেই থাকছি। এই দুই মাসে তারা আমাকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিয়ে আসছে। শুধু তা-ই নয়, এখন তারা আমার বিরুদ্ধে মামলার পাঁয়তারা করছে। মামলা করার জন্য যদিও তাদের কাছে ডাক্তারি পরীক্ষার কাগজপত্র নেই। তবু তারা বিভিন্ন মিথ্যা সাক্ষীর মাধ্যমে মামলা করবে বলে জানায়। এ অবস্থায় আমি কী করব? যদি মামলা করে, তবে সেটি কার্যকর হবে কি?
মো. শাহীন আলম
শান্তিনগর, রাজারহাট, কুড়িগ্রাম।
যদি ধরে নেওয়া যায় যে বাকপ্রতিবন্ধী মেয়েটির সঙ্গে আপনার দৈহিক সম্পর্ক ছিল, সে ক্ষেত্রে মেয়েটি যেহেতু সাবালিকা, তাই মনে করা হবে যে মেয়েটির সম্মতিতেই এই দৈহিক সম্পর্ক হয়েছিল। আপনার চিঠির তথ্য অনুযায়ী পরে মায়ের নামের জমি মেয়েটিকে নিবন্ধন করে দেওয়ার মাধ্যমে বিষয়টির নিষ্পত্তি হয়েছে। এ রকম পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন পর দৈহিক সম্পর্কের জন্য দায়ী করে মামলা দায়ের যথাযথ নয়। তবে এ ধরনের মামলা প্রতিরোধ করার কোনো সুযোগ আপনার নেই। আমার পরামর্শ হচ্ছে, এ ধরনের মামলা হলে আপনার দায়িত্ব মামলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা।
আমার দাদি ১৯৯৪ সালে আমার ফুফুকে তাঁর সম্পত্তি আমার আব্বার সম্পূর্ণ অজান্তে দলিল নিবন্ধন করে দিয়ে দেন। প্রায় পাঁচ বছর পর আমরা এ কথা জানতে পারি। এ হিসাবে ফুফু তাঁর নিজের ও দাদির সম্পত্তির মালিক। ফুফু আমাদের বাড়িতে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে চাইলে আমাদের আপত্তিতে তা পারেননি। ফলে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি তাঁর জায়গা স্থানীয় এক মাদ্রাসায় ২০০৮ সালের জুন/জুলাই মাসে (বিক্রি নয়, মূল্য ধার্য করে) দান করে দেন। তখনই আমরা দান করা জায়গাটি ফেরত আনার জন্য চেষ্টা করি। কিন্তু মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ জায়গাটির উচ্চমূল্য দাবি করায় আমরা তা ফেরত আনতে পারিনি। উল্লেখ্য, দান করা জায়গাটিই আমাদের বসতভিটা। আমার প্রশ্ন, শফি বা অন্য কোনো আইনি প্রক্রিয়ায় আমরা জায়গাটি ফেরত পাব কি? (আমরা জানতাম, শফির মেয়াদ তিন মাস। আর দানপত্রে কোনো শফি নেই। ঠিক কি?)
কয়েস আহমদ
জকিগঞ্জ, সিলেট।
আপনার ফুফু তাঁর সম্পত্তি যে মাদ্রাসায় দান করে দিয়েছেন, তা কার্যকর হয়ে গেছে। এই দান করা সম্পত্তিতে অগ্রক্রয় (প্রিএম্পশন) বা মুসলিম আইন অনুযায়ী শফি প্রযোজ্য হবে না। এখানে উল্লেখ্য, দানের ক্ষেত্রে অগ্রক্রয়ের অধিকার সৃষ্টি হয় না। অগ্রক্রয়ের অধিকার একটি আইন নির্ধারিত অধিকার। সুতরাং আইনে এই অধিকার না থাকলে অন্য কোনোভাবে এই অধিকার প্রয়োগ করা যায় না। এ ক্ষেত্রে আপনি আপস-মীমাংসার মাধ্যমে অথবা বিনিময়ের মাধ্যমে জায়গাটি ফেরত পাওয়ার চেষ্টা করতে পারেন।
আমি একজন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। আমার বয়স ২১ বছর। পাঁচ বছর ধরে আমার একজনের সঙ্গে সম্পর্ক থাকলেও বাবা-মায়ের ইচ্ছায় আমার চেয়েও ১৬ বছরের বড় অন্য একটি ছেলেকে বিয়ে করতে বাধ্য হই। কিন্তু আমি আমার স্বামীকে মন থেকে মেনে নিতে পারিনি। কারণ, তার মেজাজ সব সময় খিটখিটে থাকে, প্রবল সন্দেহপ্রবণ এবং কারণে-অকারণে খারাপ ব্যবহার করে ইত্যাদি। এখন আমি তাকে তালাক দিতে মানসিকভাবে প্রস্তুত। এ জন্য আমাকে কী করতে হবে? সে আমার বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারবে কি? তাতে আমার সরকারি চাকরিতে কোনো সমস্যা হবে কি? উল্লেখ্য, দেনমোহরের টাকার প্রতি আমার কোনো দাবি নেই এবং তার দেওয়া ১০ ভরি স্বর্ণও তাকে ফিরিয়ে দেব। আমার কাছে বিয়ের কোনো কাগজপত্র নেই। আর এর মধ্যে আমি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
মাইজদী কোর্ট, নোয়াখালী
মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী তালাক-ই তাউফিজ বা তালাকের অর্পিত ক্ষমতাপ্রাপ্ত স্ত্রী স্বামীকে তালাক প্রদানের অধিকার রাখেন। বর্তমানে ছাপানো কাবিননামায় এই ক্ষমতা দেওয়া থাকে। আপনি তালাক প্রদানের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানকে লিখিত নোটিশ দিয়ে নোটিশের একটি অনুলিপি স্বামীকে সরবরাহ করবেন। সাধারণত চেয়ারম্যান কর্তৃক নোটিশপ্রাপ্তির ৯০ দিনের মধ্যে তালাক কার্যকর হয়। কিন্তু যেহেতু আপনি অন্তঃসত্ত্বা, সেহেতু আপনার গর্ভকাল অতিক্রান্ত হওয়ার পরেই এই তালাক কার্যকর হবে।
ছয় বছর বয়সে আমার মা মারা যাওয়ার পর বাবা আমার খালাকে বিয়ে করেন। আমি অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়ি। কিছুদিন আগে আমার বাবা মারা যান। তিনি সরকারি চাকরি করতেন। তাঁর মৃত্যুর পর পেনশন, এককালীন, কল্যাণ তহবিল—সবকিছুই খালা পাচ্ছেন। আমরা দুই ভাই চাচার কথামতো অফিসের কাগজপত্রে সই করেছিলাম। কিন্তু এখন আমাদের কিছুই দেওয়া হয় না। আব্বার একজন সহকর্মী বলছিলেন, তোমরাও এর সবকিছু আইনগতভাবে পাবে। কারণ তোমার বাবা তোমার খালার নামে নমিনি করে যাননি। কিন্তু খালা দেওয়া তো দূরের কথা, স্বাক্ষর দেওয়ার পরে বিভিন্নভাবে ভয় দেখান। এখন আমরা কী করতে পারি?
সাব্বির
নাটোর।
আপনি চিঠিতে অফিসের কাগজপত্র সই করার কথা উল্লেখ করেছেন। এ ধরনের কাগজে কী লেখা ছিল এবং আপনারা কত বছর বয়সে তাতে সই করেছেন তাও উল্লেখ করা প্রয়োজন। আপনাদের উচিত বাবার অফিসে গিয়ে প্রকৃত পরিস্থিতি জানা। যদি আপনার বাবা আপনার খালাকে তাঁর পেনশন ও কল্যাণ তহবিলের নমিনি করে থাকেন, তাহলে আপনারা তাতে দাবিদার হবেন না। অন্যথায় মুসলিম উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী আপনারা ওই পেনশন ও কল্যাণ তহবিলের অংশ পাবেন। তা ছাড়া আপনার বাবার স্থাবর সম্পত্তি মুসলিম আইন অনুযায়ী বণ্টিত হবে এবং আপনারা আপনাদের অংশের হকদার। আপনার দ্বিতীয় প্রশ্নের জবাবে জানাচ্ছি যে নিজের পরিশ্রমে জীবনে প্রতিষ্ঠা পাওয়া সম্ভব। সুতরাং অহেতুক চিন্তা না করে আপনাদের উচিত লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করা।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, এপ্রিল ২০, ২০১০
লিটন
আমার নানীর ১০কাঠা সম্পত্তি আছে সেটা তার সাম্বী মানে নানার মৃত্যুর পর তার কাছ থেকে পাপ্ত।নানীর মৃত্যুর পর তার সম্পত্তি তার ছেলে মেয়েরা কিভাবে পাবে? বর্তমানে তার ২ ছেলে এবং ৩ মেয়ে জীবিত আছে।এছাড়া তার মৃত ১ ছেলে তার ঘরে জীবিত ৪ ছেলে এবং মৃত মেয়ের ঘরে জীবিত ১ মেয়ে আছে।তাহলে উক্ত সম্পত্তি ইসলামী শরীয়াভিত্তিক কিভাবে বন্টিত হবে।