কাল ভোরের কুসুমরঙা সূর্যটা বাঙালির মনে ছড়িয়ে দেবে অন্যরকম ভাললাগার আমেজ। ভোরের আলো চোখে পড়লে পাশ ফিরে শুয়ে পড়বো না। বেরিয়ে পড়বো নতুন বছর বরণে। দিন চড়লে তার তাপ যন্ত্রনা দেবেনা অন্যদিনের মতো। বাতাসে ধূলার সঙ্গে যেন থাকবে নতুন কোন বার্তা। প্রকৃতির কোন বিরোধিতাকেই কেয়ার করবো না আমরা। ভিড়ের মধ্যে ঘামের সঙ্গে বিরক্তি চুইয়ে পড়বে না। এর মধ্যেই যেন অনুভব করবো ঐক্যের বন্ধন। ইলিশ কেনার সামর্থ্য সবার না-ই বা থাকল। পান্তাভাতের সঙ্গে আলুভর্তা আর কদমা-বাতাসা দিয়েই আমরা করবো অতিথি আপ্যায়ন। পরিবারের সদস্য আর বন্ধুদের প্রিয় মুখগুলো ঘিরে থাকবে আমাদের। সবাইকে নিয়ে চলবে নতুন বাংলা বছর ১৪১৭ উদযাপন।
নতুন পোশাক বোধহয় এর মধ্যেই অনেকের কেনা হয়েছে। আজ চলছে খুঁটিনাটি সব প্রস্ততি। কালকের জন্য তাজা ফুল চাই। পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে গয়না আছে তো? রাতেই ভিজিয়ে রাখতে হবে পান্তাভাত। অতিথিদের সবাইকে নিমন্ত্রণ করা হল? আজকের দিনে ব্যস্ততা অনেক।
কাল সকালেই তো অনেকে বেরিয়ে পড়বেন। অনেকে আবার দিনটা বাড়িতে কাটিয়ে বিকেলের দিকে বের হন। সারাদিন জুড়েই ঢাকা শহরের নানা জায়গায় থাকবে নানা আয়োজন। ছায়ানটের বর্ষবরণ উৎসব, চারুকলার শোভাযাত্রা সকালেই হয়। এতে অংশ নিতে চাইলে তাই বেরিয়ে পড়তে হবে ছয়টা-সাতটার মধ্যেই। রোদ চড়ে গেলে বেড়ানোর মজা অনেকটাই ফিকে হয়ে যাবে। সকালের দিকে যারা বের হবেন। দুপুর বারটার মধ্যেই তাঁরা ঘরে ফিরতে পারেন। দুপুরটা জিরিয়ে আবার বিকেলে বের হওয়া যাবে। ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী এলাকার বৈশাখি আয়োজন যেন বিকেলেই বেশি জমে ওঠে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সকালটা কাটিয়ে বিকেলে এদিকে চলে আসা যেতে পারে।
বাইরের ঘোরাঘুরির ফাঁকে ঘরেও চলতে পারে নানা আয়োজন। ডিজাইনার শৈবাল সাহা মনে করেন, ‘বৈশাখি আমেজটা ঘরে ফুটিয়ে তুলতে খুব যে সামর্থ্য থাকা চাই তা নয়। বরং রুচি আর একটু চেষ্টা থাকাই যথেষ্ট। সবাইকেই যেন ছুঁয়ে যায় বর্ষবরণের আনন্দ আর উচ্ছলতা।’
এজন্য সহজ কিছু বিষয়ের কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি। যেমন আসবাবের সামান্য একটু রদবদলেই পাওয়া যাবে নববর্ষের আমেজ। বসার ঘরে সোফার কুশন কভারগুলো এদিন লাল-সাদা রঙের হতে পারে। এর সঙ্গে সেন্টার টেবিলে ফ্লাওয়ার ভাসে থাকতে পারে লাল ও সাদা রঙের যেকোন ফুল। বাটিতে করে বেলিফুলের মালাও রাখা যেতে পারে। ঘরের কোনে দীপ্তি ছড়াবে মোমবাতি বা মাটির প্রদীপ। এদিন খাবার পরিবেশনটা নাহয় মাটি অথবা কাসার বাসনে করেই হল।
‘আগে আমরা মুড়ির সঙ্গে নারকেল কুরানো মেখে খেতাম খুব। এখন এর চল তেমন দেখা যায়না। পয়লা বৈশাখে সন্ধ্যায় অতিথিদের যদি এটি খেতে দেয়া যায় তবে আড্ডা জমবে বেশ। এর সঙ্গে থাকতে পারে মোয়া, সন্দেশ, পায়েশ।’ বললেন শৈবাল সাহা।
খাবার টেবিলে দেশী খাবার এদিন থাকা চাই-ই। তেল-মসলায় মাখা খাবার নয়। বরং গরমে খেয়ে পাওয়া যাবে এমন হালকা কিছু খাবারই পরিবেশন করা উচিত। ইলিশ মাছ তো চলবেই। তবে তা না হলেও নানা পদের ভর্তা, সর্ষে বাটা আর পাতলা ঝোলের তরকারিতে হবে রসনাবিলাস। পাতে শুকনা মরিচ পোড়াটা যেন যোগ করবে অন্য মাত্রা।
সব বাঙালির প্রাণের উৎসবে অংশ নিতে সবাই এদিন এগিয়ে আসুক। ঘরে বাইরে সবখানেই চলুক বর্ষবরণ।
রুহিনা তাসকিন
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, এপ্রিল ১৩, ২০১০
Leave a Reply