সমস্যাঃ আমার মেয়ের নাম মাইয়েশা। তার বয়স চার বছর। দেড় বছর ধরে তার নাক বন্ধ থাকে ও নাকে ঠান্ডা থাকে। সে মুখ হাঁ করে ঘুমায়, ঘুমের মধ্যে নাক ডাকে ও শ্বাসকষ্ট হয়। শিশুবিশেষজ্ঞ দেখালে তিনি নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞকে রেফার করেন। এক বছর আগে নাক-কান-গলার চিকিৎসককে দেখালে তিনি নাকের পেছনে ‘এনলার্জড এডিনয়েড’ রোগ হয়েছে বলে নির্ণয় করেন ও অপারেশন করাতে বলেন। আমরা অপারেশন করাইনি। তিন মাস ধরে মাইয়েশার ডান কানে মাঝেমধ্যে ব্যথা হচ্ছে এবং সে কানে কম শুনছে। একজন ইএনটি সার্জন এবার মাইয়েশাকে দেখে তাড়াতাড়ি এডিনয়েড অপারেশন করাতে ও কানে একটি টিউব বসিয়ে নিতে পরামর্শ দিয়েছেন। আমরা অপারেশন না করালে আমাদের রোগীর কোনো অসুবিধা হবে কি? সুচিকিৎসার পরামর্শ দিলে বাধিত থাকব।
মোমেনা রহমান
মগবাজার, ঢাকা।
পরামর্শঃ আপনার মেয়ে এনলার্জড এডিনয়েড সমস্যায় ভুগছে বলে মনে করা যায়। সেই সঙ্গে তার ডান দিকের মধ্যকর্ণে ইফিউশন বা রসজাতীয় পদার্থ জমেছে বলেও ধরে নেওয়া যায়। এডিনয়েড নাকের পশ্চাদ্ভাগ ও গলার উপরিভাগের সংযোগস্থলে একখণ্ড নরম মাংসপিণ্ডের মতো লিমপয়েড গ্রন্থিবিশেষ। এই গ্রন্থি সাধারণভাবে শিশুর দুই বছর থেকে আকারে বৃদ্ধি পাওয়া আরম্ভ করে, সাত বছর বয়সে সর্বোচ্চ আকার ধারণ করে আর ১৪ বছর বয়সের পর তা ছোট হয়ে যায়। নাকের পেছনে সব শিশুরই এডিনয়েড থাকে অথচ তা ছোট আকারের হওয়ায় তাদের নাক ও কানে সমস্যা হয় না। শুধু যেসব শিশুর এডিনয়েড বেশি বড় আকারের হয়ে নাকের পেছনের বায়ুপথ বন্ধ করে ও যাদের এডিনয়েডের বারবার প্রদাহ হয়, তারা নাক ও কানের কষ্ট এবং বধিরতায় ভোগে। ন্যাজোফেরিংসের একটি এক্স-রে করলে এডিনয়েড বড় হয়েছে এবং কানের একটি ইমিপিডেল টেস্ট করলে মধ্যকর্ণে রস জমেছে বোঝা যায়। এডিনয়েড এনলার্জড হলে তা সার্জারি করে সরিয়ে ফেলতে হয়। তাই দেরি না করে আপনার কন্যার এডিনয়েড অপারেশন এবং এর সঙ্গে মধ্যকর্ণের রস বের করার অপারেশন মাইরিংগোটমি করা দরকার। কানের রস যদি ঘন বা আঠালো হয়, তাহলে গ্রোমেট নামের একটি টিউব বসিয়ে দিতে হবে কানের পর্দায়। এই সার্জারির সময় গলার টনসিল বড় দেখা গেলে তাও অপারেশন করতে হবে।
এনলার্জড এডিনয়েডের সুচিকিৎসা না হলে শিশুর নাক ও কানের প্রদাহ এবং বধিরতা বৃদ্ধি পাবে। এই বধিরতা তীব্র ও অনিরাময়যোগ্য হতে পারে। এ ছাড়া এনলার্জড এডিনয়েড রোগে আক্রান্ত শিশুর মধ্যে স্থূলবুদ্ধিতা বা নির্বোধ ভাব লক্ষণীয় হতে পারে। ক্ষীণ বায়ুপথ, খারাপ অঙ্গসংস্থিতি অথবা বধিরতার জন্য এমন ভাব দেখা দিতে পারে। এডিনয়েডের জন্য অনেক শিশুর ঘুমের মধ্যে দম আটকে যাওয়ার সমস্যা বা ্লিপ এপনিয়া হতে পারে। তাই এডিনয়েড বৃদ্ধি পেলে এসব জটিলতা ও ক্ষতি এড়াতে নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞের পরামর্শমতো দ্রুত অপারেশন করিয়ে নেওয়াই উত্তম।
পরামর্শ দিয়েছেন
অধ্যাপক ডা· আবুল হাসনাত জোয়ারদার
নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মার্চ ০৪, ২০০৯
Leave a Reply