মিহলাদের জরায়ু-মুখ ক্যানসারের প্রতিষেধককে টিকাকরণ কর্মসূচির আওতায় আনার কথা ভাবছে কেন্দ্রীয় সরকার। একটি বহুজাতিক সংস্থার সঙ্গে ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে সরকারের প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রের খবর, ইণ্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)-এর একটি সমীক্ষা রিপোর্ট প্রকাশের পরেই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সম্প্রতি উদয়পুরে এক সেম্মলনে ওই বহুজাতিক সংস্থার কর্তারা দাবি করেন, মেয়েদের শারীরিক মিলন সম্পর্কের অভিজ্ঞতার আগেই এই প্রতিষেধক নেওয়াটা জরুরি। প্রতিষেধকের কোনও বড় ধরনের পাশ্বর্ প্রতিক্রিয়া নেই বলেও দাবি করেছেন তাঁরা।
যদিও চিকিৎসক মহলের একাংশ প্রশ্ন তুলেছেন, এ দেশে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের যে ধরনগুলি জরায়ু মুখের ক্যানসারের কারণ, তার সবগুলিকেই ওই টিকা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে কি?
পৃথিবীতে ক্যানসারে যত মহিলার মৃত্যু হয়, তার এক-তৃতীয়াংশের ক্ষেত্রেই ঘাতক হল জরায়ু মুখের ক্যানসার। এ দেশে প্রতি বছর ১ লক্ষ ৩২ হাজার মহিলা এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। প্রতি দিন অন্তত ২০০ মহিলার মৃত্যু হচ্ছে এই অসুখে। প্রতি ঘণ্টায় মারা যাচ্ছেন অন্তত আট জন। সরকারি সমীক্ষা এই তথ্য জানান দিলেও এমন মারণ রোগ নিয়ে সচেতনতার হার এখনও তলানিতে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য দফতরের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই ইংল্যাণ্ড, অষ্ট্রেলিয়া, কানাডা, ফ্রান্স, গ্রিস, রোমানিয়া, নিউজিল্যাণ্ড, দক্ষিণ কোরিয়া- সহ বিভিন্ন দেশে ওই প্রতিষেধক টিকা সরকারি স্তরে চালু হয়েছে। এ দেশের পরিবেশ বা অভ্যাসের পরিেপ্রক্ষিতে ওই প্রতিষেধক কতটা কার্যকরী হবে, তা নিয়ে আইসিএমআর-এর বিজ্ঞানীরা সমীক্ষা চালাবেন। তার পরেই সরকারি টিকাকরণ কর্মসূচিতে এই প্রতিষেধককে ঠাঁই দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
নয় থেকে ২৬ বছর বয়স পর্যন্ত মহিলাদের ক্ষেত্রে ওই প্রতিষেধক কার্যকরী বলে বহুজাতিক সংস্থার দাবি। এমএসডি ইণ্ডিয়ার ম্যানেজিং ডিরেক্টর নবীন রাও বলেন, “মেয়েদের শারীরিক মিলন অভিজ্ঞতার আগেই প্রতিষেধক দেওয়াটা জরুরি। এর জন্য মাত্র তিনটি টিকা নিতে হবে। এই কারণে শিশু চিকিৎসকদের কাছেও যাচ্ছি আমরা। তাঁরাই বাবা-মায়েদের বিষয়টি নিয়ে সচেতন করতে পারেন।” সংস্থার প্রতিষেধক ইউনিটের অধিকর্তা অঞ্জনা নারায়ণ বলেন, “এ দেশের ৮৫ শতাংশ মহিলাই এই রোগ নির্ণায়ক পরীক্ষার কথা জানেন না বা এর আওতায় আসেননি। তাই রোগটা ধরাই পড়ে তৃতীয় বা চতুর্থ পর্যায়ে।”
ফেডারেশন অব অবেস্টিট্রক অ্যাণ্ড গাইনিকলিজকাল সোসাইটি অব ইিণ্ডয়ার প্রাক্তন সহ সভানেত্রী গীতা গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “জরায়ু মুখের ক্যানসার যে হারে বাড়ছে, তাতে প্রতিষেধকের ভূমিকাটা খুবই জরুরি। সাধারণ মানুষ তো বটেই, এমনকী চিকিৎসক মহলের একটা বড় অংশকেও এ বিষয়ে সচেতন করা দরকার।” শিশু চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষ বলেন, “অন্য অনেক অসুখের ক্ষেত্রেই প্রতিষেধক দেওয়া উচিত কি না, তা নিয়ে তর্ক চলতে পারে। কিন্তু ক্যানসারের মতো মারণ রোগের ক্ষেত্রে প্রতিষেধক থাকলে তা নেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। বিষয়টি কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মসূচিতে জায়গা পেলে তা অত্যন্ত সময়োপযোগী হবে। তবে এর দাম আরও কমানো যায় কি না, প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলিরও সে ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা করা উচিত।”
ক্যানসার চিকিৎসক সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় কিন্তু মনে করেন, এখনই ওই প্রতিষেধক টিকাকে ছিড়য়ে দেওয়ার সময় আসেনি। তাঁর মতে, সব ক্ষেত্রেই যে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস এই ক্যানসারের জন্য দায়ী, তা নয়। পাশাপাশি এ দেশে ওই ভাইরাসের যে ধরনগুলি বেশি সক্রিয়, তাদের ওই প্রতিষেধক কতটা প্রতিরোধ করতে পারছে সেটা নিয়েও আরও পরীক্ষানিরীক্ষা দরকার। তিনি বলেন, “তিড়ঘিড় এই প্রতিষেধককে েপ্রসক্রিপশনে লিখে দেওয়ার সময় এখনও আসেনি। ওই প্রতিষেধকের কার্যকারিতা বুঝতে বহু বছর অপেক্ষা করতে হবে। তা ছাড়া বিদেশে বহু ক্ষেত্রেই এর বিপজ্জনক পাশ্বর্ প্রতিক্রিয়া এমনকী মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে। তাই এ নিয়ে আরও পরীক্ষানিরীক্ষা দরকার।”
জরায়ু মুখের ক্যানসারই একমাত্র ক্যানসার, প্যাপ েস্ময়ার পরীক্ষার মাধ্যমে যার পূর্বাভাস পাওয়া যায়। সুবীরবাবুর বক্তব্য, প্রতিষেধক নিয়ে মাতামাতি না করে সবচেয়ে আগে ওই পরীক্ষার উপযোগিতা আরও বেশি করে প্রচার করা উচিত।
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৯
Leave a Reply