সরকারি নিয়মের দীর্ঘসূত্রিতায় সাধারণ মানুষের ভোগান্তির নজির অজস্র। এ বার তার শিকার হলেন দরিদ্র ক্যানসার রোগীরাও। সময়মতো খরচ করতে না পারায় ফেরত গেল নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের রেডিওথেরাপি বিভাগের জন্য বরাদ্দ সাংসদ তহবিলের ২৫ লক্ষ টাকা। এ নিয়ে স্বাস্থ্য দফতরে তোলপাড় হচ্ছে।
ক্যানসার চিকিৎসাকে আধুনিক করতে অর্থের প্রয়োজন থাকা সেত্ত্বও কেন ওই টাকা খরচ করা গেল না তা নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। স্বাস্থ্য প্রকেল্প সাংসদ তহবিলের টাকা এ ভাবে ফেরত যাওয়া যে খুবই বিরল তা মেনে নিয়েছেন স্বাস্থ্যকতার্রাও। ওই টাকায় ক্যানসার চিকিৎসার একটি যন্ত্র কেনার কথা ছিল, যা থাকলে রশ্মি-চিকিৎসা আরও নির্ভুল এবং নির্দষ্টি হতে পারত বলে চিকিৎসকদের দাবি।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, দু’বছর আগে সাংসদ তপন সেন ২৫ লক্ষ টাকা দেন। তা হাসপাতালের সুপারের অ্যাকাউন্টে ছিল। গয়ংগচ্ছ মনোভাবের জেরে দু’বছরেও টাকা খরচের ব্যবস্থা করতে পারেননি কর্তৃপক্ষ। ফলে তপনবাবু ওই টাকা এনআরএস থেকে সরিয়ে অন্য প্রকেল্প বরাদ্দ করছেন।
স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, “যন্ত্রের জন্য টেণ্ডার ডাকতেই অনেক দেরি হয়ে যায়। তিনটি সংস্থা দরপত্র না পাঠালে পদ্ধতি শুরু করা যায় না। প্রথমবার তিনটি সংস্থাকে পাওয়া যায়নি। বিজ্ঞাপন দিয়ে দ্বিতীয়বার টেণ্ডার ডাকা হয়। কিন্তু একটি সংস্থা কিছু প্রশ্ন তোলায় কাজ পিছিয়ে যায়। প্রেশ্নর সমাধান হওয়ার পরেও ফাইল আটকে থেকেছে স্বাস্থ্যভবনে। ফের নতুন টেণ্ডার ডাকা নিয়ে ভাবনাচিন্তাও শুরু হয়েছিল। তখনই তপনবাবুর চিঠি পৌঁছয় দফতরে।”
সরকারি দীর্ঘসূত্রিতাই যে এর কারণ, তা স্বীকার করে রেডিওথেরাপি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “যা ঘটেছে তা দুর্ভাগ্যজনক। নিয়মের ফাঁসে আটকে এই সমস্যা যে কোনও সময় হতে পারে। সাংসদ আমাদের কথা ভেবেছিলেন, এ জন্য তাঁকে ধন্যবাদ। টাকা খরচ করতে না পারাটা আমাদেরই ব্যর্থতা।”
এনআরএসের সুপার লক্ষ্মীকান্ত ঘোষ জানান, টাকা তাঁরা ফেরত পাঠিয়েছেন। তাঁর কথায়, “নিয়মের ফাঁসে উন্নয়ন আটকে গেল। এটা খুবই দুঃখজনক।” রেডিওথেরাপি বিভাগ দীর্ঘদিন ধরেই একটি সিটি সিমুলেটর যন্ত্র কেনার চেষ্টা করছে, যা থাকলে সুস্থ কোষগুলিকে রক্ষা করে ক্যানসার আক্রান্ত কোষে রিশ্ম-চিকিৎসা সম্ভব।
সাংসদ তপনবাবু অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন, ভবিষ্যতে আবার তহবিল থেকে ওই হাসপাতালকে টাকা দেবেন। তিনি বলেন, “শুধু ২৫ লক্ষ টাকায় তো যন্ত্র কেনা যেত না। কেন্দ্রের কাছ থেকে আরও টাকা ওদের দরকার। সেই টাকা ওরা জোগাড় করলে পরের আর্থিক বছরে আবার টাকা দেব।”
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৯
Leave a Reply