হাইলাইটস
- স্মার্টফোন মানুষের জীবনে এনে দিয়েছে অভিশাপ।
- সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে বাস্তব ভুলে সবাই একন ভার্চুয়াল লাইফে মজেছে।
- জীবন্ত বন্ধুবান্ধব-আত্মীয় স্বজনদের ভুলে অদেখা বন্ধু বান্ধবের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছে বেশি
সবাই যখন জমিয়ে আড্ডা দেয়, হই হুল্লোড় করে তখন একমাত্র অদিতিকে দেখা যায় এক কোনে বসে ফোন নিয়ে বেজায় ব্যস্ত। শুধু ছবি তোলার সময় সকলের কাছে যায়। ছবি শেয়ার করেই ফের একা। কী যে করে ফোন নিয়ে সারাদিন কে জানে? কেউ কিছু বললেই বলবে, “জানিস আমার কত অ্যাডমায়ার আছে? কত ফ্যান ফলোইং? সব সময় লাইম লাইটে থাকতে হয়। ওসব তোরা বুঝবি না”
বান্ধবীরা অনেকেই বিরক্ত হয়। একি রে বাবা বছরে একদিন দেখা হবে তাও যদি সারাক্ষণ ফোনে থাকে তাহলে আর আসা কেন বাপু? ঘরে বসে ফোন ঘাঁটলেই পারো।
না। রি-ইউনিয়ন পার্টি অদিতির মিস করা যাবে না। পার্টিতে কী হচ্ছে, না হচ্ছে, সে কীরকম সাজলো, বান্ধবীদের সঙ্গে কত দামের পানীয় খেল এসব সোশ্যাল মিডিয়ায় কিংবা ভার্চুয়াল ফ্রেন্ডদের না জানালে হয়? তাছাড়া শুধু মুখে বললেই হবে না, ছবি ভিডিও শেয়ার করতে হবে। লাইভ করতে হবে। তবেই না ভক্তরা লাইকের বন্যা ছোটাবে।
অদিতিদের জীবনটা এভাবেই চলছে। বাস্তবের সঙ্গীর বদলে ভার্চুয়াল সঙ্গী বা বন্ধুদের প্রতি এঁদের আসক্তি বেশি। বিশ্বাস বেশি। স্কুল কলেজের বন্ধুরা গল্প করল কিনা তা নিয়ে এঁদের মাথাব্যথা নেই কিন্তু অচেনা লোকের লাইকের সংখ্যা কমে গেল এঁদের সমস্যা দেখা দেয়। মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। অবসাদ কিংবা উদ্বেগে ভুগতে শুরু করেন। এবং এই অতিদিদের সংখ্যা দিন দিন ভয়ানক হারে বাড়ছে।
ফলাফল ভয়ানক
– ‘বিহেভিয়ার অ্যান্ড ইনফরমেশন টেকনলজি’ জার্নালে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা বলছে যে স্মার্ট ফোন মানুষের জীবনকে যেমন সহজ করে দিয়েছে তেমনই জীবনে এনে দিয়েছে নানা জটিলতা। স্কুল, কলেজ, অফিস আদালতের কাজ অনেক সহজ করে দিয়েছে স্মার্টফোন। তৈরি করেছে অনেক ভার্চুয়াল বন্ধু। অখ্যাত লোককে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে বিখ্যাত বাড়িয়েছে। অনেকের উপার্জনের সঙ্গী হয়েছে।
– আর সঙ্গে সঙ্গে স্মার্টফোন মানুষের জীবনে এনে দিয়েছে অভিশাপ। সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে বাস্তব ভুলে সবাই একন ভার্চুয়াল লাইফে মজেছে। জীবন্ত বন্ধুবান্ধব-আত্মীয় স্বজনদের ভুলে অদেখা বন্ধু বান্ধবের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছে বেশি। সেই সময় কাটানোও আবার ভার্চুয়ালি। দেদার টেক্সট আর ছবি লেনদেনেই খুশি সকলে। কেউ যদি বিরক্ত হয়ে ফোন ঘাঁটা বন্ধ করতে বলেন তাহলে তার উপর চলে চোটপাট। এমনকি সম্পর্ক ছিন্নও হয়ে যাওয়াটাও আজকাল স্বাভাবিক হয়ে পড়েছে।
– সমীক্ষা বলছে সোশ্যাল মিডিয়াকেই একদল মানুষ বাস্তব ভাবতে শুরু করে দিয়েছেন। অদেখা বন্ধুরা তাঁকে নিয়ে কী ভাছেন তা নিয়েই তাঁরা মশগুল। কোনও কারণে ভার্চুয়াল বন্ধুরা পাত্তা না দিলে বা যোগাযোগ না করলে অবসাদে চলে যাচ্ছেন লোকে। শুরু হচ্ছে উদ্বেগ। মনে একটাই প্রশ্ন, “তাহলে কি আমায় আর কেউ ভালোবাসেন না?” কল্পনাকে বাস্তব ভেবে বসে মনকে কষ্টা দেওয়া যে কত বড় সমস্যা বর্তমানে স্মার্টফোন নেশাড়ুরা বুঝতে পারছেন না। এতে সামাজিক অবক্ষয়ও হচ্ছে ব্যাপাক হারে। ভার্চুয়াল বন্ধুদের তোয়াজ করতে গিয়ে বাস্তবের বন্ধুদের এড়িয়ে যাওয়া আদতে মারাত্মক ফল হতে পারে।
বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটান
– স্মার্ট ফোনের ব্যবহারের ফলে যে হারে অবসাদ এবং উদ্বেগ বাড়ছে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে একাকীত্ব। আবার একাকীত্বের কারণেও অবসাদ ও উদ্বেগ বৃদ্ধি পারছে। এর একমাত্র ওষুধ কল্পনার দুনিয়া থেকে বেড়িয়ে আসা। এর জন্য মনোবিদের সাহায্য নেওয়া যেতেই পারে।
– পাশাপাশি বন্ধু এবং আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গেও যোগাযোগ বাড়ান। তাঁদের সঙ্গে সামনা সামনি বা ভিডিও কলে কথা বলুন।
– সরাসরি কথা বললে মন যেমন ভালো থাকে তেমন ব্যবহারের পরিবর্তনও হয়।
– সামনা সামনি কথা বললে মানুষ অনেক বেশি ভদ্র আচরণ করেন। ক্রমাগত স্মার্ট ফোন ব্যবহারের ফলে যে মেজাজ খিচখিচে হয়ে যায় তা সরাসরি কথা বললে কমে যায়।
– সবচেয়ে বড় কথা বন্ধুর সঙ্গে প্রাণ খুলে কথা বলা যায়। কোনও মেকি সাজ পোশাক, হাসি, কান্নার প্রয়োজন পড়ে না।
– ছোটোবেলার কথা, মজার মজার স্মৃতিচারণ, এমনকী পর নিন্দা পর চর্চাও করা যায় প্রাণ খুলে।
তাই কল্পনাকে ছাড়ুন। বাস্তবকে আঁকড়ে ধরুন। মনে রাখবেন রাতে বাড়িতে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে ভার্চুয়াল ফ্রেন্ডরা অনলাইনে থেকে অন্য ভার্চুয়াল ফ্রেন্ডের সঙ্গে রোম্যান্স করবেন। আপনার দিকে কেউ ফিরেও তাকাবে না। এই যে বন্ধুদের আপনি কল্পনার জগতের আকর্ষণে এড়িয়ে যাচ্ছেন তারাই আপনার বাড়িতে দৌড়ে যাবে। রাত জেগে আপনার পাশে থাকবে। এবার পছন্দটা আপনার।
Lifestyle News in Bengali, লাইফস্টাইল খবর, Health Tips, Fashion Trends and Tips in Bangla
2021-08-18 23:13:06
Source link
Leave a Reply