বন্ধ্যাকরণ করার পরেও সন্তানসম্ভবা হয়ে পড়লেন এক মহিলা। আর এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ ওই দিনমজুর দম্পতি স্বাস্থ্য দফতরের কাছে সমস্ত ঘটনা জানিয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
তাঁদের অভিযোগ, “একজন বা দু’জন চিকিৎসক খুব কম সময়ের মধ্যে প্রায় ৪০-৫০ জনের অস্ত্রোপচার করেন। তাই চিকিৎসকদের অসতর্কতার জন্যই সাধারণ মানুষকে এমন বিপদে পড়তে হয়।”
রঘুনাথগঞ্জ-১ ব্লকের নিস্তা গ্রামের বাসিন্দা কাকলি সরকারের স্বামী সুবোধবাবু বলেন, “সবজির আড়তে কাজ করে কোনওরকমে দিন গুজরান হয়। তিন ছেলেময়েে রয়েছে। তাই ২০০৭ সালে জঙ্গিপুর হাসপাতালে স্ত্রীর বন্ধ্যাকরণ করানো হয়। স্ত্রী সাতদিন হাসপাতালে থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে আসে।” তাঁর কথায়, “তারপর থেকে কোনও অসুবিধা না হলেও গত মাসে চিকিৎসককে দিয়ে পরীক্ষা করাতে গিয়ে স্ত্রী আবার সন্তানসম্ভবা হয়েছেন বলে জানতে পারি। এরপরই অসহায় হয়ে পেড়ছি। চিকিৎসকদের ভুলের জন্য এমন বিপদে পড়তে হবে ভাবতে পারিনি।”
এই ঘটনার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার অসীম হালদার। তিনি বলেন, “পরীক্ষায় ধরা পড়ার পরই ওই দম্পতি ঘটনাটি আমাদের জানায়। একশোর মধ্যে দুই থেকে তিনটি ক্ষেত্রে বন্ধ্যাকরণের অস্ত্রপচার করার পরও এমন ঘটনা ঘটে। তবে চিকিৎসকের ভুল বা গাফিলতির জন্য এমন ঘটনা ঘটেছে তা বলা যায় না।” তিনি বলেন, “এ সমস্ত ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য দফতর দািয়ত্ব নিয়ে পুনরায় বন্ধ্যাত্বকরণের ব্যবস্থা করে। এ কথা জানিয়ে ওই দম্পতিকে হাসপাতালে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। ওই মহিলার গর্ভপাত করিয়ে বন্ধ্যাকরণের জন্য অস্ত্রপচার করার ব্যবস্থা করে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ওই দম্পতি তাতে রাজি হননি।”
সুবোধবাবু বলেন, “একটি গর্ভস্থ শিশুকে নষ্ট করতে খারাপ লাগছিল। তাই গর্ভপাত করাতে রাজি হইনি। তা ছাড়া চার মাস পরে গর্ভপাত করার ক্ষেত্রে ঝুকিও আছে।” কিন্তু হাসপাতালের সুপার চিকিৎসকদের ভুল বা গাফিলতি না হওয়ার যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তা মানতে রাজি হননি সুবোধবাবু। তাঁর কথায়, “অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় একজন বা দু’জন চিকিৎসক দু’ঘন্টার মধ্যে বহু মহিলার অস্ত্রপচার করছেন। কিন্তু অস্ত্রপচারের পর মহিলাদের কী পরিস্থিতিতে থাকতে হয় তা বর্ণনা করা যায় না। চিকিৎসকদের অসতর্কতার জন্যই এমন অবস্থা হয়।” তিনি বলেন, “এ ভাবে অেস্ত্রাপচার বন্ধ করে চিকিৎসকরা যাতে দায়েত্ব সহকারে নির্দষ্টি সংখ্যার অেস্ত্রাপচার করেন সেই দাবি জানিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হব।” নিস্তা গ্রামের হাতুড়ে চিকিৎসক ভরত মণ্ডল বলেন, “গ্রামের বেশিরভাগ পরিবারই নিজের ইচ্ছেতে বন্ধ্যাকরণ করিয়ে নিয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তা সফলও হয়েছে। কিন্তু এই একটি ক্ষেত্রে বন্ধ্যাকরণ ব্যর্থ হওয়ায় গ্রামে কিছুটা হলেও এর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।”
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৯
Leave a Reply