দেশের এই অংশেই রয়েছে এমন সব আশ্চর্য হ্রদ যেগুলি অন্তত একবার চোখের দেখা না দেখলে পর্যটকরা ঠকে যাবেন। শুধুমাত্র এই হ্রদগুলি দেখতেই বিশ্বের বহু পর্যটক ভিড় জমান উত্তর-পূর্ব ভারতের এই রাজ্যগুলিতে।
চানডুবি বিল (অসম)
চানডুবি বিল অসমের কামরূপ জেলার রাভা হাচং স্বায়ত্তশাসিত পরিষদ এলাকায় অবস্থিত একটি প্রাকৃতিক হ্রদ। গুয়াহাটি থেকে এই স্থানের দূরত্ব প্রায় ৬৪। হ্রদ বা বিলটি অবস্থিত অসম ও মেঘালয়ের গারো পাহাড়ের পাদদেশে। চানডুবি বিলের নামের পিছনে রয়েছে একটি প্রচলিত বিশ্বাস। লোকে বলেন যে প্রাচীনকালে চাঁদ সদাগরের ধনসম্পত্তি তথা সোনায় ভরা নৌকা ডুবে নাকি এই বিলের সৃষ্টি হয়। চাঁদ সদাগরের ডিঙি ডুবে এই বিল হওয়ার জন্যই এর নাম ‘চান্দডুবি’। যদিও প্রকৃত তথ্য হল এই যে ১৮৯৭ সালের অসমের ভয়াবহ ভূমিকম্পে ফলে বিলের সৃষ্টি হয়। ভূমিকম্পে এই স্থানের ভূমি বসে গিয়েছিল। সেই থেকেই হ্রদের সৃষ্টি। হ্রদের চারপাশে রয়েছে গভীর অরণ্য, চা বাগান এবং ছোটো ছোটো গ্রাম। প্রতিবছর বহু মানুষে এখানে বনভোজনের উদ্দেশ্যে আসেন। ছোটো নৌকা চড়ে হ্রদে ঘুরে বেড়ানোর ব্যবস্থাও রয়েছে এখানে। প্রতিবছর জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে চানডুবি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এই উৎসবে নাচ গান এবং খাদ্য পরিবেশন করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সেই সময়ই এখানে ভিড় বেশি হয়।
লোকটাক হ্রদ (মণিপুর)
মণিপুর রাজ্যের মিষ্টি জলের হ্রদ এই লোকটাক। এই হ্রদের মধ্যে রয়েছে একটি দ্বীপ। দ্বীপের নাম সেন্দ্রা। এটি মণিপুরের বিখ্যাত এবং জনপ্রিয় পর্যটনক্ষেত্র। হানিমুন কাপলদের ভিড় এখানে প্রায় সারা বছরই থাকে। সাধারণ পর্যটকরা এখানে ভিড় করে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে। হ্রদের আয়তন সর্বোচ্চ ৫০০ বর্গকিলোমিটার। বর্ষায় হ্রদের আকার বৃদ্ধি পায়। মণিপুরের মোইরং এলাকায় অবস্থিত এই হ্রদ বিখ্যাত তার ভাসমান দ্বীপের কারণে। প্রায় ৪০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে অবস্থান করে এই ভাসমান দ্বীপটি। দ্বীপে রয়েছে বিশ্বের একমাত্র ভাসমান জাতীয় অভয়ারণ্য কেইবুল লামজাও ল্যাশনাল পার্ক। এই অভয়ারণ্যে রয়েছে বিখ্যাত মণিপুরী সাংগাই হরিণ। এটি বিলুপ্ত প্রজাতির হরিণ।
উমিয়াম হ্রদ (মেঘালয়)
উমিয়াম হ্রদের আরেক নাম বরাপানি হ্রদ। এটি মেঘালয়ের রাজধানী শিলং থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত এক জলাশয়। ১৯৬০-র দশকে উমিয়াম নদীতে বাঁধ দিয়ে এই হ্রদের সৃষ্টি হয়। মেঘালয়ের এই উলিয়াম হ্রদ এক অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটনস্থল। পর্যটকরা কায়াকিং, বাটার সাইক্লিং, স্কুটিং, নৌকা চালানো ইত্যাদির জন্য এখানে ভিড় করেন। এই হ্রদের চারধারও পাহাড় দিয়ে ঘেরা।
পালক হ্রদ (মিজোরাম)
পালক হ্রদ নাকি আসলে মিজোরামের হৃদয়। পর্যটকদের কাছে পালক হ্রদ নামে পরিচিলত হলেও স্থানীয়রা একে ডাকেন পালক দিল বলে। এটি মিজোরামের বৃহত্তম হ্রদ। হ্রদের পাশের রয়েছে পালক অভয়ারণ্য। এই অরণ্যে ভারত এবং মায়ানমারের মিশ্রিত উদ্ভিদ এবং প্রাণীর খোঁজ পাওয়া যায়। প্রচুর বিরল প্রজাতির গাছপালার খোঁজ মেলে এই অরণ্যে। এছাড়াও মিলবে বহু পরিযায়ী প্রাণী। পালক হ্রদে রয়েছে অনন্য প্রজাতির নানা মাছ, চিংড়ি, শামুক, কাঁকড়া, কচ্ছপ ইত্যাদি। অরণ্য সদাই মুখরিত থাকে প্রায় সত্তর প্রকার প্রজাতির পাখির কলরবে।
সঙ্গেতসর হ্রদ (অরুণাচল প্রদেশ)
অরুণাচল প্রদেশের তাওয়াং জেলার হ্রদ সঙ্গেতরসের আরেক নাম মাধুরী হ্রদ। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৫,২০০ ফিট উপরে অবস্থিত এই হ্রদটি থেকে ভারত-চিন সীমানা খুব কাছেই। এই হ্রদের পাশে দাঁড়িয়ে চারপাশ দেখলে মুগ্ধ হয়ে যান সকলে। ভূমিকম্পের ফলে পাথর পড়ে এই প্রাকৃতিক হ্রদের সৃষ্টি হয়। বলিউড ছবি কয়লা-র শ্যুটিং হয়েছিল এখানে। হ্রদের ধারেই নাচ করেছিলেন অভিনেত্রী মাধুরী দিক্ষীত। সেই থেকেই এই হ্রদের সাবেকি নাম পরিবর্তিত হয়ে হয়ে যায় মাধুরী হ্রদ। এই নামেই এটি এখন বেশি জনপ্রিয়। তবে এসব স্থানে ঘুরতে গেলে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অনুমতি লাগে।
Lifestyle News in Bengali, লাইফস্টাইল খবর, Health Tips, Fashion Trends and Tips in Bangla
2021-08-16 18:53:45
Source link
Leave a Reply