হাইলাইটস
- ঋষভের নাম ঘোষণা হতেই সভাঘরে তখন করতালির বৃষ্টি। লাল রঙের কার্পেট পেরিয়ে ধীরে ধীরে স্টেজে উঠল ঋষভ।
- জীবনের অন্যতম সাফল্যের দিন। সকলে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন আর এক পা এক পা করে ঋষভ এগোচ্ছে মঞ্চের দিকে।
- সম্মান পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একটি ছোটো বক্তৃতা দিতে হবে তাঁকে।
ঋষভ একা নয়। সামাজিক উদ্বেগ বা গ্লসোফোবিয়ার শিকার বহু মানুষ হয়ে থাকেন। এমনিতে তাঁরা স্বাভাবিক আত্মবিশ্বাসী বুদ্ধিমান হন। কিন্তু যখনই জনসভায় বক্তব্য রাখতে যেতে হয় তখনই তাঁদের নানা সমস্যা শুরু হয়ে যায়। ক্রমাগত বাড়তে থাকে উদ্বেগ।
এক্ষেত্রে ভিড় বা সামাজিক স্থানে উপস্থিত হওয়ার পরই ব্যক্তির শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা মস্তিষ্কের একটি নির্দিষ্ট অংশকে অ্যাড্রেনালিন নিঃসরণ করে রক্ত মিশে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। এর থেকেই মনে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। ফলে কথা আটকে যায় বা নিজের বক্তব্য পেশ করতে বিব্রত হতে হয়।
সামাজিক উদ্বেগ বা গ্লসোফোবিয়া কাটাতে গেলে বা নিয়ন্ত্রণে আনতে আগে নিজেকে আত্মবিশ্বাসী হতে হবে। আর মেনে চলতে হবে কয়েকটি নিয়ম। এই নিয়মগুলি ধাপে ধাপে মানলে এই সামান্য মানসিক রোগ সহজের নির্মূল হতে পারে।
শারীরিক এবং মানসিকভাবে নিজেকে তৈরি করা-বিশেষজ্ঞদের মতে যে কোনও নতুন কাজ করার আগে উদ্বেগ হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু তা মাত্রাতিরিক্ত হলেই সমস্যা। একজনের উদ্বেগ আরেকজনের উপর ছড়ায়। কিন্তু শরীর বা মন যদি আত্মবিশ্বাসী থাকে তাহলে উদ্বেগকে সহজেই জয় করা যায়। সবাই পারলে আমিও পারব এমন মনোভাব থাকা একান্ত প্রয়োজন। যে কোনও কাজের আগে ভালো করে হোমওয়ার্ক করে নিন। দেখবেন আসল জায়গায় কোনও ভুল হবে না। এমনকী হালকা শরীরচর্চা করে নিলেও উদ্বেগ কেটে যায়। হালকা শরীর চর্চায় মস্তিষ্কে অক্সিজেন পৌঁছোয়। যতই মানসিক শক্তি বাড়াতে হালকা শরীরচর্চা করতে থাকুন নিয়মিত।
এছাড়াও কোনও সামাজিক ক্ষেত্রে বা ভিড়ের মধ্যে গেলে উদ্বেগ শুরু হলে সেখানে দাঁড়িয়ে টুকটাক শরীর চর্চা করে নিতে পারেন। যেমন-
গলা এবং ঘাড় ঘোরানো- শরীরের পেশীকে স্বাভাবিক হালকা করতে গলা এবং ঘাড় ক্লক এবং অ্যান্টিক্লক ভাবে ঘুরিয়ে নিন। এতে পেশী স্বাভাবিক হওয়ার পাশাপাশি স্ট্রেস এবং উদ্বেগ কমে। আর্ম স্ট্রেচ- মাঝে মাঝে হাত দুটি দুপাশে টেনে নিয়ে পেশী শিথিল করে নিন। এতে উদ্বেগ কমে। কোমর ঘোরানো- অতিরিক্ত উদ্বেগ হলে রেস্ট রুমে গিয়ে ওয়েস্ট ট্যুইস্ট মানে কোমর ঘুরিয়ে নিন। হাতদুটি কোমরে থাকবে। ঘড়ির কাঁটার দিকে এবং ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে কোমর ঘুরিয়ে নিলে পেশী এবং মস্তিষ্ক দুই শিথিল হয়।
শরীর আর্দ্র রাখুন- জল পান করুন। শরীরকে আর্দ্র রাখুন। যাতে বক্তৃতা দেওয়ার সময় গলা শুকিয়ে সমস্যা না হয়। এমনকি বক্তব্য রাখার সময় নিজের জন্য জলের ব্যবস্থা রেখে দিন। তবে আবার এতটাও জল খাবেন না যাতে ঘন ঘন বাথরুম যেতে হয়। বক্তব্য রাখার আগে কফি, চা বা অন্য কোনও নরম বা কঠিন পানীয় খাবেন না। মেডিটেশন- শরীর মনকে সতেজ রাখতে, আত্মবিশ্বাস বজায় রাখতে নিয়মিত মেডিটেশন প্রয়োজন। এটিকে অভ্যাসে পরিণত করুন। যে কোনও কাজে সফল হওয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চাবিকাঠি এটি।
লক্ষ্য নিশ্চিত করুন- বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জনসভা বা অনেক লোকের মাঝে বক্তব্য রাখার সময় দেখা যায় বক্তা একাধিক বিষয় নিয়ে কথা বলে চলেছেন। হোম ওয়ার্ক এতটাই করেছেন যে এক প্রসঙ্গ থেকে চলে যাচ্ছেন আরেক প্রসঙ্গে। এর ফলে শ্রোতাদের মধ্যে বিরক্তি শুরু হয়। আর শ্রোতাদের অমনোযোগিতা দেখে বক্তাও খানিকটা ঘাবড়ে যান। তাই বক্তব্য রাখার আগে নির্দিষ্ট বিষয় লক্ষ্য স্থির রাখুন। বক্তব্য রাখার সময় নিজের চেহারা বা সাজপোশাক নিয়ে বেশি ভাববেন না। বক্তব্যের বিষয় নিয়েই চিন্তা করুন। মনে করুন জনসভায় যতজন আছেন তাঁদের মধ্যে আপনিই সেরা।
নেতি থেকে ইতিবাচক-বক্তব্য রাখার আগেই পারব না, হবে না, সমস্যা হবে এত সব ভাবতে শুরু করে দেবেন না। বক্তব্য রাখতে গিয়ে যদি ভুল হয়, যদি সবাই হাসে, যদি পিছনে সবাই সমালোচনা করে এসব ভাবতে বসলে আত্মবিশ্বাস আরও হারিয়ে ফেলবেন। অফিসে প্রেজেন্টেশন দেওয়ার সময় প্রতিদ্বন্দ্বীদের কথা বেশি ভাববেন না বা কনফারেন্স রুমে তাঁদের দিকে তাকাবেন না। প্রতিদ্বন্দ্বী আপনার মনোবল ভাঙার চেষ্টা করবে। সজাগ থাকুন। তাঁকে পাত্তা দেওয়ার দরকার নেই।
বিষয় সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রাখুন-কী বিষয় নিয়ে বক্তব্য রাখবেন সেটি সম্পর্কে ভালোভাবে পড়াশোনা করে নেবেন। বক্তব্য রাখার আগে ভালোভাবে প্র্যাকটিস করে নিন। ছোটোখাটো খুঁটিনাটি বিষয়ও এড়িয়ে যাবেন না। তা বলে কবিতা মুখস্থের মতো সবকিছু মুখস্ত করবেন না। বক্তব্য বলার সময় তা যেন সাবলীল হয়। মনে রাখবেন যত প্র্যাকটিস করবেন ততই পারফেকশন আসবে।
নিজের কাজে সৎ থাকুন-যে বিষয় নিয়ে বক্তব্য রাখবেন তা সম্পর্কে সঠিক তথ্যই দেবেন। বেশি স্মার্ট হলে গিয়ে ভুল তথ্য দিয়ে বসলে কিন্তু সমস্ত পরিশ্রম নষ্ট হয়ে যাবে। আত্মবিশ্বাসী থাকুন। লোকে কে কী বলবে তা ভাববেন না। মনে রাখবেন আপনি একা নন, যতজন বক্তব্য পেশ করতে এসেছেন সকলেই নার্ভাস আছেন। কিন্তু কাউকে দেখে তা বোঝা যাচ্ছে না। সবাই স্বাভাবিক আচরণ করছেন। নিজের মধ্যেও এই আত্মবিশ্বাস তৈরি করুন।
বক্তব্য পেশের পর-বক্তব্য পেশের পর তা একবারে অসাধারণ হতে পারে আবার তাতে ভুল ত্রুটিও থাকতে পারে। প্রশংসা পেলে সেটিকে ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ নিন। আর ভুল ত্রটি থাকলে তা শুধরে নিন যাতে পরের বার বক্তব্য নিখুঁত থাকে। বক্তব্য পেশ খারাপ হলে হতাশ না হয়ে ফের তৈরি হন। তবে হ্যাঁ, আত্মবিশ্বাস ধরে রাখতে পারলে হতাশা আসবে না। সমস্যা যদি মাত্রা ছাড়িয়ে যায় তাহলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
Health and Fitness Tips in Bengali শরীর-গতিক, Yoga and Exercise Tips in Bangla
2021-08-16 18:16:06
Source link
Leave a Reply