হাইলাইটস
- প্রচণ্ড গরম থেকে স্বস্তি পেতে মনসুনের অপেক্ষা থাকেই।
- কিন্তু নিজের সঙ্গে নানান স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে আসে বর্ষাকাল।
- এ সময় আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে সর্দি, কাশি, জ্বর তো হয়ই, পাশাপাশি বেড়ে যায় মশার উপদ্রব।
- ফলে ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বাড়তে শুরু করে।
ন্যাশনাল সেন্টার অফ বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশানে প্রকাশিত একটি রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে যে, ডেঙ্গি এবং করোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রে একই ধরনের লক্ষণ দেখা গিয়েছে। এমনকি রোগ নির্ণয়ের জন্য ল্যাবরেটরিতে উভয় রোগের স্যাম্পেল পরীক্ষা করা হলেও একই ফলাফল উঠে এসেছে। ডেঙ্গি ও করোনার কো-ইনফেকশানের ঘটনা এশিয়ার বিভিন্ন ডেঙ্গি-মহামারীতে স্ত্রস্ত দেশগুলিতে চ্যালেঞ্জের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়ার বালির হাসপাতালে করোনা ও ডেঙ্গির কো-ইনফেকশানের তিনটি ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। সেখানে একই ব্যক্তির শরীরে এক সঙ্গে ডেঙ্গি ও কোভিড-১৯ ধরা পড়েছে।
ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গি ও কোভিড-১৯-এর লক্ষণ পরস্পরকে আচ্ছাদিত করে রাখে, যার ফলে রোগ নির্ণয় করা কঠিন হয়ে পড়ছে। এই প্রবণতার ফলে চিকিৎসার ক্ষেত্রেও সমস্যা দেখা যাচ্ছে।
তাই করোনা ও কোনও মশাবাহিত রোগ যাতে একই সঙ্গে কাউকে আক্রমণ করতে না-পারে, তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
কী ভাবে কো-ইনফেকশান প্রতিরোধ করে সঠিক রোগ নির্ণয় করা যাবে?
বিশেষজ্ঞ এবং চিকিৎসকদের মতে, প্রতিবছর মনসুনের সময় ম্যালেরিয়া, লেপ্টোস্পাইরোসিস, জন্ডিসের মতো রোগের বৃদ্ধি নজরে পড়ে। তবে সমস্যা হল, এই রোগগুলির লক্ষণ একই ধরনের, যেমন- গাঁটে ব্যথা, ডাইরিয়া, বমি, মাথা ব্যথা, জ্বর। যদিও স্বাদ ও গন্ধ হারিয়ে যাওয়া, গলা ব্যথা, কাশির মতো লক্ষণ করোনা নির্ণয় করতে সাহায্য করে।
এখন এই কো-ইনফেকশান প্রতিরোধ করার ওপরই জোর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এর ফলে কোভিড রোগীদের পৃথকীকরণ করা যাবে, যা তাঁদের সঠিক চিকিৎসা সুনিশ্চিত করবে। এমন করা গেলে স্বাভাবিক ভাবেই ভুল চিকিৎসার কারণে করোনা রোগীদের সম্ভাব্য মৃত্যুর হার কমানো যাবে বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।
এ ক্ষেত্রে আবহাওয়া পরিবর্তন জনিত রোগের বাড়বাড়ন্ত দেখা দিলে প্রতিটি রোগের লক্ষণকে পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে যাচাই করে দেখতে হবে। যেমন- হঠাৎ বেশি জ্বর, গা গোলানো, বমি, শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা, প্লেটলেট কাউন্ট কমে যাওয়া, র্যাশ ইত্যাদি ডেঙ্গির সাধারণ লক্ষণ। আবার চিকেনগুনিয়া হলে চোখের মধ্যে ব্যথা, ঠান্ডা লাগা, অ্যাকিউট জয়েন্ট পেনের মতো লক্ষণ দেখা দিতে পারে। অন্য দিকে লেপ্টোস্পাইরোসিসে আক্রান্ত হলে কিডনির সমস্যা দেখা দিতে পারে, জন্ডিস হতে পারে, এমনকি চোখ লাল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
সম্প্রতি ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া ও লেপ্টোস্পাইরোসিসে আক্রান্ত রোগীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় চিকিৎসকরা সতর্ক করে জানিয়েছেন যে,
১. দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে জ্বর না-কমলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
২. কারও ঠান্ডা লাগা, মাইলেজিয়া, র্যাশ, মাথাব্যথার মতো লক্ষণ থাকলে আরও সাবধান হন। ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গির কারণে এই লক্ষণগুলি দেখা দিতে পারে। বাচ্চা এবং বয়স্কদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা গেলে বিলম্ব না-করে চিকিৎসা করানো উচিত।
৩. অন্য দিকে বর্ষাকালে বমি ও লুস স্টুলের সঙ্গে জ্বর হলে ও চোখ হলুদ হয়ে গেলে তা জন্ডিস, অ্যাকিউট গ্যাস্ট্রোএন্ট্রাইটিসের লক্ষণ হতে পারে।
৪. যে কোনও অসুখের জন্য চিকিৎকের পরামর্শ মতো ওষুধ খাওয়া উচিত। নিজেই নিজের চিকিৎসা করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
মনসুনে সংক্রমণ থেকে বাঁচার উপায়
সংক্রমণ থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখার কিছু উপায় জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। এগুলি মেনে চললে সুরক্ষিত থাকা যাবে—
১. বাড়ি ও তার আশপাশের এলাকা মশা মুক্ত রাখতে হবে।
২. ফোটানো জল পান ও বাড়িতে তৈরি খাবার খাওয়ার দিকে জোর দিতে হবে। বর্ষাকালে বাইরের খাবার না-খাওয়াই শ্রেয়।
৩. বাড়ির ভেন্টিলেশন বা বায়ু চলাচলের সুষ্ঠু ব্যবস্থা থাকতে হবে।
৪. মশা মারার ওষুধ ব্যবহার করতে হবে।
৫. বাইরে বেরোতে হলে ফুল-স্লিভ জামাকাপড় পরার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
৬. কিছু খাবার আগে ভালো ভাবে হাত ধুতে হবে এবং হাত না-ধুয়ে ভুলেও নাক ও মুখে ধরবেন না।
গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ইমফেকশান প্রতিরোধের পন্থা
চিকিৎসকদের মতে—
১. গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সংক্রমণ থেকে বাঁচতে ভালো ভাবে হাত ধোয়ার অভ্যাস করতে হবে।
২. ফোটানো জল পান করুন। বাসি, কাঁচা খাবার খেতে বারণ করছেন চিকিৎসকরা।
৩. বাইরের খাবারে সংক্রমণের অধিক সম্ভাবনা থাকে। তাই বাইরের খাবার ও জুস পান করা থেকে বিরত থাকতে হবে। ফ্রিজে রাখা খাবার গরম করে খেতে হবে এবং কোনও খাবার ঢাকা দেওয়া না-থাকলে তা না-খাওয়াই ভালো।
৪. আবার গ্যাস্ট্রোএন্ট্রাইটিস ও জন্ডিস প্রতিরোধের জন্য আধ কাঁচা খাবার খাবেন না।
৫. কোথাও জল জমে থাকলে, সেই স্থান দিয়ে হেঁটে যাবেন না।
৬. পাশাপাশি প্রতিষেধক গ্রহণের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।
৭. যে বস্তু জীবজন্তুর মূত্র দ্বারা সংক্রমিত হতে পারে তা ছোবেন না।
৮. লেপ্টোস্পাইরোসিসের কারণ হিসেবে ইঁদূর দূর করার ব্যবস্থা করুন।
৯. আবর্জনা ফেলার জন্য সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করুন।
Health and Fitness Tips in Bengali শরীর-গতিক, Yoga and Exercise Tips in Bangla
2021-08-13 15:21:53
Source link
Leave a Reply