সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব টাইপ-২ ডায়াবেটিসের রোগীকে আঁশসমৃদ্ধ খাবার খেতে বলা হয়েছিল, তাদের মধ্যে যারা পরামর্শমতো গোটা-শস্য খাবার না খেয়ে বিন্স্, শিমের বিচি, বাদাম-এসব খাবার খেয়েছে, তারা রক্তশর্করা মানকে তুলনামূলকভাবে আরও ভালো নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে।
শিম ও বাদাম হলো এমন সব খাবার, যা খেলে রক্তশর্করার মান সহনীয় মাত্রায় বাড়ে। বিজ্ঞানীরা এসব খাবারকে বলেন ‘লো-গ্লাইসিমিক ইনডেক্স ফুড’। ছয় মাস ধরে পরিচালিত এ নতুন গবেষণাটি লো-গ্লাইসিমিক ইনডেক্স রয়েছে এমন সব খাদ্যের প্রভাব যাচাই করার জন্য বৃহত্তম ও দীর্ঘতম গবেষণাগুলোর অন্যতম, বলেন গবেষকেরা। লো-গ্লাইসিমিক ডায়েট যারা অনুসরণ করেছিল ছয় মাস, তাদের রক্তে কোলেস্টেরল মানে এসেছিল তাৎপর্যপূর্ণ উন্নতি, বিশেষ করে বৃদ্ধি পেয়েছিল হিতকর এইচডিএল কোলেস্টেরল। এর মান বেশি হলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।
টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউট্রিশনাল সায়েন্সের অধ্যাপক এবং এই গবেষণার মুখ্য গবেষক ডা· ডেভিড জে এ জেনকিনস বলেন, এ ইস্যুটি ইদানীং গুরুত্বপূর্ণ। কারণ যারা ডায়াবেটিক তাদের জন্য দুই রকম সমস্যা। তারা যদি পুরুষ হয়, তাহলে তাদের হৃদরোগের ঝুঁকি দ্বিগুণ, আর নারী হলে ঝুঁকি বাড়ে চার গুণ। তাই, যদি হৃদরোগকে আঘাত করা যায়, যে রোগের প্রবণতা তাদের বেশি, তাহলে সুফল আসবে অনেক বেশি।
ওষুধ শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো তাদের উৎপন্ন পণ্য দিয়ে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে হৃদরোগ হ্রাস করার ব্যাপারে তেমন প্রত্যাশিত সুফল দেখাতে পারেনি।
এ গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে জার্নাল অব আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের ইস্যুতে। টাইপ-২ ডায়াবেটিক এ রকম ২১০ রোগীকে ইতস্তত দেওয়া হলো লো-গ্লাইসিমিক ডায়েট অথবা শস্যসমৃদ্ধ, আঁশসমৃদ্ধ পথ্য। শস্যসমৃদ্ধ ও আঁশসমৃদ্ধ পথ্যে জোর দেওয়া হলো ব্রাউন ফুডসের ওপর। যেমন-গোটা-শস্যের রুটি, আটার রুটি এবং প্রাতরাশে খাদ্যশস্য, লাল চালের ভাত, খোসাসহ আলুর ওপর।
লো গ্লাইসিমিক ডায়েটে জোর দেওয়া হলো শিম, মটরশুঁটি, ডাল, ওটমিল, ওট ও তুষ খাদ্য, ছাতু। দুই ধরনের খাদ্যে কম রয়েছে সম্পৃক্ত চর্বি ও ট্রান্স ফ্যাট। দুটো দলকেই ময়দার রুটি খুব কম খেতে বলা হলো। তাদের বলা হলো, সবজির পাঁচটি সার্ভিং ও ফলের তিনটি সার্ভিং প্রতিদিন গ্রহণ করতে।
যারা লো-গ্লাইসিমিক ডায়েট নিয়েছিল, তাদের হিমোগ্লোবিন এআইসি মান সামান্য মাত্র কমেছিল, গড়ে ০·৫ শতাংশ (সাম্প্রতিক কয়েক মাসের গড় রক্তগ্লুকোজ মান)। তবে তাৎপর্যপূর্ণ উন্নতি হয়েছিল এইচডিএল মানে, গড়ে বেড়েছিল ১·৭ মিলিগ্রাম প্রতি এক ডেসিলিটার রক্তে।
যারা শস্যসমৃদ্ধ খাদ্য খেয়েছিল, তাদের মধ্যে হিমোগ্লোবিন এআইসি মানে একই রকম অবনতি এবং এইচডিএল মানেও সামান্য অবনতি দেখা গেল।
টাইপ-২ ডায়াবেটিসের রোগীদের নিয়ে যে পথ্যবিদেরা কাজ করেছিলেন আগে, তাঁরা বলেন, এই রিপোর্টে লো-গ্লাইসিমিক খাদ্যের সুফল সম্পর্কে এত স্পষ্ট ফলাফল আগের গবেষণাগুলোয় দেখা যায়নি। বোস্টনে জসালিন ডায়াবেটিস সেন্টারে পুষ্টি ও ডায়াবেটিস এডুকেটর এম্মি সুল বলেন, ‘আমরা লোকজনকে অনেক দিন ধরে বলে আসছি গোটা-শস্য খেতে।’ এ গবেষণায় বোঝা গেল, কেবল গোটা-শস্য খাওয়াই যথেষ্ট নয়। এই লো-গ্লাইসিমিক শ্বেতসারগুলো করে আরও ভালো কাজ। তবে তিনি বলেন, ‘এই পথ্য অনুসরণ একটু কঠিনও বটে। কারণ খাদ্যের গ্লাইসিমিক সূচক, কীভাবে এ খাদ্য তৈরি করা হলো এবং পরিবেশন করা হলো এর ওপর ভিত্তি করেও কিছুটা পরিবর্তিত হয়।
তাই লোকজন বারবারই আমাদের বলছে, ডায়াবেটিস ব্যবস্থাপনার সবচেয়ে কঠিন দিক হলো ডায়েট।’ তবে ব্যাপারটা সহজ হয়ে আসবে অচিরেই।
অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরীর কলম থেকে
পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস
বারডেম হাসপাতাল, ঢাকা
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ফেব্রুয়ারী ২৫, ২০০৯
Leave a Reply