নতুন বছর বরণের আনন্দ অনেকটাই ফিকে হয়ে যায় গ্রীষ্মের তাপে। তবে বৈশাখের এই গরমে মাটির কলস, হাতপাখা—এসব পণ্য আপনাকে দিতে পারে কিছুটা শান্তির পরশ। দেখে নিন কোথায়, কেমন দামে মিলবে এসব।
মাটির কলস
বৈশাখের এই গরমে হাঁপিয়ে উঠলে এক গ্লাস ঠান্তা পানি খেতে কার না মন চায়। কিন্তু লোডশেডিংয়ের জন্য ফ্রিজে পানি ঠান্ডা হওয়ারও সময় পায় না। আপনি একটু চেষ্টা করলেই পেতে পারেন গরমে পরম শান্তির কাঙ্ক্ষিত ঠান্ডা পানি। মাটির কলসে রাখলে পানি সব সময় ঠান্ডা থাকে। ঢাকা কলেজের সামনে মাটির কলস বিক্রেতা মুজিবর হোসেন বলেন, গরমের সময় মাটির কলসের চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। ক্রেতারা একটু ভালো দেখে কলস কিনতে চায়। পানি রাখার অন্য পাত্র থেকে মাটির কলসের দাম কিছুটা কম হওয়ার সবাই মাটির কলস কেনে এই সময়। কলসের আকার ও ডিজাইনের ওপর দাম নির্ভর করে। রং দিয়ে ডিজাইন করা বড় আকারের মাটির কলস ১৫০ থেকে ২০০ টাকা ও ডিজাইন ছাড়া ৬০ থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। ছোট মাটির কলস আকার ও রঙের ডিজাইনভেদে ভিন্নতার কারণে ২০ থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়। ঢাকা কলেজের সামনে, কার্জন হলের সামনে, মীরপুর রোড, যাত্রাবাড়ী, রামপুরা, রায়েরবাজার, মীরপুর, সদরঘাটসহ ঢাকার বিভিন্ন স্থান ও প্রতিটি জেলা শহরে পাওয়া যায়। এ ছাড়া কুমারপাড়ায় যেকোনো আকারের মাটির কলস পাওয়া যাবে।
হাতপাখা
গরম ও হাতপাখা একটি আরেকটির পরিপূরক। বৈশাখ এলেই নাগরিক জীবনে গরমের অসহনীয় যন্ত্রণা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। যান্ত্রিক পাখা শরীরকে ঠিকই শীতল পরশ দিয়ে যায়, কিন্তু হাতপাখার বাতাসের মজাই অন্য রকম। আর যদি লোডশেডিং হয়, তাহলে তো হাতপাখার বিকল্প নেই। ‘ছোটবেলায় গরমের সময় মা তালপাতার হাতপাখার বাতাস দিয়ে ঘুম পাড়াতেন। এখন লোডশেডিং থাকলে নিজের বাচ্চাদের হাতপাখার বাতাস দিয়ে ঘুম পাড়াই।’ নিউমার্কেটে হাতপাখা কিনতে আসা গৃহিণী জাহানারা বেগম এ কথা বলেন। মৌসুমি ব্যবসা হওয়ার কারণে গরমের সময় ঢাকা শহরের প্রতিটি রাস্তায় হাতপাখা ফেরি করে বিক্রি হয়। বাহারি রং ও ডিজাইনের হাতপাখা পাওয়া যায়। এ ছাড়া অনেক দোকানেও গরমের সময় হাতপাখা পাওয়া যায়। ফেরি করা হাতপাখাগুলো ১০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে কেনা যায়। দোকানের পাখাগুলো ডিজাইনের দিক থেকে কিছুটা ভিন্ন হওয়ার কারণে দাম কিছুটা বেশি পড়ে। দোকনে ২৫ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায় হাতপাখা।
গামছা
বর্তমানে গামছার চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে। ফ্যাশন-সচেতন অনেকেই এখন গামছা ব্যবহার করে। ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটের গামছা বিক্রেতা সামছুল আলম বলেন, গরম এলে গামছার চাহিদা বেড়ে যায়। কাপড় ও আকারের ভিন্নতার ওপর গামছার দাম নির্ভর করে। অনেক সময় কোন এলাকায় বানানো হয়েছে, এটা অনেক বড় বিষয় হয় ক্রেতাদের কাছে। যারা অনেক দিন ধরে গামছা ব্যবহার করছে বা গামছা সম্পর্কে ভালো জানে, তারা সাধারণত সিরাজগঞ্জ ও পাবনার গামছা বেশি পছন্দ করে বলে জানান সামছুল আলম। বড় আকারের (চার-পাঁচ হাত) গামছা ১০০-২০০ টাকা মধ্যে পাওয়া যায়। আর দুই-চার হাতের গামছা ৪০ থেকে ১২০ টাকা। ঢাকার প্রায় প্রতিটি কাপড়ের মার্কেটে গামছা পাওয়া যায়। এ ছাড়া সব শহর ও গ্রামেগঞ্জের হাটেও গামছা পাওয়া যায়।
শীতলপাটি
গরমে স্বস্তির পরশ বুলাতে পারে শীতলপাটি। ঘরের সৌন্দর্য বাড়াতে বর্তমানে অনেকে ঘর সাজাতে শীতলপাটি ব্যবহার করছে। অন্যদিকে বাঙালির ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে এবং আরামের কথাটি বিবেচনা করে শীতলপাটির ব্যবহার বেড়েছে। একটু পেছন দিকে ফিরে যাওয়া যাক। যখন বাংলাদেশে বৈদ্যুতিক পাখা ও এয়ারকন্ডিশনারের এত ব্যবহার ছিল না, তখন শীতলপাটিই ছিল শীতলতার একমাত্র অনুষঙ্গ। কিন্তু বর্তমানে চিত্র অনেকটাই পাল্টে গেছে। শহরের ফ্ল্যাটবাড়িগুলোয় এয়ারকন্ডিশনার ছাড়া অন্য কোনো কিছুর কথা মাথায় আসে না। তার পরও কেউ কেউ আজকাল তোষকের ওপর বা মেঝেতে ব্যবহার করছে শীতলপাটি। প্রচণ্ড গরমে মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। আর এখন বিদ্যুতের আসা-যাওয়ার এ অবস্থায় শীতলপাটি অনেকেরই কাজে লাগতে পারে। আবার বিভিন্ন অনুষ্ঠান, বিশেষ করে গায়েহলুদেও এর ব্যবহার হয়। নানা রং ও ভিন্ন ডিজাইনের শীতলপাটি এ অনুষ্ঠানগুলোয় দেখা যায়। ফ্যাশন হাউস যাত্রার ইন-চার্জ শিমুল জানান, এই বৈশাখে তাঁদের সংগ্রহে বিভিন্ন ধরনের শীতলপাটি এসেছে। এর মধ্যে নামাজের জন্য রয়েছে আলাদা ডিজাইনের শীতলপাটি। বিভিন্ন অনুষ্ঠান, যেমন—বৈশাখ উপলক্ষেও তাঁদের নতুন কালেকশন রয়েছে। কাঁটাবনের ‘তাজমহল’ দোকানের স্বত্বাধিকারী লিটন বললেন, প্রায় সব রকম ডিজাইনেরই শীতলপাটি তাঁরা বিক্রি করেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাঁরা অর্ডারও নিয়ে থাকেন। তাঁর দোকানে তিন রকমের শীতলপাটি পাওয়া যায়।
কোথায় পাবেন
ঢাকার গাউসিয়া, নিউমার্কেট, কাঁটাবন, এলিফ্যান্ট রোড, মৌচাক, আনারকলি মার্কেট।
দামদর
ফ্যাশন হাউস যাত্রাতে শীতলপাটির দাম পড়বে ৩০০০-৫০০০ টাকা। নামাজের জন্য তৈরি শীতলপাটির দাম ৩০০ টাকা, বেতের তৈরি শীতলপাটির দাম পড়বে ৪৫০-১২০০ টাকা। কাঁটাবনের তাজমহল দোকানে ডিজাইন করা দুই ফুট বাই দুই ফুটের দাম পড়বে ১৮০ টাকা, পাঁচ ফুট বাই আড়াই ফুটের দাম ৩৫০ টাকা, দুই ফুট বাই দুই ফুট প্লেইন শীতলপাটির দাম পড়বে ১৫০ টাকা। কাঁটাবনের ‘লামিয়া জরি হাউসে’ দাম পড়বে ১৮০-২৫০ টাকা পর্যন্ত। কাঁটাবনের ‘সাজমহলে’ দাম পড়বে ১৩০-১৮০ টাকা। গাউসিয়া মার্কেটে পড়বে ১২০-১৫০ টাকা।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, এপ্রিল ০৬, ২০১০
Leave a Reply