রোদের আঁচ তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। গ্রীষ্মের এ দাবদাহে অতিষ্ট প্রাণ খুঁজে ফিরেছে একটু প্রশান্তি। রোদের এ ভয়ঙ্কর চোখ রাঙানি আর গরমের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার পথ বাতলে দিতেই আমাদের এ আয়োজন। লিখেছেন মোর্শেদ নাসের
তপ্ত রোদ এসে পড়েছে শহরের গায়ে। তাপের ঝাঁঝে যেন নগরী স্থবির হবার দশা। সূর্যের এ তিরিক্ষি মেজাজ এর সঙ্গে কিছুতেই যেন তাল মেলাতে পারছে না নগর জীবন। গ্রীষ্মের দাবদাহে অতিষ্ট নগর বাসী খুঁজে ফিরছেন তাই শীতলতার পরশ। যদিও খাঁ-খাঁ রৌদ্দুরে শীতলতা খোঁজা নেহাৎ মরিচীকার পেছনে ছুটে চলা ছাড়া কিছুই না। তবুও রোদের চোখ রাঙানোর হাত থেকে মুক্তি পেতে সবাই খুঁজছেন নানা উপায়।
গরমের ব্যারোমিটার যখন তুঙ্গে তখন সবার আগে নজর দেয়া উচিত পেট পূজার দিকে। আইসক্রীম, বরফ কুচি দেয়া ফালুদা কিংবা লাচ্ছিকে যারা গরমের আরামদায়ক খাবার হিসেবে গণ্য করছেন তাদের জন্য সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ। আপাতদৃষ্টিতে এসব খাবার তীব্র গরমের আপনাকে ক্ষণিকের হিম শীতল অনুভূতি এনে দিলেও আদৌতে পেটের ভেতর প্রবেশ করে গরম হয়ে। তাই ঠান্ডা আইসক্রিম এমনকি বরফ-শীতল পানি যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলাই উত্তম। এ সময়ে ঘামের কারণে শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি ও লবণ বের হয়ে যাওয়ায় পানি শূণ্যতা তৈরি হয়। আর এ পানি শূণ্যতা থেকে মুক্তির জন্য কেবল নিয়ম করে প্রতিদিন আট-দশ গ্লাস পানি পান করলেই চলবে না। সেই সাথে পান করা প্রয়োজন গ্লুকোজ স্যালাইন। আর এ গরমে যারা ডায়রিয়া আক্রান্ত হচ্ছেন, শরীরের অতিরিক্ত পানিও লবণ সংযোজনের পাশাপাশি তাদের প্রয়োজন অতিরিক্ত শক্তি। ফলে ডায়রিয়া আক্রান্তদের জন্য প্রয়োজন রাইস স্যালাইন। গরমে তরল খাবারের মাত্রা বাড়িয়ে দিন। পেঁপে, আম, বাঙ্গি, তরমুজ, বেলের জুস পান করুন। ভাজা-পোড়া এড়িয়ে চলুন। খাবারে অতিরিক্ত তেল বর্জন করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। ভুনা-ভাজি না করে ঝোলযুক্ত খাবার খান।
রোদের মেজাজ সপ্তমে চড়েছে। লু হাওয়া বইছে চারদিকে। এ সময়ে পোশাকে সবার আগে গুরুত্ব পায় কমফোর্ট। ফলে যে ধরনের পোশাকই গায়ে জড়ান না কেন তা তাপ সু-পরিবাহী হওয়া বাঞ্চনীয়। এক্ষেত্রে সুতীর বিকল্প কিছুই নেই। শাড়ি, সালোয়ার কামিজ, ফতুয়া, শার্ট, পাঞ্জাবি যাই পরুন না কেন মেটারিয়াল হিসেবে এ সময় সুতি ঠাঁই করে নিবে সবার আগে। পোশাকের রং বাছাইয়ের ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত সফট ও কুল কালারগুলো বেছে নিন। গোলাপী, লেমন, ব্রাউন, মভ, সাদা, অফহোয়াইট, আকাশী প্রভৃতি রঙ-এর পোশাক গায়ে জড়াতে পারেন। পোশাকের কাটিং এও গুরুত্ব দিন আরামকে। িভলেস কিংবা ম্যাগি হাতার ব্লাউজ, কামিজ, ফতুয়া কিছুটা হলেও প্রশান্তি এনে দিবে এ তপ্ত সময়ে।
এক্সেসরিজের প্রসঙ্গে, বিশেষ করে যারা বাড়ির বাইরে বের হচ্ছেন তাদের জন্য কয়েকটি অনুষঙ্গের কথা না বললেই নয়। এগুলো হল ছাতা, ওয়েট টিস্যু ও সানগ্লাস। সূর্যের তপ্ত অভিশাপ থেকে আপনাকে রক্ষা করতে ঢাল হিসেবে কাজ করবে ছাতা। ভিজে টিস্যুর ছোঁয়ায় আপনার রোদে পোড়া ত্বক খুঁজে পাবে এক টুকরো শীতল পরশ। রোদের গোলা থেকে চোখকে রক্ষা করতে চোখ ঢাকুন সানগ্লাসে। রোদের হাত থেকে মুক্তি পাবার জন্য যারা ছাতার স্মরণাপন্ন হচ্ছেন তারা অবশ্যই ছাতার রঙের দিকে গুরুত্ব দিবেন। গাঢ় রঙের ছাতাকে আপাতত ‘না’ বলে বেছে নিন হালকা রঙের ছাতা। ছাতা বহন করতে নারাজ হলে ‘হ্যাট’ হতে পারে আপনার সময়োপযোগী বন্ধু।
রোদের এ চোখ রাঙানোর মৌসুমে যথা সম্ভব মেকআপ এড়িয়ে চলুন। পারত পক্ষে বেজ মেকআপ না করাই উত্তম। বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে অবশ্যই সানস্ক্রীন লোশন লাগিয়ে নিবেন। লোশন লাগানোর পর ঘেমে যাওয়ার প্রবণতা থাকলে হালকা টেলকম পাউডার বুলিয়ে নিন। সম্ভব হলে প্রতিদিন দু’বার গোসল করুন। মুখে ঘন ঘন ঠান্ডা পানির ঝাপটা দিন। গ্রীষ্মের দাবদাহে টয়লেট্রিজের ঝুলিতে অবশ্যই থাকা প্রয়োজন ডিওডোরেন্ট, বডি স্প্রে কিংবা পারফিউম। পাটি মেকআপের ক্ষেত্রে বেজ মেকআপের আগে সারা মুখে বরফ কুচি দিয়ে নিন।
মাইক্রো টিপস্
- পানি শূন্যতা থেকে পরিত্রাণের জন্য গ্লুকোজ ও ডায়রিয়ার সময় শরীর থেকে যে শক্তি নিঃশেষ হয় তা পূরণের জন্য রাইস স্যালাইন খান।
- বরফ পানি কিংবা আইসক্রিম না খেয়ে নর্মাল পানি পান করুন।
- সানগ্লাস, ছাতার পাশাপাশি ওয়েট টিস্যু রাখুন ব্যাগে।
- সানস্ক্রীন লাগানোর পর ত্বক ঘামলে টেলকম পাউডার বুলিয়ে নিন।
- স্লিভলেস কিংবা ম্যাগী হাতার পোশাক পরতে পারেন।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, এপ্রিল ০৬, ২০১০
Leave a Reply