পায়ের ওপর ভর দিয়েই তো জীবন চলা। তাই পায়ের ঠিকঠাক যত্ন নেওয়া উচিত সব বয়সের সবারই। বলা হয়ে থাকে, একজনের পায়ের দিকে তাকালেই তার রুচি সম্পর্কে অনুমান করা যায়। তাই পা রাখতে হবে সুন্দর। এ জন্য যে খুব বেশি সময় খরচ করতে হবে তা কিন্তু নয়। বরং নিজের জন্য সপ্তাহের কিছুটা সময় বরাদ্দ করে নিন। আর সেই সময়ের খানিকটা খরচ করুন পায়ের পেছনে। টুকটাক যত্ন নিয়ে খানিকটা সাজিয়ে রাখুন আপনার পদযুগল। দেখুন না নিজের কাছেও কেমন ভালে লাগে।
পরিষ্কার রাখুন সব সময়
পায়ের যত্নে শুরুতে যে বিষয়টি রয়েছে তা হলো পরিচ্ছন্নতা। এ বিষয়ে রূপবিশেষজ্ঞ নাহিন বলেন, প্রতিদিন গোসলের সময় অবশ্যই পা ভালোমতো পরিষ্কার করা উচিত। তখন যদি সময় না পাওয়া যায়, সে ক্ষেত্রে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ভালোমতো পা পরিষ্কার করে লোশন বা ভ্যাসলিন লাগাতে হবে। সেই সঙ্গে সপ্তাহে একবার অবশ্যই পেডিকিউর করতে হবে।
পেডিকিউর করার নিয়মটা কমবেশি আমরা সবাই জানি। ঘরোয়াভাবে পেডিকিউর করতে একটি মাঝারি গামলায় সহনীয় তাপমাত্রার গরম পানিতে অল্প শ্যাম্পো গুলিয়ে ফ্যানা তুলতে হবে। সেই সঙ্গে লবণ দিতে পারেন এক চিমটি। এবার ১৫ মিনিটের মতো পা ভিজিয়ে নরম ব্রাশ দিয়ে পা ঘষে নিন। পায়ের গোড়ালি ঘষার জন্য ব্যবহার করুন পিউমিস স্টোন অথবা ঝামা। পা ঘষে মরা চামড়া তুলে ফেলুন। নেলকাটার দিয়ে নখ কেটে শেপ ঠিক করে নিন। এই সময়ে নখের শেপে হিট ফ্যাশন হলো চারকোনা। তবে কোনাটা একটু গোল করে দিতে পারেন নেইল ফাইলার দিয়ে। নখ কেটে নখে ক্রিম বা ভ্যাসলিন দিয়ে নখের দুই পাশের কিউটিক্যাল নরম করে নিন। এবার কিউটিক্যাল কাটার দিয়ে তা কেটে ফেলুন। নখের ব্রাশ ব্যবহার করে ঘষে ময়লা তুলে ফেলুন। পুরো পা মুছে ময়েশ্চারাইজার ক্রিম বা লোশন লাগিয়ে নিন।
নাহিন মনে করেন, এভাবে ঘরে বসে প্রতি সপ্তাহে পায়ের যত্ন নেওয়া উচিত। যদি স্পা পেডিকিউর বা অ্যারোমা পেডিকিউর করতে চান, সে ক্ষেত্রে যেতে পারেন পারলারে। এটা করতে পারেন মাসে একবার। অনেক সময় নখে দাগ পড়ে যায়। লেবুর রস ঘষে নখের দাগ তুলে ফেলতে পারেন।
ফ্রেঞ্চ পেডিকিউর
বর্তমানে পায়ের যত্নে বহুল ব্যবহূত শব্দ হলো ফ্রেঞ্চ পেডিকিউর। বিষয়টি খুব বেশি জটিল নয়। সাধারণ নিয়মে পেডিকিউর করে তারপর নেইল পলিশ লাগানোর যে কায়দাকানুন, সেটিই হলো ফ্রেঞ্চ পেডিকিউর। পায়ের যত্ন, নখ কাটা, ফাইলিং, মালিশ, পরিষ্কার করা ইত্যাদির পর নখে লাগাতে হবে স্বচ্ছ নেইল পলিশ। তারপর একদম সামনের দিকে একটা মোটা লাইন করে লাগিয়ে নিতে হবে সাদা রঙের নেইল পলিশ। একবার শুকিয়ে গেলে আরেক কোট দিয়ে নিন। সামনের সাদা বর্ডার লাইন শুকিয়ে গেলে এবার আরেক কোট স্বচ্ছ নেইল পলিশ লাগিয়ে নিন। এর ওপর দিতে পারেন গোলাপি, পার্পেল বা ব্রাউন রঙের হালকা নেইল পলিশ। না দিলেও খারাপ লাগবে না। নখের সাদা বর্ডারে নেইল পেইন্ট, স্টোন বসানো যেতে পারে।
যত্ন নিয়ে পা সাজানো
যত্ন নিয়ে এবার পা সাজিয়ে নিন সুন্দর করে। পা সাজানোর ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারেন ফ্রেঞ্চ পেডিকিউরের স্টাইল। এটি এখন এই সময়ে সবচেয়ে হিট ফ্যাশন। ফ্রেঞ্চ পেডিকিউরের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নেইল আর্ট। কয়েক রঙের নেইল পলিশ ব্যবহার করে তবেই এই নেইল আর্ট করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে আলাদা করে স্টোন, স্টার বসিয়ে আনা হয় গর্জিয়াস লুক। ফ্লোরাল, জিগজ্যাগ বিভিন্ন নকশা করছে তরুণীরা। এই নেইল আর্ট চাইলে বাড়িতেও করা যায়, তবে পারলারে গিয়ে করলে বেশি ভালো দেখাবে বলে মনে করেন নাহিন। একবার পারলার থেকে করিয়ে নিলে অন্তত এক মাস থাকবে। তাই খুব শখের কোনো অনুষ্ঠানে যেতে পারলারে করা যায়। বাড়িতে ফ্রেঞ্চ পেডিকিউর করা সম্ভব। তারপর দোকান থেকে স্টোন স্টিকার কিনে বসিয়ে দেওয়া যেতে পারে নখে। নিয়মিত নেইল পলিশ যাঁরা ব্যবহার করেন, তাঁরা কিন্তু তিন থেকে চার দিন পরপর তুলে নতুন করে দেবেন। বেশি দিন থাকলে নখে হলদেটে ভাব এসে যায়। আর নেইল পলিশ তোলার সময় খুব বেশি নেইল রিমুভার ব্যবহার করবেন না। এতে নখের এনামেল নষ্ট হয়।
পায়ের সাজে গয়নার প্রচলন বহু দিনের। হালকা ডিজাইনের রুপার মল পরতে পারেন। আড়ংয়ের বিপণন কর্মকর্তা সাদীয়া হক বলেন, রুপার আংটি আর রুপার মল চলছে এখনো। ছোট বা বড় উৎসবভেদে সব সময় এ ধরনের অলংকার মেয়েরা পায়ে পরে থাকেন। রুপার মধ্যে মিনা করা, পাথর বা মুক্তা বসানো—এ রকম পায়ের আংটি বা মলের অনেক ধরনের ডিজাইন রয়েছে আড়ংয়ে। তবে এখনকার তরুণীদের হাই ফ্যাশনের তালিকায় আছে মেটাল, সুতা, পুঁতির তৈরি ম্যাচিং কন্ট্রাস্ট মল। যেগুলো তাঁরা কখনো জোড়ায় জোড়ায় পরছেন, আবার কখনো তপুর গানে সাড়া দিয়ে এক পায়ে পরছেন। পিরানের ডিজাইনার হোসনা বানু জানালেন, এ ধরনের মেটালের পায়েলের এখন বেশ চাহিদা। এগুলোর মধ্যে একটা এথনিক লুকও রয়েছে। হোসনা বানু বলেন, এসব গয়না অনেক বেশি কন্ট্রাস্ট করে পরা যায় বলেই এগুলো এখন এত জনপ্রিয়। যেকোনো পোশাকের সঙ্গেই চলতে পারে এ ধরনের মেটালের পায়েল। তাই তরুণীরা এগুলো বেশ পছন্দ করছেন। তা ছাড়া সাধারণ টিউব মেহেদি, কালো মেহেদি দিয়েও পায়ে নকশা করে পা সাজানোর রীতি রয়েছে। সেই সঙ্গে আলাদা ছোট পাথর কিনে মেহেদির ডিজাইনে বসিয়ে দেওয়া যেতে পারে।
পায়ের সাজে রুপার পায়েল আর আংটি কিনতে পাওয়া যায় আড়ংয়ে এবং চাঁদনী চকে বা রুপার দোকানগুলোতেও। রুপার গয়নার দাম নির্ভর করে ওজন ও নকশাভেদে। এ ছাড়া পিরান, যাত্রা, দেশাল, বিবিয়ানায় পাওয়া যায় মেটাল, পুঁতি বা সুতার পায়েল। এগুলোর দাম ৫০ থেকে ২৫০-এর মধ্যে জোড়া। আবার বিভিন্ন উৎসব-পার্বণে দেখা যায়, পুঁতির পণ্যের পসরা সাজিয়ে নারীরা জোড়া ১০ টাকায় বাহারি রঙের পায়েল বিক্রি করছেন। এ ছাড়া নেইল পেইন্ট, স্টোন বা প্লাস্টিকের আংটি এবং ইমিটেশন পায়েল পাওয়া যায় বড় বড় শপিং মলে। সুন্দর করে পা সাজিয়ে ঢেকে রাখলে চলবে না। পরতে হবে চুড়িদার পায়জামা বা চাপা জিন্স, সঙ্গে ফিতে বাঁধা চটি স্যান্ডেল। তবেই না পায়ের সাজ ভালো দেখাবে।
ফারহানা আলম
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মার্চ ৩০, ২০১০
Leave a Reply