শুধু সাজসজ্জার জন্যই প্রসাধনসামগ্রী নয়, নিজেকে নিখুঁতভাবে উপস্থাপনেও এর জুড়ি নেই। কিন্তু এসব মেকআপ উপকরণের যত্ন নেওয়ার পদ্ধতি অনেকেই জানেন না। ফলে দেখা যায় নানা অসতর্কতায় ত্বকে যেকোনো ইনফেকশন হতে পারে—জানালেন হারমোনি স্পার রূপবিশেষজ্ঞ রাহিমা সুলতানা। এবারের নকশায় এসব উপকরণের যত্নআত্তির নানা টিপস তিনি দিচ্ছেন।
১. মেকআপসামগ্রী কেনার সময় খেয়াল রাখবেন, তা যেন বায়ুনিরোধক পাত্রে থাকে। বিশেষ করে আইলাইনার, নেইল পলিশ, লিপগ্লস, মাশকারা—এ ধরনের তরল মেকআপ প্রসাধনগুলো ব্যবহারের সময় শিশটিকে ঢেকে রাখুন। না হলে বাতাসে এর ভেতরের তরল উড়ে গিয়ে প্রসাধনগুলোকে ব্যবহারের অনুপযোগী করে তোলে।
২. এ ধরনের তরল প্রসাধনসামগ্রী খুব বেশি রোদ বা বাতাস আসে এমন স্থানে না রেখে ঠান্ডা জায়গায় রাখলে দীর্ঘদিন ভালো থাকে।
৩. অনেক সময় লিপলাইনার ব্যবহারের ক্ষেত্রে দেখা যায়, আমরা লিপলাইনারের ঢাকনা (ক্যাপ) খুলে ফেলে দিই। লিপলাইনার পেনসিলটি খোলা থাকার কারণে এর মুখে ধুলাবালি লেগে যাওয়ায় পর ব্যবহারের সময় ঠোঁটে ছোট ছোট ফুসকুড়ির সৃষ্টি হয়। তাই শুধু লিপলাইনারই নয়, কাজল ব্যবহারের পরও এর মুখের ঢাকনা লাগিয়ে রাখুন।
৪. ফেস পাউডার কেনার সময় ছোট বক্স কেনাই ভালো। কারণ বড় বক্সে দীর্ঘদিন থাকার কারণে পাউডার জমাট বেঁধে যায়।
৫. লিপস্টিকটি যদি ক্রিমের মতো হয়ে থাকে, তবে তা ফ্রিজে রাখতে হবে। ম্যাট লিপস্টিক হলে ঠান্ডা স্থানে রাখলেই তা ভালো থাকে। অনেক লিপস্টিকে তুলি দেওয়া থাকে। লিপগ্লস ও লিপস্টিক দেওয়ার পর তুলিটি টিস্যু দিয়ে ভালো করে মুছে রাখুন। না হলে তুলিতে ছত্রাকের সংক্রমণ হতে পারে।
৬. মেকআপের পাফ সপ্তাহে অন্তত এক দিন গরম পানিতে ধুয়ে নিন।
৭. কন্ডিশনার, ময়েশ্চারাইজার, ফাউন্ডেশন, কনসিলার ব্যবহারের সময় বেশি করে হাতের তালুতে নিলে তা পুনরায় আবার একই টিউব বোতলে ঢুকিয়ে না রেখে আলাদা পাত্রে রাখুন।
৮. ব্লাশন দিয়ে মেকআপ করার পর তা ধুয়ে শুকিয়ে টিস্যুতে পেঁচিয়ে রাখুন।
৯. অনেক সময় মেকআপের প্রসাধনসামগ্রী মুখে লাগানোর জন্য পাফটিকে ভিজিয়ে নেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে ভেজা পাফটি ব্যবহারের পর তা পুনরায় ধুয়ে আবার শুকিয়ে টিস্যু দিয়ে পেঁচিয়ে রাখুন।
১০. রিমুভার খুব তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়। তাই রিমুভার ব্যবহারের সময় এর শিশিটি ঢেকে ব্যবহার করুন। রিমুভারের গায়ে মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ দেওয়া থাকে না। তাই রিমুভার খুব বেশি না কিনে এক বছরের ব্যবহার উপযোগী শিশি কেনাই ভালো।
মেকআপ ব্যবহারে এসব সচেতনতা তো আছেই, এ ছাড়া মেকআপ ব্যবহারে যে বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা হলো, একই মেকআপ প্রসাধন যেন একাধিক মানুষ ব্যবহার না করে। এ বিষয়ে রাহিমা সুলতানা জানান, মুখের ত্বক এমনিতেই স্পর্শকাতর। আর মেকআপ করার কারণে ত্বকের কোষ বন্ধ হয়ে টক্সিন বের হতে পারে না। ফলে ত্বকের কিছুটা ক্ষতি হলেও বিশেষ যত্ন নিলে সেই সমস্যা দূর হয়ে যায়। কিন্তু একই লিপগ্লস, পাফ, ব্লাশার, লিপস্টিক, মেকআপ বক্স ব্যবহারের কারণে বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগের সংক্রমণ হয়, যার স্থায়ী নিরাময় করা কষ্টকর হয়ে যায়।
এ কারণে প্রসাধন ব্যবহারে সবাইকে সতর্ক হতে হবে, যাতে প্রসাধন অন্য কেউ ব্যবহার না করে। এ ছাড়া মেকআপ কেনার সময় তা ভালো ব্র্যান্ডের কি না, দেখে নিন। অনেকেই মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেলেও মেকআপসামগ্রী ব্যবহার করে থাকেন। মেয়াদ উত্তীর্ণ সামগ্রী কখনোই ব্যবহার করবেন না। এতে ত্বকে চর্মরোগ, ফুসকুড়ি, এমনকি ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে।
বিপাশা রায়
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মার্চ ৩০, ২০১০
Leave a Reply