উত্কণ্ঠা, উত্তেজনা, অজানা শিহরণ। প্রথম কোনো কিছু পাওয়ার অনুভূতিই এমন। আর এ আনন্দ চূড়ান্ত পর্যায়ের হয়, যখন প্রথম সন্তান জন্ম নেয়। মায়ের ভেতর ধীরে ধীরে নতুন প্রাণটি বড় হতে থাকে। সখ্যও হয়। মায়ের অনুভূতিটা বিশেষ ধরনের। যে কারণে সন্তান জন্ম দেওয়ার পরে তাঁর দায়িত্বটাও বেশি হয়। কিন্তু তাই বলে কি বাবারা পিছিয়ে থাকবেন। নতুন অতিথির জন্য তাঁকে আলাদাভাবে প্রস্তুতি নিতে হয়। তাঁর ওপর দুজনের দায়িত্ব। মা ও সন্তানের দেখভাল যে তাঁকেই করতে হবে। সন্তানকে পেয়ে খুশিতে আত্মহারা হওয়ার পাশাপাশি দায়িত্বটা কাঁধে এসে পড়ে। কিন্তু প্রথমবারের মতো যাঁরা বাবা হবেন, তাঁদের জন্য রইল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক শিশুবিশেষজ্ঞ মাহবুব মোতানাব্বির পরামর্শ। ‘বাবার দায়িত্বটা শুরু হয় সন্তান জন্মের আগেই। সন্তানের মা ও নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করে নিতে হয়। এই মায়ের মনকে প্রফুল্ল রাখতে হবে। সাহস জোগাতে হবে, যাতে করে তিনি বুঝতে পারেন আপনি তাঁর সঙ্গে আছেন। এই সময়ে এটি খুব জরুরি। এ সময় আপনার স্ত্রীর শারীরিক পরিবর্তন আসবে। স্বাভাবিক কাজকর্মও অনেক সময় করতে পারবেন না। তাঁর সুবিধা-অসুবিধার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। যৌথ পরিবারে থাকলে এটি সবাইকে বুঝিয়ে বলুন। নিয়মিত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে শারীরিক পরীক্ষা করানো উচিত। পুষ্টিযুক্ত খাবার খাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করুন। তা ছাড়া প্রথম সন্তান সম্পর্কে সব মা-বাবাকেই রহস্য ঘিরে রাখে। তাই সন্তানের মাকে ভালো কিছু চিন্তা করতে বলুন। খেয়াল রাখবেন, তিনি যেন কোনো কিছু নিয়ে দুশ্চিন্তা না করেন। সন্তান কোথায় ভূমিষ্ঠ হবে, তা আগে থেকেই ঠিক করে রাখুন। বাড়িতে সার্বক্ষণিক একজন লোকের ব্যবস্থা করুন, যাতে করে যেকোনো মুহূর্তে সে খবর দিতে পারে। বাড়ির আশপাশে কোনো স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র আছে কি না, দেখে রাখুন। প্রয়োজনে একজন চিকিৎসকের নম্বর হাতের নাগালের মধ্যে রাখুন। পিতৃকালীন ছুটির ব্যবস্থা এ দেশে প্রচলন না থাকলেও সম্ভব হলে সন্তান জন্মের পরের কয়েক দিনের জন্য ছুটি নিতে পারেন। এতে নতুন অতিথি ও মাকে সঙ্গ দেওয়া হবে, যা এ সময় প্রয়োজন। সন্তান জন্ম নেওয়ার পর তার গায়ের ভেজা পানি শুষ্ক পরিষ্কার নরম কাপড় দিয়ে মুছে দিন। এরপর আরেকটি কাপড় দিয়ে তাকে মুড়িয়ে দিন। সন্তানকে মায়ের কাছাকাছি রাখুন। যেহেতু মায়ের ওপর বেশ ধকল যায়, তাই সন্তানের দিকটা বাবাকেই দেখতে হবে। দেখে নিন সন্তানের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ঠিক আছে কি না। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার এক মিনিটের মধ্যে কাঁদার বিষয়টি লক্ষ রাখতে হবে। এ ছাড়া জন্মের পর শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানোর প্রক্রিয়াটির জন্য বাবাকে উদ্যোগী হতে হবে। এটি মা ও সন্তান দুজনের জন্যই ভালো। সন্তান স্বাভাবিকভাবে নড়াচড়া করছে কি না, তাও খেয়াল করতে হবে। এ ছাড়া পোলিও, হেপাটাইটিস-বি, বিসিজি টিকা দিতে হবে। ভিটামিন ‘কে’-ও খাওয়াতে হবে। ২৪-৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রস্রাব-পায়খানা করার বিষয়টি নিয়ে অবহিত হতে হবে। সেই সঙ্গে মায়ের সম্পর্কেও সচেতন হতে হবে। তাঁর বিশ্রামের ব্যবস্থা করে দিন। শারীরিক কোনো সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। সবচেয়ে বড় কথা, এ সময় আপনার সঙ্গ ও সহযোগিতা মা-সন্তান দুজনেরই জন্য প্রয়োজন।
স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ মিনু রানী সরকারের মতে, মানসিক সহযোগিতাই এ সময় বেশি প্রয়োজন। অর্থনৈতিকভাবেও সাহায্য করতে হবে, যাতে সময়মতো সব ধরনের সেবা নিশ্চিত করা যায়। শিশুর পাশাপাশি মাকেও টিকা দিতে হবে। সন্তান হলে প্রতি সপ্তাহে মা ও শিশুকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে পরীক্ষা করানো যেতে পারে। তাদের পুষ্টিযুক্ত খাবার খাওয়াতে হবে। শুধু সন্তান জন্ম দিলেই হবে না, তার পরিপূর্ণ দায়িত্ব পালন করা উচিত সব বাবার।
তৌহিদা শিরোপা
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মার্চ ৩০, ২০১০
Leave a Reply