হাইলাইটস
- হোমিওপ্যাথি শব্দটি এসেছে গ্রীক হোমো অর্থাৎ সদৃশ Similar এবং প্যাথোস অর্থাৎ ভোগান্তি শব্দ দুটির থেকে।
- মহামতি স্যামুয়েল ফ্রেডরিক ক্রিশ্চিয়ান হ্যানিম্যানকে আমরা হোমিওপ্যাথির জনকরূপে জানি।
এই সময় ডিজিটাল ডেস্ক: হোমিওপ্যাথি শব্দটি এসেছে গ্রীক “হোমো” অর্থাৎ সদৃশ (Similar) এবং “প্যাথোস” অর্থাৎ ভোগান্তি (suffering) শব্দ দুটির থেকে। মহামতি স্যামুয়েল ফ্রেডরিক ক্রিশ্চিয়ান হ্যানিম্যানকে আমরা হোমিওপ্যাথির জনকরূপে জানি। তিনি একটি অতি প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতির সম্পর্কে জেনেছিলেন যা হিপোক্রেটিস, গ্যালেন প্রমুখ প্রাচীন চিকিৎসকরা ব্যবহার করেছিলেন সাফল্যের সঙ্গে ও নিজের নিজের অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ করেন। পদ্ধতিটি একটি Fundamental Principle-এর উপর ভিত্তি করে, “Law of Similia” যার উপজীব্য হল “Similia Similibus Curantur” অর্থাৎ “সদৃশ সদৃশের উপশম করে”। হ্যানিম্যান বিবিধ পরীক্ষা নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে এই সূত্র ধরে “হোমিওপ্যাথি” ধারার প্রবর্তন করেন।
হোমিওপ্যাথি সাতটি মূল সূত্র (Fundamental Principles) মেনে চলে।
১. Law of Similia.
২. Law of Simplex.
৩. Law of Minimum.
৪. Doctrine of Drug proving.
৫. Theory of Chronic Disease.
৬. Theory of Vital Force.
৭. Doctrine of Drug Dynamization.
“Law of Similia” অনুসারে, একটি অসুখের রোগলক্ষণ দেখে সেটি সারানো সম্ভব এমন উপাদানের দ্বারা যা একই ধরনের রোগলক্ষণ সৃষ্টি করতে পারে।
“Law of Simplex” বলে, একটি রোগে একসময়ে (At A Time) একটিমাত্র ওষুধই কার্যকর। একাধিক ওষুধের প্রয়োজন নেই।
“Law of Minimum” অনুযায়ী সঠিক ওষুধ লাগে ন্যূনতম পরিমাণে। মাত্রা যত কম সম্ভব, তত বেশি কার্যকর। বড় মাত্রা আসলেই হিতে বিপরীত করে।
“Doctrine of Drug Proving” অনুসারে প্রতিটি ওষুধ যা হোমিওপ্যাথিতে ব্যবহৃত হয়, সেটিকে একাধিক সুস্থ ব্যক্তির ওপর একাধিক বার প্রয়োগ করে পরীক্ষা করে তার রোগ লক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে তবেই অসুখে ওষুধ হিসেবে প্রয়োগ করার জন্য অনুমোদিত হয়। (প্রসঙ্গত বলি, যে কোনো মানুষ এই সংক্রান্ত নির্দেশাবলী মেনে যেকোনো ওষুধ নিজের ওপর নিরাপদে পরীক্ষা করতে পারেন। এই পদ্ধতিতে লাগাতার প্রয়োগ ও পর্যবেক্ষণ চালানো হয় হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজগুলিতে। এতে সাবজেক্ট মানে যার ওপর পরীক্ষা করা হয়,তার সার্বিক স্বাস্থ্যের উন্নতিই হয়। )
“Theory of Chronic Disease” অনুসারে এমন কিছু অসুখ থাকে যা একান্তই “ব্যক্তি”কে আক্রমণ করে দীর্ঘদিন ধরে ধীরে ধীরে। সেগুলো সবই গভীর প্রভাব বিস্তার করে সংশ্লিষ্ট মানুষটির ওপর। এইসব অসুখের চিকিৎসা পদ্ধতি ভিন্ন ধরনের। এ বিষয়ে বিস্তারিত গবেষণা করে হ্যানিম্যান তাঁর সিদ্ধান্ত রেখেছেন। “Theory of Vital Force” বলে জীবনীশক্তির কথা যার কারণে যেকোনো জীবিত জীব জীবনের সমস্ত লক্ষণ ও বৈশিষ্ট্য পরিস্ফুটিত করে। এই জীবনীশক্তিই ক্ষতিকারক উপাদানের দ্বারা প্রভাবিত হলে রোগলক্ষণ দেখা দেয়। এই উপাদান নানা ধরনের হতে পারে… মানসিক, শারীরিক অথবা পারিপার্শ্বিক।
“Theory of Drug Dynamization” চর্চা করে হোমিওপ্যাথিতে ব্যবহারযোগ্য ওষুধ তৈরির পদ্ধতি নিয়ে। নানা রকমের প্রাণীজ, উদ্ভিজ্জ, খনিজ, মৌলিক ও যৌগিক লবণ, অ্যাসিড ও ক্ষার থেকে তো বটেই, এমনকি সুস্থ প্রাণীদেহের কিছু গ্রন্থি ও তার ক্ষরিত পদার্থ থেকে (এদের Sarcode বলে যেমন Thyroidinum), কিছু অসুস্থ প্রাণী ও উদ্ভিদের রুগ্ন কোষকলা ও ক্ষরণ থেকেও ওষুধ তৈরি হয় (এদের Nosode বলে যেমন Carcinosin)। এর মধ্যে কিছু বিষ ও বিষাক্ত উপাদানও থাকে। কিন্তু ওষুধ তৈরির প্রক্রিয়া চলাকালীন ক্রমশঃ প্রতিটি মূল উপাদান (Crude Substance) তার নিজস্ব ক্ষতিকারক গুণাগুণ হারিয়ে ফেলে এবং যুগপৎ তার ওষধি গুণাবলীর বিকাশ ঘটে। ওষুধ প্রক্রিয়াকরণের এই বিশিষ্ট পদ্ধতিই ড্রাগ ডাইনামাইজেশন।
আরও পড়ুন:
এছাড়াও “ইম্পন্ডেরাবিলিয়া” ( Imponderabilia) বলে একটি উৎস আছে যেখানে অধরা উপাদান থেকে ওষুধ তৈরি হয়। (যেমন চাঁদের আলো থেকে তৈরি হয় Luna, সূর্যের আলো থেকে Sol, উত্তরমেরুর চৌম্বকীয় ক্ষেত্র থেকে তৈরি হয় Magnetis Polaris Arcticus)। এই প্রক্রিয়াও ড্রাগ ডাইনামাইজেশন। এবার বলি, হোমিওপ্যাথি এক বিশেষ দর্শন। সেই দর্শন আয়ত্ত্ব না করলে ক্লাসিক্যাল হোমিওপ্যাথি প্রয়োগ করা সম্ভব নয়। হ্যানিম্যানের “Organon of Medicine” সেই দর্শনের আধার।
এসবই হোমিওপ্যাথির গোড়ার কথা। হোমিওপ্যাথির দৃষ্টিতে অসুস্থ দেহাংশ নয়, সম্পূর্ণ মানুষটি যিনি অসুস্থতার শিকার তিনি সর্বাঙ্গীণভাবে বিবেচ্য তাঁর দেহ ও মন সহ। মনের গতি না জেনে ক্রনিক রোগের চিকিৎসা অসম্ভব। পেটব্যথার ওষুধ, মাথাব্যথার ওষুধ বলে হোমিওপ্যাথিতে আলাদা করে কিছু নেই। প্রায় দশহাজার ওষুধের ভান্ডারে কয়েক হাজার ওষুধ আছে যা পেটব্যথা বা মাথাব্যথা সারাতে সক্ষম। সঠিক ওষুধের নির্বাচন হয় “Individualization”য়ের মাধ্যমে। এর নিরিখে প্রতিটি আলাদা মানুষের মাথাব্যথা বা পেটব্যথা আলাদা আলাদা। এবং প্রত্যেকটির ওষুধ এই ভান্ডারে আছে। শুধু খুঁজতে পারার অপেক্ষা।
আপাতত এই পর্যন্তই।
ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন।
ডাঃ অর্চনা দাস RBSK MO (Ayush)।
যোগাযোগ: 8670891848
Health and Fitness Tips in Bengali শরীর-গতিক, Yoga and Exercise Tips in Bangla
2021-08-02 13:00:52
Source link
Leave a Reply