পরিচিত কয়েকটা সমস্যা প্রায়শই আমাদের সৌন্দর্যকে পিছিয়ে রাখে। ব্রণ, সানস্পট, ব্ল্যাকহেড্স, বলিরেখা, ডার্ক সার্কেল, স্কিন র্যাশ, নিস্তেজ চুল, পাফি আইজ নামক ছোটখাটো সমস্যাগুলো প্রতিনিয়ত দুশ্চিন্তায় ফেলে দেয়। তবে কিছু সহজ সমাধান জানা থাকলে এসব সমস্যা কোনো ব্যাপারই না। জেনে নিন সৌন্দর্য রক্ষার সঠিক সমাধান-
ব্রণ
০ যাদের ত্বক একটু তৈলাক্ত টাইপ তারা ব্রণ নামক যন্ত্রণাদায়ক সমস্যায় বেশি ভোগেন। রসুন থেঁতো করে ব্রণের উপর লাগান। ১৫ মিনিট পরে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। রসুনের অ্যান্টিবায়োটিক উপাদান ব্রণের হাত থেকে রেহাই দেবে।
০ শুষ্ক ত্বকেও ব্রণের সমস্যা যে একেবারে হয় না, তা নয়। সেক্ষেত্রে সানফ্লাওয়ার অয়েল, ডিমের সাদা অংশ, ইস্ট মিশিয়ে ২০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। অল্প গরম পানিতে ধুয়ে ফেলুন। সানফ্লাওয়ার অয়েল ব্যবহার করতে না চাইলে স্যান্ডালউড পাউডার ব্যবহার করুন। ডিমের সাদা অংশ ২ চা-চামচ, স্যান্ডালউড পাউডার ১ চা-চামচ ও কয়েক ফোঁটা পাতিলেবুর রস মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে নিয়মিত মুখে লাগান। ১৫ মিনিট রেখে ঠান্ডা পানিতে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
স্কিন র্যাশ
শুষ্ক ত্বকে প্রায়ই র্যাশের সমস্যা দেখা দেয়। পাকা কলা চটকে তার সাথে অল্প মধু মিশিয়ে নিন। পেস্ট করে মুখে লাগিয়ে রেখে কিছুক্ষণ পর ধুয়ে ফেলুন। র্যাশের সমস্যাতো যাবেই ত্বকের ময়শ্চারও বজায় থাকবে। র্যাশ থেকে মুখে দাগ হলে লাল চন্দন বাটার সঙ্গে মধু মিশিয়ে লাগান।
অতিরিক্ত তৈলাক্ত বা শুষ্কভাব
আমাদের অনেকেরই ঘুম থেকে উঠার পর ত্বকের বিচিত্র পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। যেমন, ধরুন, ত্বকে তেলতেলে ভাব বা শুষ্কতার কারণে ত্বক টানটান ভাব।
০ ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক লাগলে কমলালেবুর জুস তুলায় ভিজিয়ে হালকা হাতে লাগান। ত্বক নরম ও মসৃণ হয়ে উঠবে।
০ অতিরিক্ত তৈলাক্ত ত্বকের জন্য উপকারী হচ্ছে আটা। এটি সহজেই বাড়িতে পাবেন। আটার সঙ্গে অল্প পানি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে তৈলাক্ত অংশে লাগিয়ে নিন। শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। টমেটো জুসের সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে স্কিন টনিক হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। ত্বক উজ্জ্বল থাকবে। দিনের শেষে আইস কিউব হালকা হাতে ঘষতে পারেন। ব্লাড সার্কুলেশন ভাল হবে।
সানস্পট
সানস্পটের সমস্যা কমাতে রেটিনয়েড সমৃদ্ধ ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন। প্রতিদিন ঠান্ডা দুধে তুলা ভিজিয়ে সানবার্নের উপর লাগান। ত্বক নরম থাকার সাথে ঠান্ডা ভাব বজায় থাকবে। নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকে এক ধরনের গ্লো ফুটে উঠবে। সানবার্ন সারাতে একটি উপকারি তেল হলো তিলের তেল। একমুঠো তিল গুঁড়া করে হাফ কাপ পানিতে ২ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখুন। পানি ছেঁকে নিন এবং মুখ ধোয়ার জন্য ব্যবহার করুন।
ব্ল্যাকহেডস
০ কর্নফ্লাওয়ার, গুঁড়া করা চিনি এবং কয়েক ফোঁটা ভিনিগার একসঙ্গে মিশিয়ে নাক ও তার চারপাশে লাগান। আধা ঘন্টা রেখে মুখে হালকা ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন।
০ মাইল্ড সোপ দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন।
০ ৩ ভাগ বেকিং সোডা, ২ ভাগ পানি মিশিয়ে ত্বকে লাগান। এটি ব্ল্যাকহেডস কমাবার আদর্শ উপায়।
০ ওটমিল, ডিমের সাদা অংশ ও মধু মিশিয়ে ব্ল্যাকহেডসের ওপর লাগান। ১০ মিনিট পর পানিতে ধুয়ে ফেলুন।
বলিরেখা
বলিরেখা বা সূক্ষ্ম রেখার সমস্যা কমাতে-
০ বাঁধাকপির রস, ১ চা-চামচ মধুর সঙ্গে মিশিয়ে নিন। দারুণ কাজে দেবে।
০ প্রতিদিন শোয়ার সময় ১ চামচ আমন্ড অয়েল চোখের পাতায় এবং চোখের চারপাশে ম্যাসাজ করুন।
০ ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফেরার পর, তুলার প্যাড শসার রসে ডুবিয়ে ১০ মিনিট চোখের পাতার উপর দিয়ে রিল্যাক্স করুন।
০ অ্যাপল সিডার ভিনিগার ও অরেঞ্জ জুস মিশিয়ে টনিক হিসেবে স্টোর করতে পারেন। নিয়মিত লাগান। বয়সের ছাপ কমবে।
০ কড লিভার অয়েল বা ভিটামিন-ই ক্যাপসুল তুলায় নিয়ে লাগান।
০ অ্যালোভেরা জেল রাতে শোবার আগে লাগান।
০ টকদই, ক্রিম, ওটমিন গুঁড়ো, লেবুর রস মিশিয়ে তৈরি করুন ফেস প্যাক, কিছুক্ষণ পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ত্বক নরম হবে।
০ ক্লিনজিং, টোনিং, ময়শ্চারাইজিং-এর প্রাথমিক নিয়ম মেনে চলার চেষ্টা করুন।
০ সকালে বের হবার আগে সানস্ক্রিন এবং রাতে শোবার সময় গলায় ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম অবশ্যই ব্যবহার করুন।
পাফি আইজ
পাফি আইজ হচ্ছে চোখের কোল ফুলে উঠা। এ অবস্থায় জরুরি কোল্ড কম্প্রেস। কোল্ড কম্প্রেস করলে চোখের চারপাশের ব্লাড ভেসল আরাম পায়। ঠান্ডা শসা চোখের উপর কিছুক্ষণ রাখুন। শসা না পেলে নরম কাপড় ঠান্ডা পানিতে ভিজিয়ে ফ্রিজে রাখুন। তারপর চোখের উপর রাখুন। ঠান্ডা টি-ব্যাগও ব্যবহার করতে পারেন। পাফি আইজের সমস্যা কমাতে সল্ট ইনটেক কমান। সল্ট ইনটেক বেশি হলে চোখের চারপাশের টিস্যুতে অতিরিক্ত পানি জমে থাকে। বেশি করে পানি খান। যাতে জমে থাকা লবণ আউট হয়ে যায়।
ডার্ক সার্কেল
আমন্ড অয়েল ও মধু সমপরিমাণে নিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন। ডার্ক সার্কলে ম্যাসাজ করুন। টমেটোর উপস্থিতি ভিটামিন-সি ও এ এবং আয়রন ত্বকের পক্ষে উপকারী, টমেটোর রস, লেবুর রস, অল্প বেসন মিশিয়ে চোখের তলায় লাগান। পুরোটা শুকিয়ে যাওয়ার আগে আলতো হাতে ঘষে ধুয়ে ফেলুন, টমেটোর জুসের সঙ্গে অল্প লেবুর রস ও লবণ মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খান। ক্লান্তি কেটে যাবে।
নিস্তেজ চুল
বিভিন্ন কারণে অনেক সময় আমাদের চুল তার স্বাভাবিক সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলে। এ সময়ে লাইট ওয়েট বা ক্লিয়ার রিনজিং শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। প্রোটিন সমৃদ্ধ বা ওয়াটার বেসড কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। চুলের ভলিউম বাড়বে। চুলের ভলিউম বাড়ানোর জন্য কোনো হেয়ার প্রডাক্ট ব্যবহার করলে চুলের গোড়ায় সেই প্রডাক্ট লাগান। পাতলা নেতিয়ে পড়া চুলের জন্য আদর্শ হালকা শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার। কারণ হালকা চুলে জমে থাকা অতিরিক্ত তেল পরিষ্কার করতে সাহায্য করবে। চুল অতিরিক্ত তেলেভাব থাকবে না। বেবি শ্যাম্পুও ব্যবহার করতে পারেন। শ্যাম্পুর পর বাড়িতে হেয়ার রিন্স তৈরি করে নিতে পারেন। ভিনেগার ও পানি মিশিয়ে তৈরি করে নিন হেয়ার রিন্স, চুল চকচকে থাকবে।
রুক্ষ ঠোঁট
০ ঠোঁট শুকনো লাগলেই লিপ বাম বা চ্যাপস্টিক ব্যবহার করুন।
০ আপনার লিপবাম, চ্যাপস্টিক বা লিপস্টিকে যেন এস সি এফ ১৫, ভিটামিন-ই, অ্যালোভেরা এবং গ্লিসারিন থাকে সে দিকে খেয়াল রাখবেন।
০ ঠোঁটে ভাল করে লিপবাম লাগিয়ে বেবী টুথব্রাশ দিয়ে আস্তে আস্তে ঘষুন। এতে ডেডস্কিন উঠে যাবে। তারপর ক্রিম লিপবাম লাগিয়ে নিন।
০ গোলাপের পাঁপড়ি পেস্ট করে ঠোঁটে লাগালে ঠোঁট নরম ও গোলাপি হবে।
০ এক সপ্তাহ রাতে শোয়ার সময় নারকেল তেল, চন্দনবাটা ও গোলাপজল এক সঙ্গে মিশিয়ে লাগিয়ে রাখুন। পরের দিন সকালে ধুয়ে ফেলুন। এতে ঠোঁট নরম থাকবে।
০ মেকআপের সময় লিপস্টিক লাগানোর আগে সবসময় কোনো কোল্ড ক্রিম বা লিপবাম লাগিয়ে নিন।
তামান্না শারমিন
মডেল পিয়াসা
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, মার্চ ২৩, ২০১০
সোাহাগ
আমার গলায় বাম পাশে চামড়া খসখসে হয়ে গেছে হঠাত করে। কি করবো।