এই সময়টায় প্রতিদিনই চারদিক থেকে কমবেশিআগুন লাগার খবর কানে আসছে। ফাল্গুন-চৈত্র মাস থেকে শুরু করে গ্রীষ্মকালে আগুন লাগার ঘটনা বেশি ঘটে থাকে। আগুনকে বলা হয়ে থাকে সর্বভুক। সামনে থাকা কোনো কিছুই বাদ যায় না এর কবল থেকে। সতর্কতার অভাবে অগ্নিকাণ্ড ঘটে যেতে পারে আপনার প্রিয় বসতবাড়ি, অফিস কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। তাই আগুনের বিষয়ে আপনাকে তিনটি প্রধান বিষয় মাথায় রাখতে হবে। প্রথমত, অগ্নিকাণ্ডের কারণ। দ্বিতীয়ত, এ থেকে সতর্ক থাকার নিয়মকানুন আর তৃতীয়ত অগ্নিকাণ্ডের পর করণীয়।
গরমের সময় আগুন বেশি লাগে কেন?
সাধারণত দেখা যায়, গরমের সময় বিভিন্ন স্থানে আগুন লাগার খবর বেশি পাওয়া যায়। এর কারণ কী? এর জবাব দিলেন ঢাকা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন অফিসার সাহজাদী সুলতানা। তিনি বলেন, এ সময়টা তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ও শুষ্ক থাকে। তাই কোনো কিছু আগুনের সংস্পর্শে আসামাত্রই আগুন লেগে যায়। বাতাসের বেগও এ সময় বেশি থাকে। এতে আগুন এক স্থান থেকে উড়ে অন্যস্থানে গিয়ে লাগতে পারে।
এ ছাড়া গ্রীষ্মকালে বৈদ্যুতিক তার ঢিলেঢালা হয়ে অন্য তারের সংস্পর্শে এলেও আগুন লেগে যেতে পারে। প্রচণ্ড বাতাসে আগুন সহজেই দ্রুত অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ে। তাই এ সময় আগুনের ব্যাপারে বেশি সতর্কতা প্রয়োজন।
অগ্নিকাণ্ডের সম্ভাব্য কারণ
ভালোভাবে গ্যাসের চুলা বন্ধ না করা এবং গ্যাসের লাইন ত্রুটিপূর্ণ বা ছিদ্র থাকা।
চুলা জ্বালিয়ে চুলার ওপর কাপড় শুকাতে দেওয়া।
সিগারেটের জ্বলন্ত আগুন।
উত্তপ্ত ছাই।
বৈদ্যুতিক গোলযোগ ও ত্রুটিপূর্ণ বৈদ্যুতিক তার।
উত্তপ্ত তেল থেকে সৃষ্ট কারণে।
আতশবাজি বা পটকা থেকে।
বজ্রপাত।
সাধারণ বিদ্যুতের তার দিয়ে বেশি ভোল্টের বিদ্যুৎ ব্যবহার করলে।
নিম্নমানের বৈদ্যুতিক তার ব্যবহার করলে।
বাচ্চাদের আগুন নিয়ে খেলা করা।
সতর্ক থাকুন
চুলার কাজ শেষ হওয়ার পর তা বন্ধ করে রাখা। গ্যাসের চুলা হলে ভালোভাবে সুইচ বন্ধ করে পরীক্ষা করা—ঠিকমতো বন্ধ হয়েছে কি না। সাধারণ চুলা হলে ব্যবহারের পর পানি দিয়ে পরিপূর্ণভাবে নেভানো।
চুলার ওপর কখনোই কাপড় শুকাতে না দেওয়া।
মানসম্পন্ন বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা, ত্রুটিপূর্ণ তার ব্যবহার না করা ও ত্রুটিপূর্ণ তার দ্রুত সারিয়ে নেওয়া।
বাচ্চাদের আগুন নিয়ে খেলা করতে না দেওয়া।
ঘরে আগুন নেভানোর জন্য সর্বদাই অগ্নিনির্বাপক গ্যাস রাখা।
অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধের পর্যাপ্ত জ্ঞান এবং এর বিভিন্ন কারণ নিয়ে আলোচনা করেও আগুন সম্পর্কে সতর্ক থাকা যায়।
আগুন লাগার পর
আগুন যদি লেগেই যায়, তাহলে প্রথমেই খুব দ্রুততার সঙ্গে আপনাকে কাছের ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে খবর দিতে হবে। আগুন নেভানোর জন্য তারা সব সময়ই প্রস্তুত থাকে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের জরুরি টেলিফোন: কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণকক্ষ ১৯৯, ফোন: ৯৫৫৫৫৫-৭, ৯৫৫৬৬৬৬-৭, ৯৫৫১৩০০, ৯৫৬৭৭৩৩-৪
ডেমরা: ৭৫০০১১১, ৯৭১৫৫৭৫
তেজগাঁও: ৯৮৯৮১৮৭
লালবাগ: ৮৬১৯৯৮১
মিরপুর: ৯০০১০৫৫
মোহাম্মদপুর: ৯১১২০৭৮
পলাশী: ৮৬২৮৬৮৮
সদরঘাট: ৭১১৯৭৫৯
কেরানীগঞ্জ: ৭৭৬৬৬৬৬
সাভার ইপিজেড: ৭৭০১৪৪৪
খিলগাঁও: ৭২১৮৩২৯
পোস্তগোলা: ৭৪৪০৭৭১
আগুন লাগতে পারে যেকোনো সময়। তাই ওপরের নম্বরগুলো ধারে-কাছেই রাখুন, যাতে সঠিক সময় ব্যবস্থা নিতে পারেন। অগ্নিকাণ্ডের বিভিন্ন কারণ থেকে সতর্ক থাকুন ও সাবধানতা অবলম্বন করুন। দেখবেন, দুর্ঘটনা আপনার কাছেও ঘেঁষবে না।
তথ্যসূত্র: ঢাকা ফায়ার সার্ভিস ও কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণকক্ষ
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মার্চ ২৩, ২০১০
Leave a Reply