হাইপোমেনিয়া কী?
সাবস্ট্যান্স অ্যাবইউজ অ্যান্ড মেন্টাল হেল্থ সার্ভিসেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অনুযায়ী কোনও ব্যক্তির মেজাজ যখন অস্বাভাবিক ভাবে এবং ক্রমবর্ধমান, বিস্তৃত ও খিটখিটে হয়ে পড়ে তখন তা হাইপোমেনিয়া হিসেবে বিবেচিত হয়। এমনকী রাগ বা এ ধরনের কোনও ক্রিয়াকলাপে অস্বাভাবিক ও ক্রমাগত বৃদ্ধি লক্ষ্য করা যায়। এমন কোনও অবস্থা যখন ৪ দিন পর্যন্ত থাকে তখন সেটি হাইপোমেনিক হিসেবে বিবেচ্য। অনেক সময় হাইপোমেনিয়া আবার স্টিমুলেন্ট অনটক্সিকেশনের মতো মনে হয়। তবে কোনও উত্তেজক ড্রাগের কারণে এমনটি হয় না।
লক্ষণ
স্ট্যাটিস্টিক্যাল ম্যানুয়াল অফ মেন্টাল ডিসঅর্ডার (ডিএসএম-৫) হাইপোমেনিয়ার যে লক্ষণগুলি উল্লেখ করেছে, তা হল–
১. গ্র্যান্ডিওস্টি বা আত্মসম্মানে ঘাটতি।
২. ঘুমের প্রয়োজনীয়তা বা চাহিদা কমে যাওয়া।
৩. কথা বলার প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়া বা কথা বলতে থাকার চাপ অনুভব করা।
৪. এক সঙ্গে নানান ধরনের চিন্তাভাবনা মাথায় আসা।
৫. সহজেই বিভ্রান্ত হয়ে পড়া।
৬. লক্ষ্য নির্দেশিত ক্রিয়াকলাপে বৃদ্ধি। সামাজিক, শিক্ষাগত, সেক্সুয়াল বা কাজের ক্ষেত্রে এমন প্রবনতা দেখা যায়।
৭. সাইকোমিটার এজিটেশন। এটি এমন এক ধরনের পরিস্থিতি যখন কোনও ব্যক্তি উদ্বিগ্ন ও অস্থির থাকে, যার ফলে অনিচ্ছা সত্ত্বেও ব্যক্তি নানান গতিবিধি করে।
৮. কোনও কাজকর্ম করার অস্বাভাবিক প্রবণতা যা কষ্টদায়ক ও অযাচিত পরিণতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
রোগ নির্ণয়
যে ব্যক্তি হাইপোমেনিক অবস্থার মধ্যে দিয়ে দিন কাটাচ্ছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে অন্তত ৩ টি লক্ষণ অথবা কমপক্ষে ৪ দিন ধরে মেজাজের পরিবর্তন দেখা দিতে হবে। তাঁরা হাইপোমেনিকের পর্যায় পড়েন কী না সে বিষয় সুনিশ্চিত হওয়ার জন্য আরও কয়েকটি লক্ষণ দেখা দেওয়া উচিত—
১. দৈনন্দিন ক্রিয়াকলাপে অস্বাভাবিক পরিবর্তন।
২. মেজাজ ও কার্যকলাপে চোখে পড়ার মতো পরিবর্তন।
৩. তাঁদের এই ধারাবাহিকতায় কোনও সাইকোটিক বৈশিষ্ট্য থাকে না, কাজকর্মে কোনও তাৎপর্যপূর্ণ প্রতিবন্ধকতার কারণ হয়ে দাঁড়ায় না এবং এ ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভরতি করার প্রয়োজনীয়তা যেন না-থাকে।
৪. বিনোদনমূলক ড্রাগের ব্যবহার বা মেডিকেশনের কারণে যাতে ধারাগুলি না-ঘটে থাকে।
উপরিউক্ত পরিস্থিতিগুলি বিচার করে একজন মনস্তাত্বিক চিকিৎসক হাইপোমেনিয়া রোগ নির্ণয় করে থাকেন।
ডিসএম-৪ ও ডিসএম-৫
হাইপোমেনিয়ার রোগ নির্ণয়ের মাপকাঠির ক্ষেত্রে ডিএসএম-৫ ও ডিএসএম-৪ এর মধ্যে পরিবর্তন ঘটেছে। ডিএসএম-৫ এর ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক এনার্জেটিক বা অস্বাভাবিক হারে সক্রিয় ব্যক্তিই হাইপোমেনিক। যদিও ডিএসএম-৪ অনুযায়ী, এনার্জেটিক বা অতিসক্রিয়তা না-থাকা সত্ত্বেও কোনও ব্যক্তি হাইপোমেনিয়ার শিকার হতে পারে। ব্যক্তির মধ্যে যে এই সমস্যার সমস্ত লক্ষণ দেখা দিতে হবে, তার কোনও প্রয়োজনীয়তা চোখে পড়েনি। অতএব বলা যেতে পারে যে, ডিএসএম-৫-এর হাইপোমেনিয়ার সংজ্ঞা, ডিএসএম-৪-এর তুলনায় অনেক বেশি কঠোর।
কারণ
ঠিক কোন কারণে ব্যক্তি হাইপোমেনিয়ার শিকার হয়, সে বিষয় বিশেষজ্ঞরা সুনিশ্চিত নন। এটি নানান মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত লক্ষণের অবস্থা। যেমন- যে ব্যক্তির বাইপোলার ডিসঅর্ডার রয়েছে, তাঁদের মধ্যে হাইপোমেনিক ফেস থাকা সাধারণ বিষয়।
২০২০ সালের একটি রিভিউ অনুযায়ী নিম্নলিখিত অবস্থায় অনেক সময় হাইপোমেনিয়ার মতো লক্ষণ দেখা যায়—
১. সাইক্লোথিমিক ডিসঅর্ডার।
২. স্কিৎজোফ্রেনিয়া
৩. গুরুতর উদ্বেগ
৪. গুরুতর অবসেসিভ কমপালসিভ ডিসঅর্ডার
৫. হিস্ট্রিঅনিক পার্সোন্যালিটি ডিসঅর্ডার
৬. বর্ডারলাইন পার্সোন্যালিটি ডিসঅর্ডার
হাইপোমেনিয়া ও মেনিয়ার মধ্যে পার্থক্য
এই দুটি অবস্থাই কোনও ব্যক্তির মেজাজ ও ব্যবহারকে প্রভাবিত করতে পারে। তবে এই দুটির মধ্যে কিছু পার্থক্যও রয়েছে।
হাইপোমেনিয়ার ক্ষেত্রে দৈনন্দিন সমস্যা কম দেখা দেয়, তবে মেনিয়ায় কোনও ব্যক্তির উচ্চমাত্রার দৈনন্দিন ভাঙন লক্ষ্য করা যায়। হাইপোমেনিয়া থাকলে ব্যক্তির সামাজিক ও পেশাগত ক্রিয়াকলাপে এর প্রভাব কম থাকে। কিন্তু মেনিয়ারগ্রস্ত কোনও ব্যক্তির সামাজিক ও পেশাগত কার্যকলাপ গুরুতর নেতিবাচক প্রভাবের মুখে পড়ে। হাইপোমেনিয়ার ধারা ব্যক্তির মধ্যে অন্তত ৪ দিন দেখা দিতে হয়, তবে মেনিয়ার ক্ষেত্রে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৭ দিন। হাইপোমেনিয়ায় কম তবে অতিরিক্ত পরিমাণে বিনোদনমূলক ড্রাগ বা মদের ব্যবহার দেখা দেয়। এর বিপরীতে মেনিয়াগ্রস্ত ব্যক্তির মধ্যে এমন অভ্যাস গুরুতর ভাবে পরিলক্ষিত হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যক্তিকে হাসপাতালে ভরতি করতে হয়।
হাইপোমেনিয়ার চিকিৎসা
চিকিৎসার অভাবে হাইপোমেনিয়া মেনিয়ায় পরিণত হতে পারে। ২০২০ সালের ওই পর্যবেক্ষণে দেখা গিয়েছে যে মেনিয়া ও হাইপোমেনিয়ার চিকিৎসায় দুধরনের ওষুধের ব্যবহার করা হয়। প্রথম ধরনের ওষুধের সাহায্যে মেনিক ও হাইপোমেনিক ধারার উপশম করা হয়। এ ক্ষেত্রে ওলানজ্যাপাইন, রিসপেরিডন, হ্যালোপেরিডলের মতো ওষুধ ব্যবহৃত হয়। আবার দ্বিতীয় সেটের ওষুধের সাহায্যে ভবিষ্যতে এর পুনরাবৃত্তি প্রতিরোধ করার চেষ্টা করা হয়। তখন লিথিয়াম ও ভ্যাপ্রোয়িক অ্যাসিড ব্যবহার করা হয়।
তবে ২০১৬-র একটি প্রতিবেদনে ব্যাখ্যা করা হয়েছিল যে, বাইপোলার ডিসঅর্ডারের কনটেক্সটে মেনিয়া ও হাইপোমেনিয়ার চিকিৎসার সমস্যা রয়েছে। যে ব্যক্তির বাইপোলার ডিসঅর্ডার থাকে, তাঁরা অবসাদে ভোগে, যার জন্য পৃথক ওষুধ দিতে হয়। তাই যাঁরা ডিপ্রেশনের ওষুধ নিচ্ছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে মেনিয়া ও হাইপোমেনিয়ার ওষুধ নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
ওষুধ ছাড়াও সাইকোথেরাপি, ইলেক্ট্রোকনভালসিভ থেরাপির মাধ্যমেও মেনিয়া ও হাইপোমেনিয়ার চিকিৎসা করা হয়ে থাকে। চিকিৎসকরা ওষুধের পাশাপাশি সাইকোথেরাপির পরামর্শ দিলেও ইলেক্ট্রোথেরাপির পরামর্শ দেওয়ার ঘটনা খুবই বিরল।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ মেন্টাল হেল্থের মতে বাইপোলার ডিসঅর্ডার একটি গুরুতর অবস্থা, যা ব্যক্তির জীবনকে গুরুতর ভাবে প্রভাবিত করে। যাঁদের এ ধরনের সমস্যা দেখা দেয়, তাদের কী করণীয় উচিত সে বিষয়েও উল্লেখ রয়েছে—
১. চিকিৎসক ও সাইকোথেরাপির অ্যাপয়নমেন্ট বাদ দেবেন না।
২. নির্দেশমতো ওষুধ খান।
৩. খাওয়া-দাওয়া ও ঘুমের একটি রুটিন মেনে চলুন।
৪. পর্যাপ্ত ঘুম ও ব্যায়াম করুন।
৫. মুড সুইং চিহ্নিত করার চেষ্টা করুন।
Health and Fitness Tips in Bengali শরীর-গতিক, Yoga and Exercise Tips in Bangla
2021-07-30 18:41:06
Source link
Leave a Reply