গৃহিণী কিংবা কর্মজীবী নারী, নিজ নিজ ক্ষেত্রে দম ফেলার ফুরসত নেই এখন কারও। ফল স্নায়ুর ওপর চাপ এবং ক্লান্তিকর জীবন। এ ধকলটুকু কাটাতে দরকার একটু বাড়তি যত্ন, বিশ্রাম। আয়ুর্বেদ-পদ্ধতি ব্যবহারেও স্নায়ুচাপ কমিয়ে শারীরিক সুস্থতা আনা যায়। সঙ্গে পাওয়া যাবে পরিপূর্ণ সৌন্দর্যও।
আয়ুর্বেদ হলো জীবনের জন্য বিজ্ঞান। আমাদের জীবনব্যবস্থার জন্য একটি দিকনির্দেশনা—জানালেন হারমনি স্পার প্রধান র্নিবাহী কর্মকর্তা রাহিমা সুলতানা। তিনি বলেন, ক্লান্তিকর জীবন থেকে স্নায়ুর চাপ কমিয়ে এনে সৌন্দর্যচর্চার জন্য আমরা আয়ুর্বেদিক সেবা চালু করেছি।
এ সেবায় হাতের তালু, পায়ের তালু ও নাভির সঙ্গে স্নায়ুর যে যোগগুলো আছে, সেখানে তেল দিয়ে মালিশ করা হয়।’
তবে এখানে আয়ুর্বেদিক সেবা নেওয়ার আগে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসককে দেখিয়ে নেওয়া হয়। এরপর বয়স, সমস্যা এবং ধকলের ওপর নির্ভর করেই প্রয়োজনীয় সেবা দেওয়া হবে—জানান রাহিমা সুলতানা।
যিনি সেবাটি দেন তার সব ইতিবাচক শক্তি সেবাগ্রহণকারীর মধ্যে স্থানান্তরিত হয়। সব অবসাদ দূর হয়ে ঝরঝরে অনুভূতি হওয়ার এটি অন্যতম কারণ। যুগ যুগ ধরে এ সেবার চর্চা চলে আসছে। শরীরের সুস্থতা বজায় রাখার পাশাপাশি মানসিক শান্তি আনতেও এ সেবার জুড়ি নেই। হারমনি স্পার দেওয়া আয়ুর্বেদ সেবাগুলোর মধ্যে আছে—
স্পিরধারা: এ আয়ুর্বেদিক সেবা শুরু করার ঠিক ১৫ মিনিটের মধ্যে স্নায়ুর ওপর থেকে চাপ কমে যাবে। প্রচণ্ড চাপ, ক্লান্তি, অনিদ্রা এবং দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য প্রযোজ্য এ সেবা।
আয়ুর্বেদিক দোসা ফেসিয়াল: ত্বক পরিপূর্ণভাবে পরিষ্কার করে। এ ছাড়া ত্বকের রং উজ্জ্বল করে।
আয়ুর্বেদিক নিম ফেসিয়াল: লোমকূপ পরিষ্কার করে ত্বকে ব্যাকটেরিয়া রোধ করে।
আয়ুর্বেদিক অ্যান্টি রিংকল ফেসিয়াল: যারা ত্বকে বলিরেখা সমস্যায় ভুগছেন, এ সেবা তাঁদেরই জন্য।
আয়ুর্বেদিক তালাম হেয়ার ট্রিটমেন্ট: চুল পড়া কমিয়ে আনে, নতুন চুল গজানোর পাশাপাশি চুল পাকা রোধ করে। খুশকিও দূর করে।
আভায়াঙ্গা: শরীরে মালিশ দেওয়া হয় এ সেবায়। শরীরে জমে থাকা ক্ষতিকর উপাদান মালিশের মাধ্যমে বের করে দেওয়া হয়।
এ ছাড়া এ সেবা আপনার ত্বকের রং উজ্জ্বল করে তুলবে, চাপ কমিয়ে আনবে, বয়স রোধ করবে, অনিদ্রা দূর করবে। এ সেবায় তেল, গরম পাথর এবং ভাপ ব্যবহার করা হয়।
নাভারাখিজি: এর মূল উপকরণ হলো, বিন্নিধানের চাল ও দুধ। উপকরণ জ্বাল দিয়ে মিশ্রণ তৈরি করা হয়। এ সেবা শরীরের টকসিন বের করে গায়ের রং উজ্জ্বল করে তোলে, অবসাদ দূর করে, শরীরের দুর্গন্ধ দূর করে। বিয়ে আসন্ন এমন পাত্রীদের জন্য এ সেবা উপকারী।
মাথা, ঘাড় ও পা মালিশ: কর্মজীবী মহিলাদের জন্য কার্যকরী। এ সেবা স্নায়ুর ওপর থেকে সব ক্লান্তিকর চাপ কমিয়ে আনবে।
পদিক্কিজি ও ইলাক্কিজি: শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টের ব্যথা দূর করে। আর্থ্রাইটিজের ব্যথাও চলে যায় এ আয়ুর্বেদিক সেবার মাধ্যমে।
লেবুর সঙ্গে বিশেষ তেল এবং ভেষজ উপাদান মিশিয়ে পুঁটলিতে বাঁধা হয়। এরপর একটু গরম তেলের মাধ্যমে শরীরে মালিশ করা হয়।
চক্রধারা: এ সেবায় স্নায়ুচাপ কমবে। দুধের মধ্যে কিছু ভেষজ মিশিয়ে আধঘণ্টা কপালের ওপর ঢালা হয়। বিশেষ তেল দিয়ে পুরো শরীরে মালিশও করা হয়।
সারভাঙাধারা: চল্লিশোর্ধ্ব মহিলাদের জন্য এটি আদর্শ। মেনোপোজ, ঘন ঘন হটফ্লাশ হওয়ার সমস্যাগুলো কমাবে।
ম্যানিকারমা ও প্যাডিকারমা: রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধির পাশাপাশি অবসাদ পুরোপুরিভাবে দূর হয়ে যাবে এ সেবার মাধ্যমে।
ব্রাইডাল প্যাকেজ: এটি তিন মাসের একটি প্যাকেজ। শুধু রূপচর্চার জন্য আয়ুর্বেদিক সেবাই দেওয়া হবে না এখানে। বিবাহিত জীবনের জন্য কাউন্সেলিংও দেওয়া হবে। পারিবারিক সমস্যা এবং সমাধান, পরিবারের প্রতি সম্মান অর্জন প্রভৃতি সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হবে। ত্বক, চুল, শরীর এবং মনের সুস্থতা আনার পাশাপাশি সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে পরিপূর্ণ সাহায্য করবে এ সেবা।
১৫০০ টাকায় আয়ুর্বেদিক এ সেবাগুলো পাওয়া যাবে।
আয়ুর্বেদিক সেবার পাশাপাশি যোগব্যায়ামের ওপরও জোর দিতে হবে বলে জানালেন রাহিমা সুলতানা। তিনি বলেন, ‘যোগব্যায়াম করার মাধ্যমে শরীর এবং মন দুটির মধ্যেই সমতা আনা সম্ভব। আয়ুর্বেদিক সেবা এবং যোগব্যায়ামের মিলিত চর্চাই সাহায্য করবে আপনার প্রকৃত সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে।’
রয়া মুনতাসীর
মডেল: রিমু
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মার্চ ২৩, ২০১০
Leave a Reply