আজকাল শহুরে জীবনে ফিট থাকাটা কষ্টের বৈকি। বিশেষ করে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা বিশাল এক ঝক্কির কাজ। তারওপর এখন ঘরের বাইরে হাঁটতে যাওয়াও বারণ। শুয়ে-বসে কাটালে ওজন তো বাড়বেই। তো এখন কী করা যায়?
অনেকেই মনে করেন ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে পছন্দের খাবারগুলোকে দূরে রাখতে হবে। এটা ঠিক নয়। ওজন বেড়ে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকলে সেটা নিয়ন্ত্রণ করাও সম্ভব।
কী কী কারণে ওজন বাড়ে?
সঠিক সময়ে না খেলে: লকডাউনে ঘরে থেকেই সব কাজ করতে হয় বলে রুটিনে পরিবর্তন আসবেই। এতে ঠিক সময়ে খাওয়া হয় না অনেকের। বিশেষ করে সব বেলার খাবার খাওয়া হয় দেরিতে। এতে শরীর তার গ্রহণ করা ক্যালরি খরচের সুযোগ কম পায়। তখনই বাড়ে ওজন।
সারভিং সাইজ তথা পরিমাণ ঠিক না থাকা: প্রত্যেকের শরীরের গঠন অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণ ক্যালরি গ্রহণ করতে হয়। স্বাভাবিকভাবেই চাহিদার চেয়ে অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ করা মানেই শরীর সেটা জমিয়ে রাখবে ও ওজন বাড়াবে।
অস্বাস্থ্যকর খাবার: লকডাউনে অলস সময় কাটালে একটু পর পর এটা ওটা খেতে মন চাইতে পারে। এক্ষেত্রে মাথায় আসে মুখরোচক সব ফাস্টফুডের কথা। আর এসব জাংক ফুড যেমন স্বাস্থ্যকর নয়, তেমনি ক্যালরিও থাকে বেশি বেশি। এগুলো ওজন দ্রুত বাড়ায়।
শারীরিক পরিশ্রম না করা: লকডাউনের আগে জিমে যাওয়া হতো, কিংবা কাজ শেষে পার্কে জগিং করতেন। এখন সেটা সম্ভব হচ্ছে না বলে ফিজিকাল অ্যাকটিভিটিও হচ্ছে না বেশিরভাগ মানুষের। অনেকে অফিসও করছেন বাসায়। এতে ঘরের ভেতরও টুকটাক হাঁটাহাঁটি হচ্ছে না। এর ফলে ওজন তো বাড়বেই, ঝুঁকিতে পড়বে আপনার হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্যও।
সমাধান
পরিমিত শর্করা: শর্করা খেতেই হবে। তবে অতিমাত্রায় নয়। আবার ওজন কমাতে গিয়ে শর্করা একেবারে বন্ধ করলেও শরীর ভেঙে পড়বে। এক্ষেত্রে বেছে নিতে হবে জটিল শর্করা। জটিল শর্করার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন পূর্ণশস্য সম্বলিত খাদ্য যেমন লাল বা বাদামী চালের ভাত, গমের রুটি বা লাল আটার রুটি, লাল চিড়া, বাদাম, বীজ জাতীয় খাবার ইত্যাদি।
স্বাস্থ্যকর প্রোটিন: ফার্স্ট ক্লাস প্রোটিন হিসেবে অবশ্যই প্রাণিজ প্রোটিন রাখতে হবে খাদ্য তালিকায়। যেমন ডিম, মাছ, মুরগি, লো ফ্যাট মিল্ক। গরুর মাংসের ক্ষেত্রে চর্বিহীন মাংস নিতে হবে। কারণ ওজন কমাতে সাহায্য করে থাকে লিন মিট। এ ছাড়া উদ্ভিজ্জ উৎস যেমন বিভিন্ন ডাল, ছোলা, মটরশুঁটি এসবের পাশাপাশি নিয়মিত বীজ জাতীয় খাবার গ্রহণের অভ্যাস করুন-যেমন কুমড়ার বীজ, সূর্যমুখীর বীজ, তিল, চিয়া সিড ইত্যাদি। এসবও প্রোটিনের ভালো উৎস।
পর্যাপ্ত পানি: বেশি পানি পান করলে শরীরের শ্বসন প্রক্রিয়া ঠিক থাকে ও এর গতি বাড়ে। আর উচ্চ মেটাবলিক রেট সম্পন্ন একজন মানুষের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে সহজে।
মৌসুমি ফল ও শাকসবজি: ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য একজন ব্যক্তির কম ক্যালরি সমৃদ্ধ পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে শাকসবজি ও ফল বেশ সহায়ক। বিভিন্ন ধরনের সবুজ শাক এবং রঙিন সবজি ফাইবার সমৃদ্ধ ও একইসঙ্গে অল্প ক্যালরিযুক্ত। ওজন কমাতে সহায়ক সবুজ শাকসবজির মাঝে অন্যতম হচ্ছে ব্রকোলি, ফুলকপি, বিভিন্ন শাক, টমেটো, বাঁধাকপি, লেটুস ও শসা। আবার লাউ, পটল, ঝিঙা, কাঁচা পেঁপেও ওজন কমায়। ফলের মধ্যে উপকারী হচ্ছে সাইট্রাসজাতীয় ফল- কমলা, মালটা, আনারস, জাম্বুরা, আমড়া ইত্যাদি।
ব্যায়াম: শুধু খাবারে দিয়ে কাজ হবে না। শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকতেই হবে। লকডাউনে জিমে যাবার সুযোগ না পেলে ঘরেই চেষ্টা করবেন। সকালে ২০ মিনিট ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করুন। প্রতিদিন ৩০ মিনিট হাঁটুন। এ ছাড়া রাতের খাবার শেষে ২০ মিনিট ঘরেই হাঁটুন। অর্থাৎ সবমিলিয়ে প্রতিদিন ৪০-৫০ মিনিট অ্যাকটিভ থাকুন।
এম ইউ
স্বাস্থ্য | DesheBideshe
2021-07-29 21:38:51
Source link
Leave a Reply