সাধারণত চার-পাঁচ বছর বয়সের মধ্যেই একটি শিশু তার প্রস্রাব নিয়ন্ত্রণ করতে শেখে। প্রয়োজনে মা-বাবার সাহায্য নেয়। কিন্তু কোনো কোনো সময় এ বয়সের পরও বিভিন্ন কারণে, বিশেষ করে মানসিক কিছু সমস্যার জন্য শিশুটির প্রস্রাব ধরে রাখার ক্ষমতা রপ্ত হয় না। তখন সে ঘুমের সময়, বিশেষ করে রাতে বিছানা ভেজায়।
কেন এমন হয়
এ সমস্যা মানসিক কারণ ছাড়াও শারীরিক (মূত্রাশয়ের রোগ) কারণেও হতে পারে। তাই শারীরিক রোগের জন্যও প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা লাগতে পারে।
পরিবারে এ ধরনের সমস্যা ভাই-বোন বা বাবা-মার থাকলে, মানসিক চাপযুক্ত পরিবেশে বেড়ে উঠলে, পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় না হলে, মায়ের কাছ থেকে কোনো কারণে শিশুটি দূরে থাকলে, বারবার বাসা বদলালে, নতুন ভাই বা বোনের জন্ম হলে, এবং শিশু যদি মানসিক বা শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয় তবে এ রোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
কী করবেন
শিশুর যাতে এ সমস্যা না হয় সে জন্য ২০ মাস বয়স থেকেই তাকে প্রস্রাব-পায়খানা নিয়ন্ত্রণ করার প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
এই প্রশিক্ষণ দিতে হবে ধীরে ধীরে, ধৈর্য নিয়ে। হঠাৎ করে তার কাছ থেকে আশা করা ঠিক হবে না যে সে এক রাতের মধ্যে সব শিখে ফেলবে। অনেক সময় শিশু তার নিজস্ব অভিব্যক্তির মাধ্যমে প্রস্রাব করার ইচ্ছা ব্যক্ত করে, সেগুলো বোঝার চেষ্টা করুন ও তাতে সাড়া দিন। রাতে ঘড়িতে অ্যালার্ম দিয়ে নির্দিষ্ট সময় পরপর তাকে বাথরুমে নিয়ে যান এবং প্রস্রাব করার জন্য তাকে উৎসাহিত করুন। শিশুর খাদ্যতালিকায় আঁশযুক্ত খাবার যুক্ত করুন।
এতে তার কোষ্ঠকাঠিন্য হবে না, ফলে টয়লেটে যেতে তার অনিচ্ছা অনেকাংশে কমে যাবে। যথেষ্ট বয়স হওয়া সত্ত্বেও (পাঁচ-ছয় বছর) বিছানায় প্রস্রাব করে, এমন শিশুর জন্য কিছু নিয়ম মেনে চলুন, যেমন সন্ধ্যার পর শিশুকে বেশি পানি পান করাবেন না, যে রাতে বিছানা ভেজাবে সে রাতে তাকেও ঘুম থেকে তুলুন এবং তার ভেজা কাপড়, কাঁথা, বিছানার চাদর বদলানোর সময় তাকেও ছোটখাটো কিছু কাজ করতে দিন।
আবার যে রাতে সে বিছানা ভেজাবে না তার পরবর্তী সকালে তাকে ছোট কোনো উপহার দিয়ে পুরস্কৃত করুন। ক্যালেন্ডারে দাগ দিয়ে হিসাব রাখুন মাসে কত দিন সে বিছানা ভেজায় আর কত দিন ভেজায় না। ক্যালেন্ডারটি তাকে দেখান এবং যে কদিন সে বিছানা ভেজায় না তা হিসাব করে ততটি চকলেট বা অন্য কিছু তাকে উপহার দিন। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে কলবেলযুক্ত বিশেষ ধরনের বিছানা ব্যবহার করা যেতে পারে।
বিছানায় প্রস্রাব করা ছোট শিশুদের জন্য স্বাভাবিক হলেও একটা বয়সের পর এর জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াটা জরুরি। এ রোগের জন্য কার্যকর ওষুধ ও চিকিৎসা রয়েছে।
ডা· আহমেদ হেলাল
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ফেব্রুয়ারী ১৮, ২০০৯
Leave a Reply