ঘরের ভেতর অটল, অচল দাঁড়িয়ে থাকা দেয়ালটা দেখে নিজেকে চার দেয়ালের মাঝে বন্দী ছাড়া আর কোনো অনুভূতি হয়তো সৃষ্টি হয় না, অথচ একটু সৃষ্টিশীল চিন্তা আর এর সাথে কিছুটা ইচ্ছা শক্তির সমন্বয় ঘটাতে পারলে আপনার বাড়ির জড় দেয়ালটিও যে নান্দনিক হয়ে উঠতে পারে তা ভেবে দেখেছেন কি, এমনকি আপনার বাড়ির সৌন্দর্য, বৈশিষ্ট্য ও চরিত্রের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে একটি শিল্পসম্মত দেয়াল। লিখেছেন সামিয়া আসাদী
দেয়ালে বাহারী রঙের ছটা
দেয়ালের কথা উঠলেই প্রথমে যে বিষয়টির কথা চলে আসে তা হলো রঙ। ঘরের ভেতর প্রকৃতির আমেজ এনে দিতে পারে প্রকৃতির আবেশ মাখানো দেয়ালগুলো। আপনার বেড রুমে জানালায় ফাঁক গলে আকাশ দেখা না গেলেও হালকা নীল রঙা দেয়ালটি আপনাকে দিতে পারে খোলা আকাশ দেখার অনুভূতি। কিংবা ঘরের ভেতর সবুজ অরণ্যের আবহ তৈরি করতে চাইলে দেয়ালে ব্যবহার করতে পারেন হালকা সবুজ রং। ঘরে আলোর প্রতিফলন বাড়াতে চাইলে দেয়ালে ব্যবহার করতে পারেন অফহোয়াইট, হোয়াইট, হালকা গোলাপী রঙগুলো।
স্পেশাল এফেক্ট ঃ দেয়ালে রং করার পর, তার উপর ‘ব্রোকেন কালার এফেক্ট’ আনা যায়। বেস কালারের উপর গ্লেজ (পাতলা অয়েল বেসড পেইন্ট) বা ওয়াশ (পাতলা ওয়াটার বেসড পেইন্ট) নানাভাবে অ্যাপ্লাই করে এ এফেক্ট আনা যেতে পারে। যা আপনার দেয়ালে আনবে ভিন্ন মাত্রার ছোঁয়া।
টাইলস ঃ সচরাচর বাথরুম ও রান্না ঘরে টাইলস ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে সাদা, গোলাপী, মেরুন, সবুজ রঙগুলো বেছে নিতে পারেন। টাইলস কেনার আগে প্রয়োজনীয় মাপটা সেরে নিন। বাথরুমের দেয়ালে কতোটা উচ্চতা পর্যন্ত টাইলস বসাবেন স্থির করে নিন। বেসিনের আয়না ঘিরে সাধারনত টাইলস লাগানো হয়। কিচেন কাউন্টারের সামনের অংশটি মেপে নিন। এক্ষেত্রে রান্না ঘরের তৈজসপত্র সম্বলিত খোদাই করা টাইলস লাগিয়ে নিতে পারেন। আজকাল বাহারী রঙ ও ডিজাইনের টাইলস পাওয়া যাচ্ছে বাজারে তাই বাথরুম ও রান্নাঘর ছাড়া অন্য রুমে টাইলস লাগাতে পারেন। যেমন- ডাইনিং স্পেসে যে দিকের দেয়ালে ওয়াশ বেসিন, তার উল্টো দিকের দেয়ালে একই টাইলস বসাতে পারেন। মোটিফ দেয়া টাইলস দিয়ে সাজিয়ে তুলুন ডাইনিং স্পেস। সম্পূর্ণ ফ্লোরাল টাইলসও ব্যবহার করতে পারেন। আবার মাছ, ঝিনুক, নৌকা, সূর্যের মোটিফ আঁকা টাইলস ঘর সাজাতে কাজে লাগাতে পারেন। সাদা বা অফ হোয়াইটের ওপর হলুদ, কমলা, বাদামি, নীল, আকাশী রঙে আঁকা এসব টাইলসের ব্যবহারে আপনার ঘরের চেহারাই পাল্টে যাবে।
সোনামনির ঘর ঃ সব ঘরের দেয়াল সাজাবেন আর সোনা-মনির ঘরের দেয়ালটা ফাঁকা থাকবে তাই কি হয়। কার্টুনের পোকা আপনার সোনামনিটির দেয়ালে মিকি মাউস, ডোনাল ডাক কিংবা টম অ্যান্ড জেরির কার্টুন একে দিতে পারলে, একবার ভাবুনতো, কি খুশিই না হবে আপনার সোনা মনি। শুধু শিশুরা নয়, টিনএজার এমনকি বড়রাও অনেক সময় এ সব চরিত্রের বেশ ভক্ত হয়ে পড়েন। হলুদ, কমলা, নীল, গোলাপী, বেগুনি রং দিয়ে এই সব ছবি এঁকে নিতে পারেন।
দেয়ালে চিত্র কর্ম
প্রথমে একটি বেস রং করে নিন। এর ওপর পেইন্টিং করুন। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে রং পাবেন কোথায়? পেইন্টিং-এ রং এর জন্য বাড়ি রং করার সময় বেঁচে যাওয়া রং রেখে দিন। আর গাঢ় রং যেগুলো বেশি প্রয়োজন হবে সেগুলো কিনে নিতে পারেন। দেয়াল যদি ছোট হয় তবে ছবি আঁকার রংও ব্যবহার করতে পারেন। মূল কিছু রং এর সাথে বেঁচে যাওয়া পুরনো রং মিলিয়ে মিশিয়ে বিভিন্ন শেড তৈরি করে নিতে পারেন।
দেয়াল চিত্রকর্মের কৌশল
যে ছবি আঁকতে চান সেটি আগে কাগজে এঁকে নিন। এবার এর উপর স্কেল-পেন্সিল দিয়ে ঘর কেটে নিন। গোটা ছবিটার কোন অংশ কোন ঘরে পড়েছে ভাল করে লক্ষ্য করুন। এবার দেয়ালে চক দিয়ে বড় মাপের ঘর কাটুন। একটু একটু করে ছবিটা ট্রান্সফার করুন দেয়ালে। আউটলাইন আঁকা হয়ে গেলে পেইন্ট করুন। পেইন্ট শুকিয়ে গেলে ভিজে কাপড় দিয়ে চকের দাগ মুছে নিন।
রং নির্বাচন
বাজারে মূলতঃ তিন ধরনের রং পাওয়া যায়। ১. ডিস্টেম্পার ২. অ্যাক্রিলিক ইমালশন ও ৩. প্রিমিয়াম কোয়ালিটি পেইন্টস। এর মধ্যে সবচেয়ে ভাল ফিনিশযুক্ত ও কিঞ্চিত বেশি দামের রং হল প্রিমিয়াম কোয়ালিটি পেইন্ট। সবচেয়ে খারাপ হচ্ছে ডিস্টেম্পার। রং অবশ্যই আপনি আপনার বাজেট অনুযায়ী কিনবেন। তবে এ ক্ষেত্রে কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে।
০ ঘর, নিচু ছাদ হলে হালকা প্যাস্টেল রং ব্যবহার করুন। এতে ঘর বড় উজ্জ্বল দেখাবে।
০ আমাদের দেশের আবহাওয়া অনুযায়ী গাঢ় রং ব্যবহার না করাই ভাল। গাঢ় রং যদি করতেই হয় এক্ষেত্রে ড্রয়িং বা ডাইনিং রুমের দেয়ালে গাঢ় শেড ব্যবহার করতে পারেন।
০ আপনার ঘরে ডার্ক উড অর্থাৎ যে সব আসবাবের রং গাঢ় ও অন্ধকার তাদের সে সব ঘরে অবশ্যই হালকা রঙ ব্যবহার করতে হবে।
০ উড প্যানেলিং ঃ যাদের ঘরে জমকালো আসবাব রয়েছে তারা পুরো দেয়ালে উড প্যানেলিং করতে পারেন। তিনফুট অবধি প্যানেলিং করে তার ওপরে ওয়াল পেপার দিয়ে দিতে পারেন।
ব্রিক টাইলস ক্ল্যাডিং ঃ দেয়ালে ইটের আকারে তৈরি টেরাকোটা টাইলস বসিয়ে ব্রিক টাইলস ক্ল্যাডিং করা হয়। এতে করে দেয়ালে নতুন মাত্রা যোগ হয়।
দেয়াল সজ্জা
বিভিন্ন পেইন্টিংস, ওয়াল পেপার, মাটির ঝুলানো পাত্র ইত্যাদি দিয়ে আপনার সাদা-মাটা দেয়ালটিতে দিতে পারেন শৈল্পিক ছোঁয়া। দেয়ালে রঙের সাথে সামঞ্জস্য রেখে পেইন্টিংস বা ওয়াল পেপার বাছাই করুন। ঘর যদি ছোট হয় সে ক্ষেত্রে ঢাউস একটা চিত্রকর্ম যেমন মানানসই হবে না তেমনি বড় ঘরে ছোট্ট একটি চিত্রকর্ম রাখলেও তা অসামঞ্জস্যপূর্ণ দেখাবে।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, মার্চ ১৬, ২০১০
Leave a Reply