ফ্যাশনের অনুষঙ্গ হিসেবে নখ রাঙানোর প্রতি মেয়েদের বরাবরই একটা বিশেষ দুর্বলতা আছে। নিজের নখগুলো রাঙিয়ে সবার কাছে দৃষ্টিনন্দন করে তুলতে মেয়েরা ভীষণ পছন্দ করে; আবার পাশেই কোনো মেয়ের নেইলপলিশটি আড়চোখে দেখে নিয়ে রংটা কেমন লাগছে, তা মনে মনে যাচাই করে নিতে একদণ্ড দেরি হয় না কোনো মেয়েরই। নখ রাঙানোর এ ফ্যাশন-চাহিদার জোগান দিতে কত রঙেরই না নেইলপলিশের আবির্ভাব—যার চল আবার সময়ের সঙ্গে পরিবর্তনশীল।
চলতি ফ্যাশনে নেইলপলিশের রঙে এসেছে নতুনত্ব। যেমন, কালো রঙের নেইলপলিশ অনেকেরই নখে লক্ষ করা যাচ্ছে। প্রচলিত রংগুলোর বাইরে এ নতুন ধারা প্রসঙ্গে বিউটি স্যালন রেডের কর্ণধার আফরোজা কামাল বলেন, ‘ট্রান্সপারেন্ট অর্থাত্ স্বচ্ছ নেইলপলিশ, ফ্রেঞ্চ মেনিকিউরের মতো হালকা রঙের পর এখন গাঢ় রঙের চল হয়েছে নেইলপলিশে। কালো, সবুজ, নীল, মরিচ লালের মতো চোখটানা রংগুলো বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। তবে সব বয়সী নয়, দেখার মতো এ রংগুলোর সমাদর টিনএজার আর ফ্যাশন-সচেতন তরুণীদের কাছেই বেশি। আবার মডেলরা বা যাঁরা কমবেশি ফ্যাশন দুনিয়ায় সম্পৃক্ত আছেন, তাঁদের নখে দেখা যাচ্ছে এসব রং।’
সবুজ ও সবুজের শেডগুলো, উজ্জ্বল নীল, গাঢ় নীল, ফিরোজা, টকটকে গাঢ় লাল, বেগুনি এবং বিশেষ করে কালো রং বেশ শোভা পাচ্ছে ফ্যাশন-প্রিয় তরুণীদের নখে। পার্টিতে যেতেই মূলত নখে পরা হচ্ছে এসব রং, আবার ফ্যাশন সচেতন শিক্ষার্থীরা হয়তো ক্যাম্পাসে যেতে এমনই পরছেন।
আফরোজা কামাল জানান, পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে যে এ রংগুলো নখে লাগানো হচ্ছে তা কিন্তু নয়। বরং নখকে আলাদাভাবে ফ্যাশনেবল করে তুলতেই এসব রঙের নেইলপলিশের ব্যবহার লক্ষ করা যাচ্ছে।’ অর্থাত্ নেইলপলিশ হবে পোশাকের রঙের ওপর নির্ভরশীল—এ ধারণার বাইরে এসে দেখা সব রঙে নখ রাঙানোটা এখন নিজেই আলাদা একটা ফ্যাশন হয়ে উঠছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থী সাজিয়া হায়দারকে দেখা গেল নখে লাগিয়েছেন বেগুনি রঙের নেইলপলিশ। তিনি বললেন, ‘বাজারে এখন অনেক ব্র্যান্ড এমন রঙের নেইলপলিশ নিয়ে আসছে, যা আগে কল্পনারও বাইরে ছিল। আর এ দৃষ্টি আকর্ষক রংগুলো নিজেই বেশ জমকালো। তাই এ রঙের সব নেইলপলিশ এখন আর একসেসরিজ হিসেবে কোনো কিছুর সঙ্গে ম্যাচ করতে নয়, বরং অন্য রঙে নিজেকে একটু আলাদা করতে নতুন একটা স্টাইলের জন্য মাঝেমধ্যে নখে পরি।’
নেইল আর্টেও জায়গা করে নিয়েছে রংগুলো। আফরোজা জানান, পুরো নখে গাঢ় রঙের কোটিং দিয়ে নখের সামনের অংশে নানা স্টোন, তারকা, গোলচে ইত্যাদি নানা নকশা ব্যবহার করছে মেয়েরা। আবার এসব গাঢ় রঙের সঙ্গে অন্য রং ব্যবহারেও হচ্ছে নেইল আর্ট। তবে বাসায় না করে অভিজ্ঞ হাতের সাহায্য নিয়েই নেইল আর্ট করলে ভালো হবে। শুধু নকশায় সচেতন হলেই চলবে না, শখের রংটি যে নখে পরবেন, তারও তো পরিচর্যা হওয়া চাই ঠিকভাবে। আফরোজার পরামর্শ, তিন-চার দিন পর নেইলপলিশ রিমুভার দিয়ে ভালো করে রং তুলে ফেলুন। নখে একটা রং বেশি দিন না পরে থাকাই ভালো। এর দুদিন পর আবার নেইলপলিশ পরতে পারেন। চাইলে মাঝের এ দুদিন নখে স্বচ্ছ নেইলপলিশ দিয়ে রাখতে পারেন।
গাঢ় নেইলপলিশ যেমন, কালো রঙের একটা সমস্যা হলো—সেটা তুলতে গিয়ে রংটা ছড়িয়ে যায়, তাই নখের কোণে ও ধারগুলোয় কালচে দাগ বসে যেতে পারে। তাই কালোর ক্ষেত্রে পলিশ তুলে একবার হাতে মেনিকিউর করে নিন। পরে আবার পলিশ লাগান। প্রথমে স্বচ্ছ পলিশের একটা প্রলেপ দিয়ে তারপর টপ-কোট হিসেবে কালো নেইলপলিশ ব্যবহার করতে পারেন।
নখের ওপরে একটা প্রটেকটিভ লেয়ার বা রক্ষাকারী স্তর থাকে, যেটি বেশি রিমুভার ব্যবহারে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাতে নখ হারায় তার প্রাকৃতিক মসৃণতা। তাই নখের যত্নে আফরোজার পরামর্শ, রাতে নখে ক্রিম, ভ্যাসলিন লাগিয়ে ঘুমান। এতে সারা রাত নখ নরম থাকবে। সপ্তাহে দুবার গরম পানিতে লেবুর রস ও শ্যাম্পু দিয়ে হাত ভিজিয়ে রেখে ধুয়ে ফেলুন। নখের হলদে দাগ তুলতে লেবুর রস খুবই উপকারী। ভঙ্গুর নখ যাঁদের, তাঁরা বাজারে খুঁজে নিতে পারেন এমন নেইলপলিশ, যাতে আছে নেইল হার্ডনার। এটি নেইলপলিশ লাগানোর আগে নখে ব্যবহার করুন।
মানানসই আকৃতির নখ রাখলে তাতে আপনার পছন্দের নেইলপলিশটি হাতের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিতে পারে বহুগুণে। যাঁদের আঙুল লম্বা, তাঁরা চার কোনা আকৃতির নখ রাখলে ভালো লাগবে। আবার ইউ-শেপটা একটু খাটো ও মোটা আঙুলের জন্য অধিক মানানসই, এতে আঙুলে লম্বাটে ভাব আসে—বলেন আফরোজা।
নখের সঙ্গে সঙ্গে এত শখের নেইলপলিশটিকেও যত্নে রাখুন। ব্যবহারের সময় বোতলের মুখ খুলে না রেখে কিছু একটা দিয়ে ঢাকা দিন। বোতলের ভেতরের নেইলপলিশের সঙ্গে বাতাসের সংস্পর্শ যতটা সম্ভব কমানোর চেষ্টা করুন। না হলে পলিশ ঘন হয়ে যেতে থাকে। এভাবে অন্তত মাস তিনেক একটা নেইলপলিশ ভালো রাখা যায়। অনেক দিনের নেইলপলিশ ব্যবহারের আগে বুঝে নিন, সেটা ভালো আছে কি না। তরল নেইলপলিশ ওপরের দিকে পাতলা আর নিচের দিকে ঘন দুই ভাগ হয়ে গেলে বুঝতে হবে, সেটি আর ব্যবহারের উপযোগী নেই।
রং বাছাই তো আপনার মনের পছন্দ। তবে ফ্যাশনটা যদি হয় ঠিকঠিক জায়গামতো, তবেই সেটা সবচেয়ে উপযুক্ত হয়। তাই আফরোজার মতে, টিনএজারদের ক্ষেত্রেই নেইলপলিশের এ ধরনের রঙের ফ্যাশনটা সবচেয়ে বেশি মানানসই, কারণ তাদের এ উদ্যম বাঁধভাঙা বয়সটিতে যেকোনো কিছুই মানিয়ে যায়। বাকিরা পার্টিতে, রোজকার ব্যবহারে এমনই পরতে পারেন। তবে কর্মজীবী নারীরা অবশ্য নিজেদের ব্যক্তিত্বের খাতিরেই কর্মক্ষেত্রে ফরমাল পোশাকের সঙ্গে এসব রং এড়িয়ে চললে ভালো হয়। তাঁদের জন্য কমনীয় হালকা রংগুলো যেমন—স্বচ্ছ, ফ্রেঞ্চ মেনিকিউর, ত্বকরঙা নেইলপলিশ মানানসই ও সুন্দর অভিরুচির পরিচায়ক।
ফারাহ শাম্মা
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মার্চ ১৬, ২০১০
Leave a Reply