পক্ষাঘাতগ্রস্ত বা প্যারালাইসিসকে অনেকে অভিশাপ মনে করে। এটি আসলে অভিশাপ নয়, রোগ। এ রোগের অনেক কারণ থাকতে পারে। যেমন মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, মস্তিষ্কে আঘাতজনিত রক্তক্ষরণ অথবা মেরুরজ্জুতে বড় ধরনের আঘাত।
এ ছাড়া মস্তিষ্কে টিউমার বা যেকোনো স্মায়ু বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও শরীরের বিভিন্ন অংশ পক্ষাঘাতগ্রস্ত হতে পারে। কারণ যা-ই হোক, পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগী তার শরীরের আক্রান্ত অংশটির কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত পক্ষাঘাতগ্রস্ততায় সাধারণত রোগীর এক পাশ অবশ হয়ে যায়। স্বাভাবিক চলাফেরার ক্ষমতা হারিয়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে কথা বলতে পারে না, খেতে পারে না, এমনকি প্রস্রাব-পায়খানাও আটকে রাখতে পারে না। রোগী ও তার আত্মীয়স্বজন স্বভাবতই মুষড়ে পড়ে, হয়ে যায় আশাহত। কিন্তু সঠিক পদ্ধতিতে চিকিৎসা করালে এ ধরনের রোগীও সুস্থ হয়ে উঠতে পারে। এ জন্য প্রথমেই পক্ষাঘাতগ্রস্ততার আসল কারণ বের করতে হবে।
পক্ষাঘাতগ্রস্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রোগীকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ), হৃদরোগী হলে করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) সুবিধাসম্পন্ন হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে। রক্তক্ষরণ, উচ্চ রক্তচাপ অথবা বহুমূত্র রোগের যথাযথ চিকিৎসার সঙ্গে রোগীকে ইনটেনসিভ ফিজিওথেরাপি দিতে হবে। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত রোগীর বেশির ভাগই শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে থাকে। তাই সঙ্গে সঙ্গে রেসপিরেটরি ফিজিওথেরাপি শুরু করতে হবে। আক্রান্ত অবশ অংশের ফিজিওথেরাপিও সঙ্গে সঙ্গেই শুরু করতে হবে।
কত দিন ফিজিওথেরাপি নিতে হবে
পক্ষাঘাতগ্রস্ত ব্যক্তি বা তার স্বজনদের প্রথম জিজ্ঞাসাই থাকে, কত দিন ফিজিওথেরাপি নিতে হবে? এর উত্তর দেওয়া আসলে সহজ নয়। এ ক্ষেত্রে রোগী কতটুকু আক্রান্ত হয়েছে, সেটাই বিবেচ্য। তবে কয়েক মাস থেকে কয়েক বছর পর্যন্ত পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকতে হয়। রোগীর ক্রমোন্নতির সঙ্গে সঙ্গে বিশেষজ্ঞ সিদ্ধান্ত নেবেন কী ধরনের ফিজিওথেরাপি প্রয়োজন। একটি কথা বিশেষভাবে উল্লেখ্য, পক্ষাঘাতগ্রস্ত লোকের সুস্থতার জন্য রোগী ও তার আত্মীয়স্বজনের সদিচ্ছা ও সহযোগিতা খুবই প্রয়োজন। হঠাৎ করে
এ ধরনের রোগীর সুস্থ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। তাই দীর্ঘ মেয়াদে ফিজিওথেরাপি ও অন্যান্য চিকিৎসা একসঙ্গে চালিয়ে যেতে হবে।
ডা· মোহাম্মদ আলী
বিভাগীয় প্রধান, ফিজিওথেরাপি বিভাগ, উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ফেব্রুয়ারী ১১, ২০০৯
Leave a Reply