এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় আমাদের চলাচল করতেই হয়। বিপুল জনগোষ্ঠীর চলাচলের জন্য যানবাহন হয়েছে প্রচুর। রিকশা, ভ্যান, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মিশুক, টেম্পো, ট্যাক্সি, মাইক্রোবাস, বাস, ট্রাক, রেলগাড়ি-কত কি! একই সময়ে অধিক যানবাহনের উপস্থিতির কারণে শহরাঞ্চলের রাস্তায় যানজট আজকাল নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। অনেক সময় হাইওয়েতেও লেগে যায় যানজট। আর বেশির ভাগ সময়ই এই যানজটের জন্য আমরা-কি যাত্রী, কি পথচারী, কি রাস্তার পাশের বাসাবাড়ি বা অফিস-আদালতের মানুষ-পড়ে যাই মহা ঝঞ্ঝাটে।
বিরক্তির একশেষ! কখন পৌঁছাব গন্তব্যে, ঠিক নেই। মেজাজ খারাপ হয়, খিটখিটে হয়। পায়ের রক্ত মাথায় ওঠে!
যানজটের কারণে টেনশন বাড়ে। বাড়ে হৃৎস্পন্দন আর রক্তচাপ। যানজটের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা বেড়ে যায় তিন গুণ। বিশেষ করে নারী ও ষাটোর্ধ্ব বয়সী মানুষের।
নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনের সাম্প্রতিক সংখ্যায় এ তথ্যটি প্রকাশিত হয়েছে। এটি হতে পারে স্ট্রেসের জন্য, হতে পারে বায়ুদূষণের জন্য।
যানজটের কারণে যানবাহন থেকে নির্গত ধোঁয়া, গ্যাস ও অন্যান্য ধূলিকণা পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত করে। শব্দের ফলেও দূষিত হয় পরিবেশ। ফলে মানুষের শরীরে দেখা দেয় নানা সমস্যা।
যানবাহনের ধোঁয়া আর ধুলার কারণে হাঁচি-কাশি হতে পারে। নাক ঝরতে পারে। সাইনোসাইটিস হতে পারে। শিশুদের মধ্যে কাশি হওয়ার ঝুঁকি বড়দের চেয়ে বেশি। পরে ব্রংকাইটিস ও হাঁপানির আশঙ্কা বেড়ে যায়। ফুসফুসে ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা যথেষ্ট। যানবাহনের ধোঁয়ার সিসা শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। ফলে তাদের বুদ্ধিমত্তা কম হয়।
ইতালির নেপলস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড· মাইকেল ডি রোজা দেখেছেন, দীর্ঘদিন যানবাহনের ধোঁয়ার সংস্পর্শে থাকলে পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা কমে যেতে পারে।
যানবাহনের ধোঁয়ার নাইট্রোজেন অক্সাইড আর সিসার জন্য পুরুষের শুক্রাণুর গুণগত মান খারাপ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা থাকে।
যানজটে আটকা পড়ে জরুরি চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হয় অনেক রোগী। অনেক সময় মারাত্মক অসুস্থ রোগী যানজটের কবলে পড়ে প্রাণ হারায় রাস্তায়ই। হাসপাতালে পৌঁছারই সুযোগ হলো না। আসন্নপ্রসবা নারীর সন্তান প্রসব হয় যানজটে গাড়িতেই! দেরি সয় কাঁহাতক? মা ও নবজাতকের স্বাস্থ্য হুমকির মুখে।
শব্দদূষণের জন্য মানুষ অসুস্থ হয় শারীরিক ও মানসিকভাবে। এ সবই হতে পারে যানবাহনের যাত্রীর, পথচারীর, আশপাশের বাসাবাড়ির বা অফিসের লোকজনের। তাই যানজটের এই ঝঞ্ঝাটে থেকে মুক্তিটা জরুরি।
ডা· মো· শহীদুল্লাহ
সহযোগী অধ্যাপক, কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগ
কমিউনিটি বেজ্ড মেডিকেল কলেজ, ময়মনসিংহ
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ফেব্রুয়ারী ১১, ২০০৯
Leave a Reply