বিয়ে, বৌ-ভাত, জন্মদিন, বিবাহ বার্ষিকী, সংবর্ধনাসহ প্রভৃতি অনুষ্ঠান-উৎসব আমাদের সংস্কৃতিতে সব সময়ই হয়ে থাকে। এসব উৎসব অনুষ্ঠানে আমরা একে অন্যকে নিমন্ত্রণ করি। আর এ নিমন্ত্রণ করতে গিয়ে আমাদের কিছু ঝামেলা পোহাতে হয়। নিমন্ত্রণ নিয়ে কিছু সাধারণ নিয়ম নীতি রয়েছে, যা জেনে রাখা খুবই জরুরি।
নিমন্ত্রণে যা করতে হবে
নিমন্ত্রণের আগে ভালো করে করতে হবে যে কতজন অতিথিকে নিমন্ত্রণ করা হবে। কাউকে যাতে বাদ দেয়া না হয় সেদিকে নজর দিতে হবে। প্রয়োজন মাফিক নিমন্ত্রণ পত্রের অর্ডার দিতে হবে।
বিয়ের মত বড় কোনো উৎসবে একটু বেশি সময় নিয়ে নিমন্ত্রণ করতে হয়। সংবর্ধনা, জন্মদিন, বিবাহ বার্ষিকী ইত্যাদি অনুষ্ঠানে কমপক্ষে দুই সপ্তাহ আগে নিমন্ত্রণ করা উচিত। চায়ের আড্ডা, ডিনারে অথবা ঘরোয়া কোন উৎসব ৫-৭ দিন সময় হাতে রেখে নিমন্ত্রণ করলে ভাল হয়।
নিমন্ত্রণ করতে গেলে পর্যাপ্ত সময় হাতে রাখুন। কোন প্রকার তাড়াহুড়ো করার প্রয়োজন নেই। কারণ তা অতিথিদের নিকট অপমানজনক মনে হতে পারে।
নিমন্ত্রণে একটি বড় জায়গা দখল করে আছে আন্তরিকতা। আন্তরিকতার সাথে নিমন্ত্রণ করলে একজন ব্যক্তি নিজেকে অতিথি হিসেবে অনুভব করে।
নিমন্ত্রণ করার সময় নিমন্ত্রণ পত্রে অতিথি সদস্য সংখ্যা সম্পর্কে নিমন্ত্রিতদের বুঝিয়ে দিতে হবে। এতে কোনো প্রকার ঝামেলা সৃষ্টির সুযোগ থাকবে না।
নিমন্ত্রণের সময় অনুষ্ঠানের ধরন সম্পর্কে অতিথিদের অবগত করুন। যেমন- বিয়ে, জন্মদিন, বৌভাত, সংবর্ধনা ইত্যাদি।
নিমন্ত্রণ পত্রে ভাষা ও সৌন্দর্যের উপর বিশেষ জোর দিতে হবে। কারণ এতে নিমন্ত্রণকারীর রুচির পরিচয় পাওয়া যায়।
নিমন্ত্রণের সময় অনুষ্ঠান ও রিসেপশন সম্পর্কে অতিথিকে বুঝিয়ে দিতে হবে। প্রয়োজনে নিমন্ত্রণ পত্রের সঙ্গে রিসেপশন কার্ডটি অ্যাটাচড করে দিতে পারেন।
বয়স্ক অতিথিদের আলাদা করে নিমন্ত্রণ করা উচিত। কারণ এতে নিমন্ত্রণের গুরুত্ব বাড়ে।
নিমন্ত্রণে যা করবেন না
নিমন্ত্রণের সময় নিয়ে কোনো প্রকার দ্বন্দ্ব রাখা উচিত নয়। দুপুরে অনুষ্ঠান নাকি রাতে অনুষ্ঠান নিমন্ত্রণ পত্রে তার পরিষ্কার উল্লেখ থাকা উচিত, তা না হলে চায়ের আড্ডায় অনেকে ডিনারের প্রস্তুতি নিতে পারেন।
নিমন্ত্রণের সময় বাড়িতে গিয়ে নিমন্ত্রণ করা সম্ভব না হলে ডাকে নিমন্ত্রণপত্র পাঠিয়ে দিন। শুধু তাই নয়, প্রয়োজনে ফোনে যোগাযোগ রাখতে পারেন।
একই সাথে অনেক বন্ধুকে নিমন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে। নিমন্ত্রণে কাউকে ‘বিশেষ’ আর কাউকে ‘শুধু’ নিমন্ত্রণ করা ঠিক না। এতে অনেকে নিজেকে গুরুত্বহীন মনে করতে পারে।
নিমন্ত্রণপত্রে নিমন্ত্রিতদের নাম, ঠিকানা ইত্যাদি বিষয় সংক্ষিপ্ত কোনরূপ দেয়া যাবে না। পুরোপুরি উল্লেখ করতে হবে। এতে নিমন্ত্রণের পরিচ্ছন্নতা বৃদ্ধি পায়।
নিমন্ত্রণ করার পরামর্শ
কাউকে নিমন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে নিচের বিষয়গুলো খেয়াল রাখুন। অতিথিদের নাম, অনুষ্ঠানের ধরন, পার্টির ধরন, তারিখ, সময়, পার্টি কোথায় হবে এবং ঐ স্থানের ম্যাপ, যাবতীয় তথ্যাবলী, যোগাযোগের ঠিকানা ও ফোন নম্বর।
নিমন্ত্রণ গ্রহণের পরামর্শ
আপনাকে যখন নিমন্ত্রণ করা হবে সেটি আন্তরিকভাবে গ্রহণ করুন। নিমন্ত্রণপত্র পেয়ে যদি যেতে না পারেন তাহলে দুঃখ প্রকাশ করতে ভুলবেন না।
নিমন্ত্রণকারীর কাছ থেকে আপনি নিমন্ত্রণের সময়, তারিখ এবং অনুষ্ঠানটি কোথায় হবে সে সম্পর্কে জেনে নিন যাতে আপনার সুবিধা হয়।
আর যদি জন্মদিনের অনুষ্ঠান হয় তাহলে জেনে নিন বাচ্চার বয়স কত। তাহলে আপনার গিফ্ট সংক্রান্ত পরিকল্পনা করতে সুবিধা হবে।
মারুফ কিবরিয়া রিয়ে
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, মার্চ ০৯, ২০১০
Leave a Reply