বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ঋতু বদল মানেই কিছুদিন পরপর সর্দি, কাশি, জ্বর আর এর সাথে গলায় ব্যথা, পেট খারাপ তো আছেই। মোট কথা বাচ্চাদের একেবারেই নাজেহাল অবস্থা। তবে ভয়ের কিছু নেই। একটু সতর্ক থাকলে ঋতু বদলের এই সাময়িক সমস্যা খুব সহজেই মোকাবেলা করা সম্ভব। এজন্য প্রত্যেক বাবা-মা’কে সচেতনতার সাথে সাথে সাধারণ কিছু প্রতিরোধ সম্পর্কেও জানতে হয়।
প্রত্যেক ঋতু বদলের সূচনা ঘটে তাপমাত্রা উঠানামার মধ্য দিয়ে। তাপমাত্রার এরূপ পরিবর্তনের সময় নানা ধরনের ভাইরাসের আবির্ভাব ঘটে। শিশুরা শারীরিক দিক থেকে কিছুটা সেনসিটিভ হয় বলে এ ভাইরাসগুলো সহজেই শিশুদের প্রভাবিত করে। এক্ষেত্রে নবজাতক শিশুরা বেশি প্রভাবিত হয়। তবে সব বয়সের মানুষেরাই এ ঋতু বদলের সময়ে কম বেশি আক্রান্ত হন।
সর্দি-কাশি
বাচ্চার একটা বড় সমস্যা হলো- সর্দি-কাশি। কারণ এ সমস্যাটি খুব সহজে ছেড়ে যেতে চায় না। ঔষধের পর ঔষধ খাওয়ানো হলেও ঔষধ বন্ধ করা মাত্রই কাশি শুরু হয়ে যায়। বাচ্চা কাশি দিতে দিতে বমি পর্যন্ত করে ফেলে, ভোর রাতে ঘুম ভেঙ্গে যায়। এ সময়ে বাচ্চার মেজাজ খিটখিটে থাকে। তবে একটু মেনে চললে সর্দি-কাশি থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব।
প্রতিকার
০ সন্ধ্যার সময় বাচ্চাকে বাইরে থাকতে না দিয়ে বিকেল হতেই ঘরে ফিরিয়ে আনতে হবে। ঘরের ময়লা, ঝুল ইত্যাদি পরিষ্কারের সময় বাচ্চাকে অন্য ঘরে রাখুন এবং সকালের দিকে ঘরের দরজা জানালা বন্ধ রাখুন।
০ বাচ্চাদের ফুলের রেণু থেকে দূরে রাখুন। কেননা ফুলের রেণুতে প্রচুর এলার্জি থাকে।
০ ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো কিছু কিছু ভাইরাসের জন্য প্রতিষেধক ভ্যাকসিন আছে। বাচ্চার বয়স ৬ মাস হলেই ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ দিতে হবে। দুটি ডোজের মাঝখানে ১ মাসের অন্তর থাকতে হয়। এরপর প্রতি বছর সেপ্টেম্বর থেকে জুলাই মাসের মধ্যে এই ভ্যাকসিনের ১টি করে ডোজ দেওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে যে সমস্ত বাচ্চাদের ব্রঙ্কিয়াল অ্যাজমা বা হার্টের সমস্যা আছে তাদের ক্ষেত্রে এই ভ্যাকসিন নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
ডায়েরিয়া
আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে রোটা ভাইরাসের আক্রমণ বেড়ে যায়। ফলে বাচ্চাদের ডায়েরিয়া হতে পারে। এই ডায়েরিয়া থেকে রেহাই পেতে বাচ্চাকে অবশ্যই এন্টি রোটা ভাইরাস ওরাল ভ্যাকসিনেশন দিতে হবে। তবে রোটা ভাইরাস ছাড়াও অন্যান্য ভাইরাস থেকেও পেট খারাপ হতে পারে। তাই এজন্য চাই সাবধানতা।
সাবধানতা ও চিকিৎসা
ডায়েরিয়া থেকে মুক্তি পেতে হলে একটু সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। বাচ্চাকে সবসময় ফোটানো পানি খাওয়ান। বাসি খাবার খেতে দিবেন না। রাস্তার খাবার ও কাটা ফল না খাওয়াই ভাল। বাচ্চার হাত সবসময় সাবান দিয়ে ধুইয়ে পরিষ্কার রাখুন।
পেট খারাপ হলে ওরাল রিহাইড্রেশন সল্ট দিতে হবে। বাড়িতে খাবার স্যালাইন না থাকলে ১ গ্লাস পানিতে ১ মুঠো চিনি, ১ চিমটে লবণ মিশিয়ে বারবার খাওয়ান। স্বাভাবিক খাবার এর সাথে চলবে। যে পরিমাণ পানি শরীর থেকে বেড়িয়ে যায় সে পরিমাণ পানির ঘাটতি এড়াতে খেয়াল রাখুন বাচ্চার ইউরিনের পরিমাণ ঠিক হচ্ছে কিনা। জরুরি অবস্থায় অবশ্যই ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।
গলায় ও কানে ব্যথা
ঋতু বদলের সময় বাচ্চাদের ক্ষেত্রে আর একটি উপসর্গ হলো গলায় ও কানে ব্যথা। নাক ও কানের মাঝে যে নলটি থাকে তা যদি কোনো কারণে আটকে যায় এবং তাতে যদি কানের ভেতর পুঁজ জমে; কানে প্রচন্ড ব্যথা হতে পারে। এছাড়া হঠাৎ তাপমাত্রার তারতম্যের কারণে ঠান্ডা লেগে বাচ্চাদের গলা ব্যথা হয়। এমন অবস্থায় বাচ্চাকে হালকা গরম পানি খেতে দিলে ভাল হয়। প্রয়োজনে গরম সেক দেওয়া যেতে পারে। কানে ব্যথার কারণ জেনে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্যারাসিটামল ড্রাগ দেওয়া যায়।
কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য
০ সর্দি-কাশি হলে বাচ্চাকে ২-৩ দিন স্কুলে না পাঠানোই ভাল। বিশেষ করে বাচ্চা যদি প্লে গ্রুপে পড়ে তাহলে স্কুলে না পাঠানোই ভাল। কেননা ওর থেকে অন্য বাচ্চার সংক্রমণ হতে পারে।
০ বাড়িতে ২টি বাচ্চা থাকলে আলাদা আলাদা প্লেটে খাবার খেতে দিন।
০ নবজাতক শিশুকে ইনফেক্টেড ব্যক্তি থেকে দূরে রাখুন। মায়ের সর্দি-কাশি হলে মুখে রুমাল বেঁধে বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ালে ভাল হয়।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, মার্চ ০৯, ২০১০
Leave a Reply