মানুষের জীবন একটাই, তাই যতোটা ভালোভাবে পারা যায় সেই জীবনকে যাপন করা উচিত। সাধারণভাবে প্রতিটি মানুষই এ কথাটির সঙ্গে একমত হবেন। কিন্তু সিগারেটপ্রেমীদের ক্ষেত্রে এ কথাটি প্রযোজ্য নয়। কারণ ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য অর্থাৎ আমাদের প্রত্যেকেরই প্রিয় এ জীবনের জন্য কতোটা মারাত্মক তা জেনেও সারা পৃথিবীতে উলেস্নখযোগ্য সংখ্যক এ নেশাটির সঙ্গে জড়িত। আর ধূমপান অর্থাৎ সিগারেট তো শুধু স্মোকারদেরই ক্ষতি করছে তা তো নয়; বরং তার চারপাশে উপস্থিত নন-স্মোকারদেরও সমানভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করছে। কাজেই মারাত্মক এ বদভ্যাসটি ত্যাগ করার চেষ্টা করুন আজই।
এমন অনেকেই আছেন যারা সিগারেট ছাড়তে চান; কিন্তু পারেন না। তাদের জন্য পরামর্শ হলো প্রথমে আন্তরিক এবং দৃঢ়ভাবেই নেশাটি ছাড়ার চেষ্টা করুন।
আর চেষ্টা করুন নিচের টিপসগুলো ফলো করারঃ
* প্রথমেই সিগারেট ছাড়ার একটি তারিখ ঠিক করুন। যদি সম্ভব হয় তাহলে একজন স্মোকার বন্ধুকেও সঙ্গী হিসেবে নিন এ সৎ উদ্দেশ্যটি সফল করতে।
* খেয়াল করুন দিনের কোন সময়ে এবং কেন আপনি সিগারেট খাচ্ছেন। সে সঙ্গে প্রতিদিনকার রুটিনে অন্য নিয়মিত কাজগুলোও খেয়াল করুন।
* আপনার স্মোকিং রুটিনটাকে পাল্টে ফেলুন। সিগারেট রাখার জায়গাটিরও পরিবর্তন করুন। স্মোক করার সময় অন্য কোনো কাজ করবেন না এবং ওই সময়ে আপনার অনুভূতি সম্পর্কে ভাবুন।
* একটি নির্দিষ্ট জায়গায় সিগারেট ধরান। ভালো হয় জায়গাটি বাড়ির বাইরে হলে।
* সিগারেট ধরানোর আগে কয়েক মিনিট অপেক্ষা করুন। ওই সময়টিতে সিগারেটের বদলে অন্য কিছু (এই যেমন চুইংগাম চিবানো, চকোলেট খাওয়া ইত্যাদি) করা যায় কি না ভাবুন।
* একবারে একটির বেশি সিগারেটের প্যাকেট কিনবেন না।
* কোনো একদিন হঠাৎ করেই আপনার সব সিগারেট ফেলে দিন। হাতের কাছ থেকে সরিয়ে রাখুন অ্যাশট্রে।
* সকালের রুটিনটি পাল্টে ফেলুন। অর্থাৎ নাশতা করার আগে বা পরে দিনের প্রথম সিগারেটটি ধরানোর সময় অন্য কোনো কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকুন।
* সারা দিনের সিগারেট খাওয়ার সময়গুলোতে চুইংগাম, হার্ড ক্যান্ডি, টুথপিক চিবানোর মাধ্যমে আপনার মুখকে ব্যস্ত রাখুন।
* সিগারেটবিহীন পুরো একটি দিন কাটাতে সফল হলে নিজেই নিজেকে পুরস্কৃত করুন, হতে পারে সেটা প্রিয় একটি মুভি দেখে বা পছন্দের কোনো খাবার খেয়ে।
* দীর্ঘদিনের বদভ্যাসটি ছাড়ার সময় সাময়িক কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে যেমন- ক্ষুধা, ঘুম বেড়ে যাওয়া, সিগারেটের প্রতি আকর্ষণ আরো বেড়ে যাওয়া, মেজাজ খিটমিটে হওয়া ইত্যাদি। ঘাবড়াবেন না, এগুলো অতি সাময়িক সমস্যা। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই কেটে যাবে।
* স্মোকিং ছাড়ার সময়কার সমস্যাগুলোর দ্রুত সমাধানে হালকা ব্যায়াম করতে শুরু করুন। হতে পারে সেটা হাটা বা সাইকেল চালানো।
* সিগারেট ছাড়ার পজিটিভ দিক সম্পর্কে ভাবুন। যেমন ধরুন, আপনাকে নন-স্মোকার, ফ্রেশ দেখলে আপনার প্রিয়জনরা নিশ্চয়ই আনন্দিত হবে এবং তারা অন্যদের সামনে আপনাকে উদাহরণ হিসেবে উপস্থাপিত করবে।
* স্মোকাররা সাধারণত টেনশনের সময় বেশি করে সিগারেট খায়। কাজেই ওই সময়গুলোতে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন, সিগারেট না খেয়ে টেনশনের কারণ এবং সমাধানের উপায় সম্পর্কে ভাবুন।
* প্রতিদিনকার রুটিন খাবারগুলো সময়মতো খান, কারণ ক্ষুধাবোধ সিগারেটের তৃষ্ণাকেও বাড়িয়ে দেয়।
* একটি মাটির ব্যাংক বা টাকা রাখার বাক্স কিনুন। সিগারেট না কিনে যে টাকাগুলো বেচে যাচ্ছে সেগুলো ওখানে সঞ্চয় করুন।
* অন্যদের কাছে আপনার সিগারেট ছাড়ার গল্প বলুন। দেখবেন সবাই আপনাকে বাহবা দিচ্ছে। স্মোকার বন্ধুদেরও নিজের কথা বলে সিগারেট ছাড়তে উৎসাহিত করুন।
* সিগারেট ছাড়ার প্রথম উদ্যোগে ব্যর্থ হলে হতাশ হবেন না। কারণ এ নেশা থেকে বের হয়ে আসতে সড়্গম হয়েছেন এমন অনেকেই কয়েকবার ব্যর্থ চেষ্টার পরই সফল হয়েছেন। কাজেই দু-একবারে সিগারেট ছাড়তে ব্যর্থ হলে ‘আমার দ্বারা হবে না’ এ রকমটি ভেবে মহৎ এ উদ্যোগটি চিরদিনের মতো শেষ করে দেবেন না।
ধূমপান বিষপান – কথাটি বিশ্বাস করুন মনে-প্রাণে। এই বিষ থেকে নিজেকে রক্ষা করুন, চারপাশের মানুষকেও মুক্তি দিন।
লেখকঃ তারানা নাশিদ
দৈনিক যায়যায়দিন, নভেম্বর ২০০৭ এ প্রকাশিত
Leave a Reply