হাইলাইটস
- ভয়ানক শক্তিশালী এবং অত্যাচারী রাক্ষস কুম্ভকর্ণ যখন ব্রহ্মার তপস্যা করছিলেন তখন দেবতারা প্রমাদ গোনেন এমন ভয়ানক রাক্ষস যদি অমর এবং আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে তাহলে তো ধরাধামে কেউ টিকবে না।
- বিপদ হবে দেবতাদেরও। তাই ব্রহ্মাকে বর না দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন সকল দেবতা। কিন্তু ব্রহ্মার উপায় নেই।
সঠিক সময়ে ব্রহ্মা কুম্ভকর্ণকে বর দেওযার জন্য প্রস্তুত হলেন। কথা ছিল তাঁর কাছে অমরত্ব এবং আরও শক্তির বর চাইবেন রাবণের মেজোভাই। যেই না নিজের মনের ইচ্ছে ব্রহ্মাকে জানাতে যাবেন তখন দেবী সরস্বতী তাঁর কৌশল চালাল। ভর করেন কুম্ভকর্ণের মস্তিকে। তখন কুম্ভকর্ণ ব্রহ্মাকে বলেন তিনি ঘুমোতে বড় ভালোবাসেন। তাই বছরের মধ্যে ছয় মাসই তিনি যাতে নির্বিঘ্নে ঘুমোতে পারেন সেই বর দিন। শুনে আর সময় নষ্ট করেননি প্রজাপতি ব্রহ্মা। তড়িঘড়ি বলে ফেলেন, “তথাস্তু।” ব্যস্, রাক্ষসরাজ রাবণের বংশে যা সর্বনাশ হওয়ার তা হয়ে যায়। স্বস্তি পান দেবতা। স্বস্তি পায় মানবসভ্যতা।
কলির কুম্ভকর্ণ
হিন্দু পুরাণ এবং রামায়ণের এই গল্প লোকমুখে প্রচারিত। কুম্ভকর্ণের ঘুমের বিষয়টি তো রীতিমতো মজাদার গল্পে পরিণত হযেছে। টিভিতে কুম্ভকর্ণের ঘুমের দৃশ্য দেখে ছোটো বড় সকলেই আনন্দ পান। কেউ একটু বেশি ঘুমোলেই তাঁকে কুম্ভকর্ণের সঙ্গে তুলনা করা হয়। এরকমই এক কুম্ভকর্ণের হদিশ মিলেছে রাজস্থানের নগৌর জেলায়। সেখানকার এক গ্রামবাসী বছরের মধ্যে ৩০০ দিনই ঘুমিয়ে কাটান।
না কোনও গল্পকথা নয়, নগৌরের ভড়ওয়া গ্রামের বাসিন্দা পুরখারাম মাসে ২০ থেকে ২৫ দিনই ঘুমিয়ে কাটান। অর্থাৎ বছরে তিনি ঘুমোন প্রায় ৩০০ দিন। না, ৪২ বছরের পুরখারাম ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বরের বর পাননি। তিনি ভয়ানক অ্যাক্সিস হাইপারসোমনিয়া রোগে আক্রান্ত। তাঁর একটি মুদি দোকান আছে। ঘুমের কারণে তিনি মাসে পাঁচ দিনের বেশি দোকান খোলা রাখতে পারেন না। গ্রামের সকলেই তা জানেন।
দিনে চার মাসের ঘটনা নয়, পুরখারাম গত প্রায় ২৩ বছর ধরে এভাবে ঘুমিয়ে চলেছেন। প্রথম প্রথম বুঝতে না পারলেও পরে পুরখারামের অভ্যাসের সঙ্গে মানিয়ে নেন তাঁর বাড়ির লোক। ঘুমের মধ্যে তাঁকে স্নান করিয়ে এবং খাবার খাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন তাঁরা। পুরখারামও দিব্যি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে খাবার খেয়ে নেন। অর্থাভাব এবং সচেতনতার অভাবে এভাবে চলছে বছরের পর বছর। চিকিৎসকদের মতে তিনি অ্যাক্সিস হাইপারসোমনিয়া রোগে আক্রান্ত। এটি একটি স্নায়ুজনিত রোগ। এই রোগের প্রভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘুমিয়ে থাকে মানুষ।
ন্যাশনাল সেন্টার অফ বায়োটেকনলজি ইনফর্মেশন জার্নালের প্রকাশিত গবেষণাপত্র অনুযায়ী, এটি বিরল রোগ। একশো জনের মধ্যে চার থেকে ছয় জন Axis Hypersomnia রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। এটি প্রধানত ঘুমের রোগ। ওজন বৃদ্ধি, মাদক বা কড়া ওষুধ অথবা অ্যালকোহলের প্রভাব, মাথায় আঘাত, অবসাদ অথবা বংশগত কারণে এই রোগ হতে পারে। তবে সবাই যে মাসের মধ্যে ২৫ দিন ঘুমোবেন তা কিন্তু নয়।
রোগের লক্ষণ
ঘুম থেকে উঠতে কষ্ট হওয়া, একাধিক বার অ্যালার্ম দেওয়া সত্ত্বেও ঘুম না ভাঙা, বিছানা ছেড়ে ওঠার প্রতি অনীহা এই রোগের প্রাথমিক লক্ষণ। কারও যদি এধরনের লক্ষণ দেখা যায় তাহলে তিনি Axis Hypersomnia রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এর কারণে দিনের বেলা ঘুম পাওয়া, মস্তিষ্ক স্থবির হয়ে যাওয়া, মনোযোগ কমে যাওয়া, উদ্বেগ, অবসাদ, অস্বস্তি, হতাশা দেখা যায়।
রোগ নির্ণয়
রোগের লক্ষণগুলি যদি প্রতিদিন দেখা যায় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তিনি পরীক্ষা নিরীক্ষা করে আসল সমস্যা ধরতে পারবেন। আপনার ঘুমের যাবতীয় তথ্য নেবেন তিনি। এছাড়াও তিনি রোগীর রক্ত পরীক্ষা, সিটি স্ক্যান, মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার নির্দেশ দেন। এছাড়াও পলিসমনোগ্রাফি পরীক্ষারও নির্দেশ দিতে পারেন চিকিৎসক। চিকিৎসায় দেরি করলে কিন্তু রোগ বাড়তে পারে।
চিকিৎসা এবং প্রতিরোধ
হাইপারসোমনিয়া রোগের চিকিৎসা এবং প্রতিরোধ করা যায় অ্যান্টি ডিপ্রেশন চিকিৎসা, মেডিটেশন ইত্যাদির মাধ্যমে। কফি এবং ক্যাফেরিন জাতীয় খাবার বা পানীয় থেকে দূরে থাকুন। ঘুমের আগে অ্যালকোহল সেবন একেবারেই করবেন না। উদ্বেগ, হতাশা, অবসাদের চিকিৎসা করা একান্ত প্রয়োজন। পর্যাপ্ত ঘুম স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো। কিন্তু অস্বাভাবিক ঘুম ভয়ানক।
Health and Fitness Tips in Bengali শরীর-গতিক, Yoga and Exercise Tips in Bangla
2021-07-16 15:55:05
Source link
Leave a Reply