প্রেগনেন্সির সময় নারীর শরীরে বিভিন্ন রকম পরিবর্তন আসে। তারমধ্যে একটি পরিবর্তন হচ্ছে স্ট্রেচ মার্ক। গর্ভাবস্থায় এই ধরণের দাগ হওয়া অনিবার্য। ক্রমবর্ধমান ভ্রুনের জন্য জায়গা তৈরি করতে জরায়ু বড় হতে থাকে এবং এতে পেটের চারপাশের ত্বক প্রসারিত হয়। ত্বকের এরকম প্রসারণের ফলে ত্বকে ফাটল সৃষ্টি হওয়ার প্রবণতা দেখা যায় এবং ত্বকের কোলাজেন এই ফাটলকে পূর্ণ করতে পারেনা যার ফলে লম্বা দাগের সৃষ্টি হয়। কিন্তু এদের দৃশ্যমান হওয়ার জন্য অপেক্ষা করা এবং তারপর লেজার ট্রিটমেন্ট বা কেমিক্যাল ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে নিরাময় করার চেয়ে প্রতিরোধ করাই সবচেয়ে ভালো। গর্ভাবস্থার স্ট্রেচ মার্ক প্রতিরোধ করার উপায় সহজ কয়েকটি উপায় এখানে আলোচনা করা হল।
১। পানি
পানি শরীরকে বিষ মুক্ত হতে সাহায্য করে এবং আপনার ত্বককে স্ট্রেচের চাপকে মানিয়ে নিতে সাহায্য করে। তাই গর্ভাবস্থায় অবশ্যই ৬-৮ গ্লাস পানি পান করুন। এছাড়াও হাইড্রেটেড থাকার জন্য গ্রিনটি পান করতে পারেন। গ্রিনটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এবং ক্যাফেইন মুক্ত। পানি সমৃদ্ধ খাবার যেমন- তরমুজ, স্ট্রবেরি, শশা ইত্যাদি খাওয়া উচিৎ।
২। ভিটামিন
ভিটামিন এ, ই ও সি ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারি। ভিটামিন এ ত্বকের টিস্যুকে মেরামতে সাহায্য করে, ভিটামিন ই ত্বকের ঝিল্লিকে অক্ষত রাখতে সাহায্য করে, কোলাজেনের উৎপাদনে সাহায্য করে ভিটামিন সি। কোলাজেন ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং ত্বকের কোষের পুনর্জন্ম হতে সাহায্য করে। ওমেগা৩ ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ খাবার ও আপনার খাওয়া উচিৎ কারণ এটি শুধু আপনার ত্বকের পর্দাকে স্বাস্থ্যবান করেনা বরং আপনার ত্বককে প্রাকৃতিক, স্বাস্থ্যকর উজ্জ্বলতা দান করে। পালংশাক, স্ট্রবেরি, বাদাম, বীজ, গাজর, মিষ্টি আলু, আম, আখরোট এবং ডিমে এই সব ভিটামিন থাকে এবং আপনাকে স্ট্রেচ মার্ক মুক্ত ত্বক দিতে পারে যা গ্যারান্টি দিয়ে বলা যায়।
৩। ম্যাসাজ ও ময়েশ্চারাইজিং
গর্ভের শিশুর বেড়ে উঠার সাথে সাথে পেটে, এর চারপাশে, নীচের দিকে, উরুতে ও পায়ে চাপ পড়ে বলে এই জায়গা গুলোতে স্ট্রেচ মার্ক পড়ার প্রবণতা দেখা যায়। তাই এই স্থান গুলোতে পর্যাপ্ত ময়েশ্চারাইজার দিতে হবে। কিন্তু সাধারণ ময়েশ্চারাইজারে কাজ হবেনা। তাই তেল ব্যবহার করতে হবে। আয়ুর্বেদ মতে তিলের তেল, নারিকেল তেল ও ক্যাস্টর ওয়েল অত্যন্ত চমৎকার ভাবে ত্বককে আদ্র রাখতে সাহায্য করে। স্ট্রেচ মার্ক হওয়ার সম্ভাবনা আছে এমন স্থানগুলোতে এই তেলগুলোর যেকোনটি আস্তে আস্তে মালিশ করুন দিনে দুইবার। মনে রাখবেন খুব বেশি চাপ দেয়ার প্রয়োজন নেই, ধীরে ধীরে ঘষুন তেল মিলিয়ে যাওয়া পর্যন্ত।
৪। এক্সফলিয়েট
এক্সফলিয়েট করলে মরা চামড়া দূর হয় ও নতুন কোষ জন্মগ্রহণ করে, রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায় এবং স্ট্রেচ মার্ক গঠন প্রতিহত করে। বিশেষজ্ঞরা বলেন ত্বকের লম্বা দাগ এড়িয়ে যাওয়ার জন্য ময়েশ্চারাইজিং এর মত এক্সফলিয়েট ও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থায় এক্সফলিয়েটের জন্য শুকনো ব্রাশ দিয়ে পা থেকে উপরের দিকে ব্রাশ করুন। তারপর গরম পানি দিয়ে গোসল করে নিন। অথবা গরম পানিতে গা ভেজানোর পর ধুন্দল দিয়ে শরীর মাজুন। গোসলের পরে অবশ্যই ময়েশ্চারাইজার লাগান।
৫। ব্যায়াম
সাধারণত মনে করা হয় যে গর্ভবতী নারীর ব্যায়াম করা ঠিক নয় এবং তারা শুধু বিশ্রাম করবে। কিন্তু এটি ঠিক নয়। গর্ভবতী নারীর ব্যায়াম করা প্রয়োজনীয়। ব্যায়াম করলে অভ্যন্তরীণ জন্ম প্রক্রিয়াটি সহজ হয় এবং লেবার পেইন ম্যানেজ করতে সাহায্য করে। ব্যায়াম করলে ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বজায় থাকে, শরীরে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায় এবং অনেক বেশি অক্সিজেন গ্রহণে সাহায্য করে। অধিক অক্সিজেন ও অধিক রক্তচলাচল ত্বককে টান টান হতে সাহায্য করে যার ফলে দাগ সৃষ্টি হয়না। যদি আপনি প্রেগনেন্সির সময় ব্যায়াম করতে চান তাহলে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তারপর শুরু করুন। হাঁটা, সাঁতার কাটা, এরোবিকস ও কার্ডিওভাস্কুলার ব্যায়ামগুলো প্রেগনেন্সির সময় অনায়াসেই করা যায়। তবে পিঠে চাপ পড়ে বা বেশিক্ষণ দম বন্ধ করে রাখতে হয় এমন ব্যায়ামগুলো প্রেগনেন্সির সময় করা যাবেনা।
যদি এইসব সতর্কতা অনুসরণের পরও স্ট্রেচ মার্ক দেখা যায় তাহলে এই দাগ গোলাপি বা লাল থাকার সময় ও সামান্য ব্যথা থাকার সময়ই নিরাময়ের চেষ্টা করতে হবে। এর সবচেয়ে ভালো সমাধান হচ্ছে নারিকেল তেল ব্যবহার করা।
এস সি
স্বাস্থ্য | DesheBideshe
2021-07-14 22:17:29
Source link
Leave a Reply