আমাদের প্রাত্যহিক কাজ-কর্মে, কমিউনিকেশনে ইংরেজি বলতে পারাটা নিশ্চয়ই জরুরি। কিন্তু এই ভাষায় দারুণ পারদর্শী হতে না পারলে জীবন বৃথা বা অন্যদের চেয়ে পিছিয়ে পড়া, এমনটা ভাবার কিন্তু কোনও কারণ নেই। তরুণকণ্ঠ-এর এবারের আয়োজনে আমরা তুলে ধরতে চেষ্টা করেছি ইংরেজি বিনা জীবন শূণ্য কিনা সে বিষয়টিকে-
আলো ঝলমনে শপিংমল। কলেজ ছুটির পর বন্ধুরা বেড়াতে এসেছে। এদের সঙ্গে আছে মফস্বলের মুহিন, সদ্য রাজধানীতে এসে ‘পথের পাঁচালি’র অপুর মতো গোটা শহরটাকে পরম আগ্রহে চিনে নিতে চাইছেন তিনি। শপিংমলের এ দোকান সে দোকান চষে বেড়াচ্ছে বন্ধুরা। দিব্যি কাটছিল সময়। একটা সিডি ক্যাসেটের দোকানে ঢোকার পরই বিপত্তি। একজন সুন্দরী তরুণী মুহিনকে অ্যাকসেন্টেড ইংরেজিতে, প্রায় বিকৃত উচ্চারণে জিজ্ঞেস করেছেন, ‘ইয়েস স্যার, হোয়াট ক্যান আই গেট ফর ইউ?’ বন্ধুরা সকলেই জানে, মুহিন ইংরেজিতে বেশ কাঁচা। মানে, চলনসই ইংরেজি লিখতে পারলেও বলতে সে একেবারেই পারে না। বুঝতেই পারছেন মুহিনের অবস্থা। তিনি ঘেমে নেয়ে কোনও মতে বললেন, ‘আই অ্যাম সিইং, নট ওয়ান্ট এনিথিং!’ মেয়েটি আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল, মুহিন অবস্থা সুবিধের নয় বুঝে টুক করে কেটে পড়েছেন এবং বন্ধুদের কাছ থেকে দূরে দাঁড়িয়ে ঘটনার কথা ভেবে তার রীতিমত চোখ জল চলে এসেছে। ইংরেজি বলতে না পারার জন্যই তো তাকে এরকম হেনস্তা হতে হলো।
এরকম বিরক্তিকর অবস্থায় কি আপনারাও কখনও পড়েছেন? কখনও কি মনে হয়েছে শহরে স্মার্টলি ঘুরে বেড়ানোর পক্ষে একটাই মাত্র নিরাপদ রাস্তা আছে, সেটি হল ইংরেজিতে বাক্যালাপ করা? যদি মাথায় এই ধারণার উদয় হয়ে থাকে, তবে অনুরোধ এখনই ঝেড়ে ফেলে দিন সেসব চিন্তা। কারণ, আপনার ভাবনাটা এক্কেবারে ভুল! চলুন, কয়েকটা ব্যাপারে বেশ সহজ-সরল কিছু উপসংহারে টেনে নেওয়া যাক!
প্রথমত, ‘আমি তোমাকে চাই’ বলতে ইচ্ছে করছে? বেশ তবে তাই বলুন, ‘আই ওয়ান্ট ইউ’ কি না বললেই নয়! এটা নিছক মজা, কিন্তু এটাই আমাদের প্রথম পাঠ বলা যেতে পারে। অর্থাৎ, ইংরেজিতে কথা বলতে পারদর্শী না মাঝারি মাপের, সেটার চেয়েও বেশি জরুরি হয়ে যায়, আমরা কখন ইংরেজি ভাষা ব্যবহার করব। এ থেকে কিন্তু আমাদের মানসিকতাও ফুটে ওঠে। পরিবেশ আমাদের মাঝে মাঝেই বেশি সচেতন করে দেয়। কে যেন অদৃশ্য থেকে আমাদের কানে কানে বলে যায়, ‘আপনি এখন কফি শপে সোফায় বসে চীজ খাচ্ছেন, আপনার কি এখন বাংলায় কথা বলা মানায়! এভাবে কথা বলতে শুরু করুন, ‘আই জাস্ট লাভ টু ইট চীজ অ্যান্ড চকোলেট, উম্ম্ঃ!’ আবার সেই অদৃশ্য মানুষটি কখনও ফিস ফিস করে বলেন, ‘এখন আপনি মফস্বলের ছেলেদের সঙ্গে কথা বলছেন, ইংরেজিতে কথা বলে চমকে দিন ওদের। তবেই না আপনি হিরো।
ইংরেজি বলে নিজেকে স্মার্ট বা বেশি শিক্ষিত প্রমাণ করার চেষ্টার মতো যে বোকামো বোধ হয় আর কিছুতে নেই। দেখানেপনার জন্য ভাব মেরে ইংরেজি বলাটা কোনও কাজের নয়। এর পাশাপাশি পরিবেশের রকমফেরও আছে। ধরুন, প্রথমবার ইন্টারভিউ দিতে গিয়েছেন। প্রশ্নকর্তা কোনও বিষয়ে ইংরেজিতে জানতে চাইলেন আপনার মতামত, আপনি নিশ্চয়ই তখন বাংলায় কথা বলবেন না। অর্থাৎ, প্রয়োজনে নিশ্চয়ই ইংরেজিতে কথা বলবেন, কিন্তু স্রেফ ভাব মারার জন্য এবং নিজেকে অন্যদের চেয়ে বড় প্রমাণ করার জন্য নয়, প্লিজ! প্রয়োজনে ইংরেজি বলার কথা তো শুনলেন, কিন্তু প্রয়োজনেও যদি না পারেন? আরে এতে ভেঙ্গে পড়ার কিছু নেই। ইংরেজি বলতে না পারলে জীবন বৃথা হয়ে যায় না। মানতেই হবে বাঙালিদের ইংরেজি প্রীতিটা একটু বেশিই। ফরাসিরা কোনোদিন অপ্রয়োজনে ইংরেজিতে কথা বলছে? উঁহু, ভাবাই যায় না। কিংবা ভাবা যায়, ম্যারাডোনা স্প্যানিশ ছেড়ে ইংরেজিতে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন? মানছি বাংলা আঞ্চলিক ভাষা, বিদেশে কাজ করতে গেলে অন্যতম প্রধান ভাষাও ইংরেজি। কিন্তু, তার মানে এই নয় সে, ইংরেজিতে দুর্দান্ত না হলেই সেই মুহিন ছেলেটির মতো কান্না জুড়তে হবে। এমন অনেক কাজ নিশ্চয়ই আছে, যেখানে ইংরেজি ভাষাটার হয়তো তেমন কোনও প্রয়োজনই নেই। কিন্তু তাই বলে ইংরেজি শিখবও না, এটা কোনও কাজের কথা নয়। তা হলে চলুন জেনে নিই, ইংরেজিকে আরও মজবুত করার কিছু কৌশল। সবার আগে, কোনও ভাবেই ভেঙ্গে না পড়ে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হোন। এবার, ভাষাটার ঘাড়ে চেপে বসতেই হবে। এটাই আপনাকে অনেকখানি এগিয়ে নিয়ে যাবে। ইংরেজি বই পড়ুন এবং অচেনা শব্দ ও তার অর্থ একটি খাতায় লিখে রাখুন। এখানেই থেমে যাবেন না, নিজে সেই সব শব্দ ব্যবহার করে বাক্য লেখার চেষ্টা করুন। কাজ অবশ্যই দেবে। এছাড়া নিজের কোনও পছন্দের বিষয়ের ওপর আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে একাই ইংরেজিতে বলার চেষ্টা করুন। জড়তা কেটে যাবে। এই সব ছোট-খাট প্র্যাকটিস করতে পারলেই ব্যস, ইংরেজি আয়ত্বে আসতে বাধ্য। আজ থেকেই চেষ্টা শুরু করে দিন। হবেই হবে।
অজয় চৌধুরী
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, ফেব্রুয়ারী ২৪, ২০১০
Leave a Reply