কিডনি শরীরের বি্নয়কর অঙ্গ। বিভিন্ন অধাতু, ধাতু আর পানির যে অত্যাশ্চর্য রসায়নের ফল মানবজীবন, এর নিয়ন্ত্রণে এক বিশাল ভূমিকা রয়েছে কিডনির। আর নবজাতকের ক্ষেত্রে এ ভূমিকার ভিন্ন একটি মাত্রা আছে। নবজাতকের জন্মের আগে ভ্রূণ থাকে মাতৃগর্ভের তরল মাধ্যমে। জন্মের পর সে চলে আসে বায়বীয় মাধ্যমে। বিশাল এ পরিবর্তনকে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ছেড়ে মানুষের মহাজগতে যাত্রার সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। এ সময় দেহের সূক্ষ্ম পরিবর্তনে কিডনির ভূমিকা অতুলনীয়। শিশু জন্ম থেকেই কিডনি বা রেচন-নালির নানা সমস্যা নিয়ে জন্ম নিতে পারে।
জন্মগত কিডনির অনুপস্থিতিঃ এক থেকে দেড় হাজার লোকের মধ্যে একজন একটি কিডনি নিয়ে জন্ম নিতে পারে। জন্মের আগেই আলট্র্রাসাউন্ড পরীক্ষা করে এটা জানা যায়। তবে অস্থানিক কিডনি উপস্থিত আছে কি না, সেটা জানার জন্য ডিএমএসএ স্ক্যান করা যেতে পারে। একদিকে কিডনি অনুপস্থিত থাকলে অপর পাশে কিডনি বা বৃক্কীয় নালির (ইউরেটার) বড় ধরনের সমস্যা থাকাই স্বাভাবিক। প্রতি চার হাজারে একজন নবজাতকের দুটি কিডনিই অনুপস্থিত থাকতে পারে। পর্টার সিনড্রোম নামের এ রোগ আলট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে জন্মের আগে নির্ণয় করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে নবজাতকের জীবিত জন্ম নেওয়ার সম্ভাবনা নেই।
অস্থানিক কিডনিঃ ভ্রূণাবস্থায় নি্ন উদরের অবস্থান থেকে কিডনি জন্মের সময় ওপরে লাম্বার এলাকায় (পিঠের পেছনে) চলে যায়। কিন্তু অনেক সময় যথাযথ অবস্থানে না থেকে কিডনি নিচের (পেলভিক) বিপরীত দিকে জোড়া লাগানো (অশ্বক্ষুরাকৃতি) অবস্থায় থাকতে পারে।
ক্রসিংঃ একদিকের কিডনি অন্য পাশে গিয়ে অন্য পাশেরটির নিচে দিয়ে জোড়া লেগে যেতে পারে।
রেচন-নালির প্রসারণঃ প্রতি ৮০০ নবজাতকের মধ্যে অন্তত একজনের রেচন-নালির সমস্যা থাকতে পারে। দেখা যায় যে কোনো কোনো সময় প্রস্রাব কোনো ভাল্বের কারণে মূত্রথলি থেকে বের হতে বাধা পায়। আবার কখনো বা প্রস্রাব মূত্রথলি থেকে ওপরের দিকে ফিরে চলে যায়। এখানে কিডনি ও রেচন-নালির সংযোগস্থল অথবা রেচন-নালি অস্বাভাবিকভাবে প্রসারিত হতে পারে। পেটে চাকার সঙ্গে পেটব্যথা বা প্রস্রাবের সমস্যা হলে কিডনি রেচন-নালির সংযোগস্থলের প্রসারণজনিত সমস্যা সন্দেহ করা যেতে পারে। আলট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে এ সংযোগস্থলের ব্যাস ৫ মিলিমিটারের বেশি পাওয়া গেলেই সতর্ক হতে হবে। এ ক্ষেত্রে এমসিইউ নামে বিশেষ ধরনের এক্স-রে করে দেখতে হবে যে মূত্রথলি থেকে বের হওয়ার আগে প্রস্রাব উল্টোপথে কিডনির দিকে চলে যায় কি না।
মূত্রনালিতে কপাটিকাঃ এ সমস্যাটি চার থেকে ২৫ হাজার জনের মধ্যে একজনের দেখা যায়। মূত্রনালির পশ্চাৎ অংশে বাধার কারণে প্রস্রাব ঠিকমতো বের হতে না পেরে মূত্রথলির ওপর চাপ সৃষ্টি করে। অনেক সময় প্রস্রাব কিডনির দিকে ফিরে যায়। অনেক সময় ঘন ঘন প্রস্রাবের সংক্রমণ হয়। এটিও এমসিইউর মাধ্যমে নির্ণয় করা সম্ভব। এ ছাড়া প্রুনবেলি সিনড্রোম নামের এক বিরল রোগে পেটের মাংসপেশি ঠিকমতো তৈরি হয় না। এদের অণ্ডকোষও সঠিক জায়গায় থাকে না। প্রায়ই সব রেচন-নালি ও মূত্রথলি অস্বাভাবিক প্রসারিত থাকে। একটি নবজাতক বৃক্ক ও রেচন-নালির বহু রকম অস্বাভাবিকতা নিয়ে জন্ম নিতে পারে, যা বাইরে থেকে বোঝা মুশকিল। তবে কিছু ক্ষেত্রে এ ব্যাপারটি মাথায় রাখতে হবে। যেমন নবজাতক অস্বাভাবিক ছোট হলে, অস্বাভাবিক ফ্যাকাসে হলে, পেটে বা নি্ন উদরে চাকা পাওয়া গেলে, প্রস্রাব সব সময় ঝরলে এবং প্রস্রাব লাল হলে। সময়মতো ও সঠিকভাবে শনাক্ত করা গেলে নবজাতকের কিডনির অনেক সমস্যাই সঠিক চিকিৎসায় দ্রুত ভালো হয়।
ডা· মাহবুব মোতানাব্বি
নবজাতক ও শিশুবিশেষজ্ঞ
সহকারী অধ্যাপক
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জানুয়ারী ২৭, ২০০৯
Leave a Reply