স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে, কাঠখোট্টা আর দারোয়ানি পড়াশোনা ছাড়িয়ে বড় হওয়ার প্রথম স্বাধীনতা দেয় কলেজ। তারুণ্যের প্রথম উচ্ছ্বাসে শিহরণের বর্ণিল সময়ের অনুসন্ধান দেয় কলেজ। উচ্চশিক্ষার এই প্রথম প্রহরে যেমন থাকে আনন্দের স্বাধীনতা তেমনি থাকে হাজারটা সমস্যা। অনেকে সহজেই সামলে নিতে পারে। কিন্তু কারও কাছে ব্যাপারটা খুব কঠিন মনে হয়। মনে হয় জটিল কোন গোলকধাঁধাঁ। কলেজে বিভিন্ন বিষয়ে মানিয়ে নেওয়ার ম্যানুয়েল জানাচ্ছেন সৌরভ হাসান
বন্ধু হাতে রাখো হাত
০ জীবনে পথ চলতে গেলে বন্ধুর দরকার অবশ্যই আছে। কলেজও তার ব্যতিক্রম নয়। কলেজে যে ছেলেটি বা মেয়েটির সথে আপনার প্রথম পরিচয় হয় সে কিন্তু কখনই আপনার প্রেমিক বা প্রেমিকা নয়।এই ধারণার বাইরে এসে, ছেলে-মেয়ের তফাৎ না করে একটা স্বচ্ছ সম্পর্ক গড়ে তুলুন। মন-প্রাণ সঁপে, চোখের জলে না ভেসে খোলা মনে বন্ধুর দিকে হাত বাড়িয়ে দিন। দেখবেন প্রাণোচ্ছ্বল আড্ডার এই বয়সটা যে কত মজার সেটা সহজেই বুঝতে পারবেন।
০ স্কুল যদি ছোট্ট পুকুর হয়ে থাকে তাহলে কলেজ একটা নদীর মতো। ক্ষেত্রটা অনেক বিস্তৃত। কখনো যদি দুটিকে মেলাতে চান তাহলে কিন্তু মুসকিল। অনেক দায়িত্বজ্ঞানের পরিচয় দিতে হবে। অহেতুক সঙ্কোচ বা লজ্জা যত জলদি সম্ভব কাটিয়ে উঠতে হবে। গ্রাম থেকে এসেছেন, গড়গড়িয়ে ইংরেজি বলতে পারছেন না, এই নিয়ে মহাসমুদ্রে পড়বেন না। কে কি বলছে তাতে কান না দিয়ে আপনার কাছাকাছি মেধা বা যোগ্যতার বন্ধুটি খুঁজে নিন।
০ সমস্ত দ্বিধা ঝেড়ে ফেলে বন্ধু বা বান্ধবীর সাথে খোলাখুলি কথা বলবেন। সে কথা বলায় থাকবে ভদ্রতা ও নমনীয়তা। তাই বলে প্রয়োজনে আপনি কতটা কঠিন হতে পারেন সেটাও আপনার বন্ধুদের জানা উচিত। যে কোন পরিস্থিতিতে খুব সূক্ষ্মভাবে বাস্তব বুদ্ধির প্রয়োগ করবেন। মনে রাখবেন পরাজয় আপনার শব্দ নয়।
০ ছেলেরা কখনই সুপিরিয়রিটি কমপ্লেক্সে ভুগবেন না। মেয়েরা আপনাদের থেকে কোন ক্ষেত্রেই কম যোগ্য নয়। আর একটি কথা কলেজ জীবনে প্রথম স্বাধীনতা পেয়ে মেয়েরা অনেক সময় কিছুটা অ্যাডভেঞ্চারাস হয়ে পড়ে। এটা বিপদের কারণ হতে পারে। তাই এই ভুলটি কখনই করা যাবে না।
সমস্যার নাম র্যাগিং
০ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এক দুঃসহ অভিজ্ঞতার নাম র্যাগিং। যদিও আমাদের দেশের কলেজগুলোতে র্যাগিং নেই বললেই চলে। তারপরও যদি ইংরেজি এই শব্দটি সামনে এসে দাড়ায় তাহলে আত্নবিশ্বাসের সাথে তা মোকাবেলা করবেন। খুব স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করবেন। পেশাক কিংবা কথা বলায় অতি আধুনিকতার পরিচয় দেবেন না। খুব বেশি স্মার্টনেস দেখালেই বিপদ আপনার সামনে হাঁটতে শুরু করবে।
০ সবচেয়ে জরুরী কথা হলো যারা র্যাগিং-এর শিকার হয় তাদের মধ্যে শতকারা ৯০ ভাগই পরের বছর র্যাগিং দেয়। সেই ভাবনা ঠিক নয়। সাময়িক আনন্দ হয়ত আপনি পাবেন, প্রতিশোধ নিবেন কিন্তু আপনার অনুজ ছেলে বা মেয়েটি কখনই আপনাকে সহজভাবে নেবে না। সত্যিকার অর্থে একজন ভাল মানুষ যদি আপনি হন তাহলে আপনার জুনিয়ররা আপনাকে এমনিতেই শ্রদ্ধা করবে।
গ্রামের মেঠো পথ ছেড়ে শহরের আগুন্তক
০ বড় শহরের কলেজগুলোতে পড়তে যাওয়ার স্বপ্ন থাকে মফস্বলের অধিকাংশ শিক্ষার্থীরই। অভ্যস্ত জীবনধারা বদলে যাওয়ার ফলে দুরু দুরু বুকে ভীত পায়ে কলেজে আসে অনেকেই। সাধারণত যে সকল কারণগুলো থাকে তা হলো-
০ উদ্বেগ বা আতঙ্কের প্রতিক্রয়া, হতাশা ও নিরাশাজনিত মানসিক অবসাদ, রাগ, হীনমন্যতা, দোষী মনোভাব। আবার পুরনো বন্ধুদের কাউকেই সাধারণত বন্ধু হিসেবে পাওয়া যায় না। একেবারে নতুন কিছু পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। যেগুলোর সমাধান অজানা।
০ হই চই হট্টগোল পূর্ণ একটু অন্যরকম জীবন যাত্রার চাপ যেমন একদিকে আছে আবার অন্যদিকে আছে পরিবারের প্রত্যাশা পূর্ণ করার তাগিদ। তার সাথে রয়েছে প্রবল প্রতিযোগিতার সাথে লড়াইয়ের প্রস্তুতি।
সমস্যাকে জয় করুন সমস্যাকে না বলুন
০ শহরে পড়তে আসার পুরো বিষয়টি কিন্তু নেগেটিভ নয়, ভলো দিকও আছে। কত লোকের সাথে মেলামেশা, কত অভিজ্ঞতা, কত জানাশোনা। এত বেশি এক্সপোজার আর কোথাও পাওয়া যায় না। তারপর রাজনীতি, নেশা, অসৎ সঙ্গ সবকিছু থেকে দূরে থাকবেন। বন্ধু নির্বাচনে অবশ্যই যত্নশীল হবেন। কাছাকাছি মানসিকতার ছেলে মেয়েদের সাথে মন খুলে কথা বলুন। দেখবেন অনেকটা হালকা লাগবে।
০ বাড়ির সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখবেন। পড়াশোনায় শীর্ষ সাফল্যের প্রতি লক্ষ্য রাখবেন কিন্তু সেটা না পেলে মুষড়ে পড়বেন না। লাইব্রেরী, পত্র-পত্রিকা খুজুন, ইন্টারনেট সার্চ করুন। প্রয়োজনে শিক্ষকদের সহযোগিতা নিন। ইংরেজিটা ভাল করে শিখতেই হবে আর একটা বিষয়, প্রতিদিন রাতে ঠিক করুন পরের দিন কি কি করবেন, দিন শেষে দেখুন কতটা করা গেল। সাফল্য ব্যর্থতার এই মাপকাঠি আপনাকে আরও বেশি সাফল্য পেতে অনুপ্রাণিত করবে।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, ফেব্রুয়ারী ২৪, ২০১০
Leave a Reply