মারাত্মক অপুষ্টি শিশুমৃত্যুর অন্যতম কারণ। মারাত্মক অপুষ্টির শিকার শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। তারা ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয় এবং মৃত্যুর ঝুঁকিও থাকে বেশি। এই শিশুরা বেঁচে থাকলেও তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ব্যাহত হয়। ফলে মেধাসম্পন্ন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গঠন হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়ে। অন্যদিকে ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত শিশুরা হাসপাতালে ভর্তি হলে রোগটির চিকিৎসা করা হয়। কিন্তু সচেতনতার অভাব এবং না জানার ফলে রোগের কারণ, অর্থাৎ অপুষ্টির দিকে নজর দেওয়া হয় না।
মারাত্মক অপুষ্টির শিকার হওয়া যেসব শিশু জেলা-উপজেলাসহ যেকোনো ধরনের হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে তাদের সমস্যা সমাধানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে জনস্বাস্থ্য পুষ্টিপ্রতিষ্ঠান এবং সেন্টার ফর মেডিকেল এডুকেশনের উদ্যোগে দেশে প্রথমবারের মতো প্রণীত হয়েছে একটি জাতীয় নির্দেশিকা। প্রতিবেশী দেশ ভারতেও এ ধরনের কোনো নির্দেশিকা নেই। এটি প্রণয়নে সহায়তা করেছে ইউনিসেফ, আইসিডিডিআরবি, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বাংলাদেশসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশের তিন থেকে চার লাখ শিশু মারাত্মক অপুষ্টির শিকার। তবে এদের মধ্যে কতজন শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়, এর কোনো পরিসংখ্যান নেই।
সম্প্রতি সিরডাপ মিলনায়তনে সর্বশেষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ড· এ এম এম শওকত আলী আনুষ্ঠানিকভাবে ‘সিভিয়ারলি মেলনারিসড চিলড্রেন ইন বাংলাদেশ’ নামের নির্দেশিকাটির উদ্বোধন করেন। উপদেষ্টা এটি বাংলায় করার জন্য অনুরোধ করেন এবং এর আলোকে স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্ব দেন। নির্দেশিকাটি দ্রুত বাংলায় অনুবাদ করার আশ্বাস দিয়েছেন জনস্বাস্থ্য পুষ্টিপ্রতিষ্ঠানের পরিচালক অধ্যাপক ডা· ফাতেমা পারভীন চৌধুরী। তাঁর মতে, নির্দেশিকার সবকিছু হয়তো একসঙ্গে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না, তবে কাজ শুরু করতে হবে। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) পুষ্টি প্রোগ্রামের প্রধান এবং নির্দেশিকা প্রণয়ন কমিটির সদস্য ড· তাহমীদ আহমেদ বলেন, ‘হাসপাতালে ভর্তি হওয়া পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের অপুষ্টি একটি বড় সমস্যা হয়ে দেখা দেয়। এ নির্দেশিকাটি স্বাস্থ্যকর্মীদের সহায়তার পাশাপাশি হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরে গেলে শিশুদের অভিভাবকেরা কী ধরনের পদক্ষেপ নেবেন, সে সম্পর্কেও দিকনির্দেশনা দিতে সহায়তা করবে।’
ড· তাহমীদ বলেন, ‘হাড়-কঙ্কাল বের হওয়া, বুকের পাঁজর দেখা গেলে, চোখ বিবর্ণ, পেট বড়, খসখসে ত্বকসহ বিভিন্ন লক্ষণ দেখা গেলে যে-কেউ বুঝতে পারেন যে শিশুটি অপুষ্টির শিকার। তবে কিছু শিশুর ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যপ্রতিষ্ঠানে শিশুর মধ্য বাহুর মাপ, ওজন, উচ্চতা প্রভৃতি মেপে শিশুটি কোন মাত্রায় অপুষ্টির শিকার, তা নির্ণয়ের প্রয়োজন হয়। খাবারসহ বিভিন্ন বিধিবিধানই মাপজোখের ভিত্তিতে করতে হয়।’
বর্তমানে ঢাকা শিশু হাসপাতাল, আইসিডিডিআরবি, মাতুয়াইলের মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং বেসরকারিভাবে খুলনা হাসপাতালে শিশুদের অপুষ্টি প্রতিরোধে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
মানসুরা হোসাইন
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জানুয়ারী ২৭, ২০০৯
Leave a Reply