একটি ছোট আকারের ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন সৈকত সরকার (ছদ্মনাম)। প্রতিষ্ঠানের হয়ে ব্যাংকিংসংক্রান্ত যাবতীয় কাজ করেন তিনি। একবার ২০ হাজার টাকা ব্যাংকে জমা দিতে গিয়ে পড়েন বিড়ম্বনায়। টাকার বান্ডিলে পাওয়া যায় ৫০০ টাকার একটি জাল নোট। ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপকের নানা রকম প্রশ্ন, সন্দেহের তীরে বিদ্ধ সৈকত সরকার যেন আকাশ থেকে পড়লেন। শুধু তাই নয়, তাঁকে পুলিশে সোপর্দ করার হুমকিও দেওয়া হয়। পরে অবশ্য সবকিছুর সঠিক উত্তর দিতে পারার কারণে রক্ষা পেয়েছিলেন। জাল টাকা নিয়ে এ রকম বিব্রতকর অবস্থায় পড়ার তিক্ত অভিজ্ঞতা অনেকেরই আছে। আছে আর্থিক ক্ষতিতে পড়ার অভিজ্ঞতাও। বাংলাদেশ ব্যাংক ঢাকা শাখার মহাব্যবস্থাপক দাশগুপ্ত অসীম কুমার জানান, প্রাথমিকভাবে জাল টাকা যে উপস্থাপন করবে অর্থাত্ যার কাছে পাওয়া যাবে, সে-ই দায়ী হিসেবে গণ্য হয়। যদি সে নিরপরাধ হিসেবে উপযুক্ত প্রমাণ দিতে পারে, তবে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। আর সন্দেহ হলে তাকে আইনের আওতায় জিজ্ঞাসাবাদ করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তিনি পরামর্শ দেন, আপনি যখন কারও সঙ্গে টাকা লেনদেন করবেন তখন দেখেশুনে এবং বুঝে করবেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রাব্যবস্থাপনা এবং পরিশোধ পদ্ধতির উপমহাব্যবস্থাপক খোন্দকার আবদুর রশিদ বলেন, ২০০৯ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন ৫৫ কোটি নোট বাজারে ছেড়েছিল। আর এর বিপরীতে বাজারে পাওয়া গেছে ৩৭ হাজার পিস জাল টাকা। গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত জাল টাকার ব্যাপারে মামলা হয়েছে চার হাজারের ওপর। সুতরাং এ থেকে রক্ষা পেতে হলে আপনাকে টাকা চিনতে হবে। না হলে প্রতারকচক্র আপনার হাতে তুলে দেবে জাল টাকা। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক মাঝেমধ্যে টাকা শনাক্তকরণ চিহ্নসহ প্রচারণা চালায়। এ ছাড়া বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে সাঁটানো থাকে পোস্টার।
৫০০ ও এক হাজার টাকার নোট চেনার উপায়
আপনি যখন কারও কাছ থেকে ৫০০ অথবা এক হাজার টাকার নোট নেবেন, তখন নোটগুলোর উল্লেখযোগ্য নিরাপত্তাবৈশিষ্ট্য খেয়াল করবেন। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, এক হাজার টাকার নোটের নিরাপত্তাবৈশিষ্ট্য ১৩টি এবং ৫০০ টাকার ১১টি।
নিরাপত্তার বৈশিষ্ট্যসমূহ
১. রং পরিবর্তনশীল হলোগ্রাফিক সুতা, ২, অসমতল ছাপ, ৩. রং পরিবর্তনশীল কালি, ৪. উভয়দিক থেকে দেখা, ৫. অন্ধদের জন্য বিন্দু, ৬. জলছাপ, ৭. এপিঠ-ওপিঠ ছাপা, ৮. অতি ছোট আকারের লেখা, ৯. লুকানো ছাপা, ১০. সীমানাবর্জিত ছাপা, ১১. পশ্চাত্পট মুদ্রণ, ১২. নম্বর, ১৩. ইরিডিসেন্ট, স্ট্রাইপ ও ১৪. বিশেষ কাগজ। নিরাপত্তাবৈশিষ্ট্যের প্রথম ১১টি ৫০০ টাকার এবং ওই ১১টিসহ পরেরগুলো এক হাজার টাকার নোটের। টাকার নোটে আপনি এসব নিরাপত্তাবৈশিষ্ট্য খুঁজে দেখবেন। তা ছাড়া জাল নোটগুলোর কাগজও হয় সাধারণ। ফলে নোটগুলো সাধারণত নরম প্রকৃতির হয়ে থাকে বলে জানা যায়। আর বিশেষ করে রং পরিবর্তনশীল হলোগ্রাফিক সুতা ও কালি, জলছাপ এবং অসমতল ছাপ জাল টাকায় থাকে না। ফলে এসব বিষয় খেয়াল রাখলেও আপনি প্রতারণা থেকে বাঁচবেন। কোনো জাল টাকা বাজারে পাওয়া গেলে, তা বাংলাদেশ ব্যাংক বাজেয়াপ্ত করে। ফলে জাল টাকা পেলে আপনি প্রমাণসাপেক্ষে আইনের হাত থেকে রক্ষা পেলেও আর্থিক ক্ষতি থেকে বাঁচতে পারবেন না। তাই টাকা লেনদেন করার সময় বিশেষ করে বড় অঙ্কের নোট বা বেশি টাকার ক্ষেত্রে অবশ্যই চেষ্টা করবেন টাকাগুলো দেখে নিতে।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ফেব্রুয়ারী ২৩, ২০১০
Leave a Reply