বেশ অন্ধকারময় একটা পরিবেশে একজন লোকের মুখ থেকে বেরোচ্ছে আগুনের হল্কা। তাজিয়া মিছিলের অংশ হিসেবে এই ছবিতে এক লোক মুখে কেরোসিন নিয়ে আগুনে ফুঁ দিচ্ছেন আর সঙ্গে সঙ্গেই আগুনের হল্কা বেরোচ্ছে সেখান দিয়ে। সে মুহুর্তটাই বন্দী করা হয়েছে ক্যামেরায়। আগুনও যে এত বৈচিত্র্যময় রঙের হতে পারে, নিজের চোখে না দেখলে তা বিশ্বাস করা যায় না। দৃক গ্যালারির দেয়ালে সাঁটানো সবগুলো ছবিই এ রকম বৈচিত্র্যময়। ছবিগুলোর আলোকচিত্রী মোহাম্মদ ইব্রাহীম বলেন, ‘পুরান ঢাকার যে উত্সবের আমেজ ও ঐতিহ্য, তা আধুনিকতার আগ্রাসনে ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। আমি মূলত এই ঐতিহ্যগুলোকেই ছবির মাধ্যমে ধরে রাখার চেষ্টা করেছি। ছবি তোলায় আমার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান নেই। মনের খেয়ালেই ছবি তুলেছি।’
আলোকচিত্রী মোহাম্মদ ইব্রাহীমের ‘লাইফ ইন ওল্ড ঢাকা, ডায়েরি অব এ উইটনেস’ শীর্ষক এ আলোকচিত্র প্রদর্শনীটি ১৯ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতি দিন বিকেল তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত চলে।
এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করতে আসা অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘পুরান ঢাকার ক্ষয় এবং নতুন ঢাকার উত্থান—এই যে ক্রান্তিকাল, এর চিত্র সুনিপুণভাবে তুলে ধরেছেন মোহাম্মদ ইব্রাহীম। পুরন ঢাকার যে প্রাণোচ্ছ্বাস যা হয়তো চোখে পড়ে না, কিন্তু তা এখনো ফল্গুধারার মতো বহমান। এ বিষয়টিও উঠে এসেছে মোহাম্মদ ইব্রাহীমের আলোকচিত্রে।’
প্রদর্শনী কক্ষে ঢুকতেই বাঁ-দিকে চোখে পড়ে একটি গাছের শেকড়ের ছবি। একটা শেকড় থেকে অনেকগুলো ছোট-বড় শেকড় একে-অপরকে আষ্টেপৃষ্ঠে আটকে রেখেছে। এরপরই আছে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যময় পায়রাবাজার। পায়রাবাজার পার হলেই দেয়ালের ওপর মুখ রেখে মাদ্রাসার ছোট ছেলেরা নদীর দিকে উত্সুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। একেবারে কোণার ছবিটা আরও অসাধারণ। কামার কাঁচি শাণাচ্ছেন, আর সেখান থেকে আগুনের স্ফুলিঙ্গ বের হচ্ছে। এ ছাড়া দেয়ালে সাঁটানো আছে পুরান ঢাকার আতশবাজির দৃশ্য, কুয়াশায় মোড়ানো মাকড়শার জাল। এই ঘরের ঠিক পাশের ঘরের আবহটা একটু ভিন্ন। এই ঘরে চলছে ঘুড়ি উত্সব। নাটাই হাতে সবাই আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে, কার ঘুড়ি কে কাটে এই সংশয় নিয়ে। পাশেই আছে ম্যানহোলের ভেতরে এক কিশোর কিছু একটা কাজ করছে আর বাইরে আরেক কিশোর ওপরের দিকে তাকিয়ে কী যেন ভাবছে! এই ছবি শুধু ছবি নয়, তা বলে যায় অনেক কথা। এখানকার প্রতিটি ছবিই পুরান ঢাকার বিভিন্ন উত্সব আর ঐতিহ্যের কথা বারবার আমাদের মনে করিয়ে দেয়।
আবু হেনা
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ফেব্রুয়ারী ২৩, ২০১০
Leave a Reply