হাইলাইটস
- সকালে উঠেই রোজ এক থালা Panta Bhat খেয়ে নেয় জগন্নাথ। তারপর কাজে যেতে হবে তাকে।
- রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করে সে। খুব পরিশ্রমের কাজ। ভারি ভারি সিমেন্ট, বালির বস্তা, ইঁট বইতে হয় রোজ।
- প্রয়োজনে মাটি কাটতে হয়। বাঁশ বাঁধতে হয়।
জগন্নাথের বাবা মদনমোহনও খুব পরিশ্রমী ছিলেন। প্রথম জীবনে তিনিও জোগাড়ের কাজ করতেন। পরে রাজমিস্ত্রি হয়ে যান। বাবার নির্দেশে জগন্নাথ এখন জোগাড়ের কাজ করছে। মানে ট্রেনিং নিচ্ছে। দুবেলা পান্তা খাওয়ার পরামর্শও বাবা দিয়েছিলেন। Panta Bhat খেলে শরীরের শক্তি বাড়ে। রোগ নাকি সহজে কাবু করতে পারে না। তাছাড়া খরচ কম এবং খেতে বেশ সুস্বাদু। জগন্নাথের মতো পরিশ্রমের কাজ যাঁরা করেন তাঁদের মধ্যে অনেকেই নিয়মিত Panta Bhat খান।
শুনে কেউ কেউ হাসতে পারেন কেউ আবার নাক সিঁটকোতে পারেন। মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ফলের মতো পুষ্টিকর খাবার ফেলে পান্তা ভাত খেয়ে কারও গায়ের জোর হতে পারে এটা ভাবাই যায় না। কিন্তু এই পান্তাভাতের প্রশংসাতেই পঞ্চমুখ হলেন AIIMS-এর চিকিৎসকরা। তাঁদের গবেষণা বলছে যে Panta Bhat নাকি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে দারুণ কার্যকর।
শুধু পশ্চিমবঙ্গই বাংলাদেশ এবং ওড়িশাতেই পান্তা ভাত খাওয়ার যথেষ্ট প্রচলন রয়েছে। Panta Bhat ওড়িশার ঐতিহ্যবাহী খাবার। উড়িয়া ভাষায় এর নাম ‘পোখাল ভাত।’ সাধারণ ভাত সারা রাত জলে ভিজিয়ে রেখে দিলেই তা খানিকটা ফুলে ওঠে। গন্ধরাজ লেবু, কাঁচা তেল, নুন, কাঁচালঙ্কা, কাঁচা পেয়াজ এবং সুস্বাদু ভাজা দিয়ে এই ভাত খাওয়ার আনন্দই আলাদা। ওড়িশাতে অবশ্য এই ভাত দই, বড়ি ভাজা, আলু সিদ্ধ, আচার ইত্যাদি দিয়ে মেখে খাওয়ার প্রচলন আছে। বাংলাদশে শুঁটকি মাছ দিয়ে পান্তা ভাত তো রীতিমতো রাজকীয় খাবার। ধনী দরিদ্র নির্বিশেষে এই খাবার খান চেটেপুটে।
অনেকেই Panta Bhat-কে গরিবের খাবার বলে ঠাট্টা করেন। কিছুটা হয়তো ঠিকই। মূলত দরিদ্র পরিবারগুলিতেই খাদ্যাভাব মেটাতে পান্তাভাত খাওয়ার প্রচলন হয়। অল্প ভাত সারারাত জলে পড়ে থাকলেই ফুলে ফেঁপে পরিমাণে বেড়ে যায়। জল ভাত খেলে পেট ভরা থাকে অনেক্ষণ। কাজের এনার্জি পাওয়া যায়। ভাতের সঙ্গে নুন, লঙ্কা, পেঁয়াজ হলেই খেয়ে নেওয়া যায়। থরে থরে ব্যঞ্জনের প্রয়োজন হয় না। কালক্রমে সেই খাবারটিই বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের কাছে পরিচিতি লাভ করে। খাদ্যরসিকরা নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে পান্তাভাতের সঙ্গে সহচরী হিসেবে নানা রকমের ভাজা, শুঁটকি মাছ, আলুর চোখার মতো জিভে জল আনা খাবার পছন্দ করে নিয়েছেন। যদিও স্বাদ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের অত মাথা ব্যথা নেই। তাঁদের গবেষণার বিষয় পান্তাভাতের পুষ্টিগুণ।
২০১৯ সাল থেকে পান্তাভাতের পুষ্টিগুণ নিয়ে গবেষণা শুরু করেন ভুবনেশ্বর AIIMS-এর গবেষকরা। তাতে জানা যায় যে, জলে ফেঁপে ওঠা পান্তাভাতের শর্ট-চেইন ফ্যাটি অ্যাসিড রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়াও পান্তাভাতে থাকে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট। ফ্যাটি অ্যাসিড এবং কার্বোহাইড্রেটের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটারি ধর্ম শরীরের এনার্জি লেভেল বৃদ্ধি করে। শরীরকে বলশালী করতে সাহায্য করে। গবেষকদের দাবি এটি প্রাথমিক পরীক্ষা। তাঁদের অবশ্য আশা যে ভবিষ্যতে পান্তাভাতের আরও গুণাগুণ বের হতে পারে।
গবেষকরা এতদিনে স্বীকৃতি দিলেও গ্রাম বাংলার এবং ওড়িশার মানুষ কিন্তু বহু বছর ধরেই এই পান্তাভাতের গুণের সঙ্গে পরিচিত। বৈজ্ঞানিক ব্যাখা না জানলেও পরিশ্রমের কাজে পান্তাভাতের গুণ ছড়িয়ে পড়েছে বংশপরম্পরায়।
Lifestyle News in Bengali, লাইফস্টাইল খবর, Health Tips, Fashion Trends and Tips in Bangla
2021-07-10 09:49:04
Source link
Leave a Reply