ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মেহতাব খানম দীর্ঘদিন ধরে কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিষয়টি পড়াচ্ছেন। তিনি আপনার বিভিন্ন মানসিক সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান দেবেন। অল্প কথায় আপনার সমস্যা তুলে ধরুন। আপনার সঠিক পরিচয় না দিতে চাইলে অন্য কোনো নাম ব্যবহার করুন। যে সমস্যার কথা আপনি ছাপতে চান না, তা লিখে পাঠাবেন না। খামের ওপর অবশ্যই ছুটির দিনে মনের জানালা কথাটি লিখবেন।
—বি.স.
সমস্যা: আমি প্রথম প্রেমে পড়ি আমার এক সহপাঠীর। কিন্তু প্রেমে শুধু আমিই পড়েছিলাম, তার দিক থেকে ভালোলাগাটুকুও ছিল না। এটা বুঝতে পারি আমি অনেক পরে; ততক্ষণে আমার অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। সম্পর্কটা অনেক দূর এগিয়ে গেছে। কিন্তু সে আমাকে বিয়ে করতে অস্বীকার করে। তার পর আমি নিজেই সম্পর্কটা থেকে বের হয়ে আসি। আমি তার জন্য অপেক্ষা করি অনেক দিন। তিন বছর পর মাত্র চার মাসের জানাশোনায় বিয়ে করে বসি অন্য এক ছেলেকে। কিন্তু সেও আমাকে ছেড়ে যায়।
আমার অপরাধ—আমি আগে প্রেম করেছি। পাশাপাশি আমার ঘাড়ে আরও কিছু অপবাদ আসে যে আমি সুন্দরী নই এবং আর দশটা মেয়ের মতো স্মার্ট নই। তার সঙ্গে আমার এখনো ছাড়াছাড়ি হয়নি। আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি। সামাজিকভাবে অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছি আমি। এর মধ্যে আবার ফোনে একটা ছেলের সঙ্গে পরিচয় হয় আমার। ছেলেটি চাকরির সূত্রে আমার শহরেই থাকে। সেও আমার মতো সমস্যাগ্রস্ত। সে আমার সঙ্গে একটা সম্পর্কে জড়াতে চায়, যে সম্পর্কটা হবে প্রেমের মতো, তবে প্রেম নয়। এখন দেখছি সেও আমার কাছে অন্য কিছু চায়। ছেলেটার স্বপ্ন কোনো সুন্দরী-উর্বশীকে বিয়ে করা।
আমি আর কোনো ছেলেকে বিয়ে করতে চাই না। আমি মুক্তি চাই এ জীবন থেকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
পরামর্শ: মানুষগুলো তোমার খুব কাছে এসেছে ঠিকই কিন্তু তোমার মনের ঐশ্বর্যের খবর ওরা পায়নি। তোমাকে যারা ঠিকমতো মূল্যায়ন করতে পারেনি এটা তো তাদের সমস্যা। তবে এটা সত্যি যে বারবার এ ধরনের নেতিবাচক অভিজ্ঞতা হলে আত্মবিশ্বাস ধরে রাখা কষ্টকর হয় এবং নিজেকে অন্যের কাছে গ্রহণযোগ্য বলে মনে করতে অসুবিধা হয়। কিন্তু ভুললে চলবে না যে আমাদের উন্নত চিন্তাশক্তি, মেধা, সাহস আর ধৈর্য আছে। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এগুলোকে কাজে লাগিয়ে নিজের প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। মনে হচ্ছে, অতীতে যে মানুষগুলোর সঙ্গে তোমার বিশেষ সম্পর্ক হয়েছে, তাদের সঙ্গে মানসিক সম্পর্ক বা নৈকট্য তৈরি হয়নি। বিপরীত লিঙ্গের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে জৈবিক চাহিদাকে অস্বীকার করার উপায় নেই ঠিকই, কিন্তু সে সম্পর্কের ভিত্তি কখনো দৃঢ় হবে না, যদি এর মাধ্যমে মানসিক চহিদাগুলো না মেটে। দুটো মানুষের সম্পর্ক অটুট থাকবে তখনই, যখন কেউ কারও দুর্বল জায়গা নিয়ে পরস্পরকে ছোট করবে না বা অশ্রদ্ধা দেখাবে না। যে ছেলেটির সঙ্গে তোমার সবশেষে সম্পর্ক তৈরি হয়েছে, সেই সম্পর্কটির সংজ্ঞা তো মোটেও স্পষ্ট নয়। প্রেমের মতো কিন্তু প্রেম নয়—এমন তো হতে পারে না। যেকোনো সম্পর্কের ক্ষেত্রে এ ধরনের অস্পষ্টতা থাকলে তার পরিণতি খুব ভালো হওয়ার কথা নয়। তুমি যেহেতু দুবার কষ্ট পেয়েছ, তাই নিজের সত্তাকে আর বিপর্যস্ত হতে দিয়ো না, কেমন? নিজের মন আর শরীরের প্রতি যত্নশীল হও এবং সুস্থ বিনোদন চর্চা করো। সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় যেহেতু পৃথিবীতে এসেছ, একমাত্র তাঁর কাছ থেকে ডাক এলেই এই পৃথিবী থেকে বিদায় নেবে—এমন অঙ্গীকার করো নিজের কাছে।
প্রতিদিন মনে মনে বলবে, যা-ই বলুক, তুমি অন্তত নিজেকে কখনো ছোট ভাববে না। তুমি যেমন আছ ঠিক তেমনভাবেই আগে নিজেকে সর্বান্তকরণে গ্রহণ করে নাও। তারপর মনকে আরও সমৃদ্ধিশালী করে তোলার জন্য উদ্যোগ নাও। চলার পথে এমন কোনো বন্ধুও পেতে পারো, যে তোমাকে সত্যিকারের মর্যাদা দিতে সক্ষম হবে।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ফেব্রুয়ারী ২০, ২০১০
Leave a Reply