শরীরটাকে কম নাড়াচাড়া করা, শুয়ে-বসে দিন কাটানো মোটেও ভালো অভ্যাস নয়। নিছক আলসেমি সেটা। আলস্য রোগের আকর। উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ইত্যাদি রোগের কারণ হতে পারে আলস্য। অসুখগুলো হলে তো হাঁটবেনই। চিকিৎসকের পরামর্শ, উপায় নেই।
আসলে নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যাস তো জরুরি এসব অসুখ হওয়ার আগেই। কিন্তু ব্যায়াম করার সময় কই? চলুন না দৈনন্দিন জীবনের কাজের মধ্যেই আমরা ব্যায়ামকে শরীরের সঙ্গে ফিট করে নিই!
বাড়িঘরের বা গৃহস্থালির বেশ কিছু কাজ অন্যকে দিয়ে না করিয়ে নিজেই করার চেষ্টা করুন। ঘর ঝাড়ু দেওয়া, ঘর মোছা, ঘরদোর গোছানো, বিছানা গোছানো, থালা-গ্লাস ধোয়া, কাপড় কাচা, খোলা জায়গায় মুক্ত বাতাসে ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ-কত কী-ই তো করা যায়! করুন, শরীরটা সচল থাকবে।
বাগান করুন, বাগানের পরিচর্যা করুন। আনন্দ ও ব্যায়াম-দুটোই হবে। সোফায় বসে পানি বা চা পান করবেন? করুন। তবে নিজেই উঠে গিয়ে চা বা পানিটা নিয়ে আসুন। বাতি বা ফ্যানের সুইচ নিজেই গিয়ে অফ করুন। টেলিফোন সেটটা বিছানা থেকে একটু দূরে রাখুন।
তাহলে একটু উঠে গিয়ে কথা বলতে হবে। শরীরটার একটু নড়াচড়া হবে। সকালে নাশতার আগে এবং রাতে খাওয়ার পর ৫-১০ মিনিট থেকে শুরু করে আধ ঘণ্টা পর্যন্ত হাঁটুন। ভালো লাগবে। গলির মাথার দোকান থেকে কিছু একটা কিনতে যাবেন? সাইকেল বা রিকশায় নয়, হেঁটে যান। বাজার করতে গিয়ে বাজারে পৌঁছার একটু আগেই রিকশা বা গাড়ি থেকে নেমে বাকি পথটায় আপনার পদধূলি দিন। ফেরার সময়ও বাড়ি থেকে একটু দূরেই রিকশা বা গাড়ি ছেড়ে দিন। বাকি পথটুকু হাঁটুন। যখন হাঁটবেন তখন গা ছেড়ে নয়, একটু জোরেই হাঁটুন। শরীরটা যেন একটু ঘামে।
অফিসে অন্য কক্ষে কারও সঙ্গে কথা বলা প্রয়োজন? টেলিফোনে নয়, হেঁটে গিয়ে কথাগুলো বলে আসুন। শরীরটাও সচল রইল, আর যাঁর সঙ্গে কথা বললেন, দেখাও হলো তাঁর সঙ্গে। এক ঢিলে দুই পাখি। অফিসের টেলিফোন সেটটা আপনার ডেস্ক থেকে একটু দূরে রাখুন, যেন উঠে গিয়ে কথা বলতে হয়। অফিসে সারাক্ষণ বসেই থাকা নয়। টানটান হয়ে আড়মোড়া ভাঙ্গুন ুমাঝেমধ্যে। টেবিলের আশপাশে একটু পায়চারিও করতে পারেন। ওপরে উঠতে বা নিচে নামতে লিফট নয়, সিঁড়ি ব্যবহার করুন। অন্তত দু-তিন তলা সিঁড়ি বেয়েই উঠুন, নামুন। অফিস থেকে বাড়ি ফেরার সময় বাড়ি থেকে একটু দূরেই রিকশা বা গাড়ি ছেড়ে দিয়ে বাকি পথ হাঁটুন।
দৈনন্দিন জীবনের এসব কাজের মাধ্যমেই আমাদের বেশ ব্যায়াম হয়ে যাবে। মাংসপেশির কর্মক্ষমতা বেড়ে যাবে। জয়েন্টগুলো থাকবে সচল। হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুসের কর্মক্ষমতাও বাড়বে। ক্যালরি খরচ হবে বেশ। শরীরের ওজন কমবে, সঠিক ওজন ধরে রাখা যাবে। ক্ষুধা বাড়বে। ভালো ঘুম হবে। দুশ্চিন্তা কমবে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের আশঙ্কা কমবে। কমবে স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কাও। সব মিলিয়ে শরীরটা সুস্থ থাকবে দীর্ঘদিন।
ডা· মো· শহীদুল্লাহ্
সহযোগী অধ্যাপক, কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগ, কমিউনিটি বেজড্ মেডিকেল কলেজ, ময়মনসিংহ
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জানুয়ারী ২০, ২০০৮
Leave a Reply