সারা বিশ্বজুড়ে করোনার প্রভাব শুরু হওয়ার পর মিউটেশনের মাধ্যমে এর রুপ পরিবর্তন হচ্ছে। ধারাবাহিকভাবে আলফা, বেটা, গামা, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট সারা বিশ্বজুড়ে তাণ্ডব চালাচ্ছে। তবে এবার ডেল্টার পর নতুন আতঙ্ক ছড়াচ্ছে করোনার ল্যাম্বডা নামের আরেকটি ভ্যারিয়েন্ট। করোনার এই ধরনটির ‘অস্বাভাবিক’ মিউটেশন হচ্ছে। যার কারণে লাতিন আমেরিকার কর্মকর্তাদের উদ্বেগ বাড়ছে। করোনার এই ধরনটির ‘অস্বাভাবিক’ মিউটেশনে ধাঁধায় পড়েছেন বিজ্ঞানীরাও। গবেষকরা বলছেন, টিকা নেওয়ার পর তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডিকেও ফাঁকি দিতে পারে করোনার এই নতুন ধরন। এমনটিই বলা হচ্ছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক গণমাধ্যমর এক প্রতিবেদনে।
করোনার এই ধরনটি নাম ছিল সি.৩৭। এরপর জুনে এটির নামকরণ করা হয় ল্যাম্বডা। করোনার এই ধরনটি প্রথম শনাক্ত হয় পেরুতে। বর্তমানে এই ধরনটি সারা বিশ্বের ২৭ দেশে ছড়িয়েছে। যুক্তরাজ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে এই ভাইরাস। দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যজুড়ে করোনার এই ধরন ছড়িয়ে পড়েছে। তবে রোগীর সংখ্যা সীমিত।
পেরুর রাজধানী লিমার কেয়েতানো হেরেদিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের ডক্টর পাবলো সুকায়মা বলেছেন, গত ডিসেম্বরে যখন চিকিৎসকরা এই ধরনটি ছড়িয়ে পড়ার ঘোষণা দেন, তখন তারা বলেন যে প্রতি ২২ নমুনার একটিতে এই ধরন পাওয়া গেছে। কিন্তু চলতি বছরের মার্চ মাসে লিমায় অর্ধেক নমুনায় এই ধরন পাওয়া যায়। আর বর্তমানে ৮০ শতাংশ নমুনায় এই ধরন পাওয়া যাচ্ছে।
ডব্লিউএইচওর তথ্য মতে, পেরুতে জুন ও মে মাসে ৮২ শতাংশ করোনা রোগী এই ধরনে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর রেকর্ড এটিই। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মনে করে, আগের চারটি ধরনের চেয়েও এই ধরনটি কম উদ্বেগের। করোনার এই নতুন রূপ নিয়ে ধাঁধায় বিজ্ঞানীরা। এই ধরনটি করোনাকে আরো সংক্রমণযোগ্য করে তুলে কি না- সে বিষয়ে এখনো কোনো তথ্য দিতে পারছেন না তারা।
প্যান-আমেরিকান স্বাস্থ্য সংস্থার ভাইরাল রোগের পরামর্শদাতা জাইরো মান্দেজ রিকো বলেছেন, এই মুহূর্তে এটি অন্য ধরনগুলোর চেয়েও বেশি আক্রমণাত্মক বলে মনে করার মতো কোনো প্রমাণ নেই। তিনি জানান, হয়তো এটির সংক্রমণের হার আরো বেশি। তবে এটি নিয়ে আরো কাজ করা দরকার।
যুক্তরাজ্যের ওয়েলকাম স্যাঞ্জার ইনস্টিটিউটের কভিড-১৯ জিনোমিক্স ইনিশিয়েটিভের পরিচালক জেফ ব্যারেট বলেছেন, এই ধরনের তথ্য ও ল্যাবের তথ্য ব্যবহার করে ল্যাম্বডার হুমকির বিষয়টি বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে। তার মতে, এর কারণ হলো একটি। আর সেটি হলো, অন্যান্য ধরনের তুলনায় এটির অস্বাভাবিক রূপান্তর ঘটেছে। তিনি জানান, লাতিন আমেরিকার জেনেটিক সিকোয়েন্সিং সুবিধার ঘাটতি রয়েছে। এ কারণে এই অঞ্চলের করোনা প্রাদুর্ভাবকে কতোটা বৃদ্ধি করছে তা জানতে সমস্যা তৈরি হচ্ছে।
ল্যাম্বডার স্পাইক প্রোটিনে ৭টি মিউটেশনের একটি অনন্য প্যাটার্ন রয়েছে। যা ভাইরাসটি মানুষের কোষকে সংক্রামিত করতে ব্যবহার করে। সান্টিয়াগোর চিলি বিশ্ববিদ্যালয়ের মনিকা আচেভেদো এবং তার সহকর্মীরা ল্যাম্বাডার প্রভাব নিয়ে গবেষণা করেছেন। চীনের টিকা করোনোভ্যাকের দুটি ডোজ নিয়েছেন এমন স্থানীয় স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের রক্তের নমুনা ব্যবহার করে তারা গবেষণা করেন। গত বৃহস্পতিবার তাদের গবেষণাপত্র একটি প্রি-প্রিন্ট জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষণাপত্রে বলা হয়, করোনার এই ধরনটি আলপা ও গামা ধরনের চেয়েও বেশি সংক্রামক। করোনার ভ্যাকসিন নেওয়ার পর অ্যান্টিবডি তৈরি হলেও এই ধরন ফাঁকি দিতে পারে। গবেষণাপত্রে তারা লেখেছেন, আমাদের ডেটা প্রথমবারের মতো দেখিয়েছে যে, ল্যাম্বডার স্পাইক প্রোটিনে থাকা মিউটেশনগুলো অ্যান্টিবডিকে ফাঁকি দিতে পারে। সেই সঙ্গে সংক্রমণও বাড়ায় এই ধরন।
ব্রাজিলের দক্ষিণের শহর পোর্তো আলেগ্রির একটি হাসপাতালে করোনার এই ধরনে আক্রান্ত এক রোগীকে নিয়ে বিশ্লেষণ করেছেন গবেষকরা। পিয়ার-রিভিউ করা হয়নি এমন একটি প্রি-প্রিন্ট গবেষণাপত্রে তারা বলছেন, পেরু, ইকুয়েডর, চিলি ও আর্জেন্টিনাতে এই ধরনটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে- তা বিবেচনা করে আমরা বিশ্বাস করি, ল্যাম্বডা নামের এই ধরনটি ‘উদ্বেগের ভেরিয়েন্ট’ হয়ে ওঠার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।
এস সি/ ০৮ জুলাই
স্বাস্থ্য | DesheBideshe
2021-07-08 17:51:17
Source link
Leave a Reply