হাইলাইটস
- হিমালয়ের পাদদেশে নাকি এক রূপকথার দেশ আছে। সেখানে নাকি ডানাওয়ালা ঘোড়ারা থাকে।
- জলের নীচে যে মাছেরা থাকে তাদের ঘিরে নাকি কতগুলি আলো ঘোরাফেরা করে।
- সূয্যি ডোবার পর জঙ্গলের ভিতর ছোটো ছোটো আলোরা ঘুরে বেড়ায়।
- সেখানকার ফুলগুলি আমাদের দেশের গোলাপ, জবা, পদ্মের মতো দেখতে নয়।
সেই স্বপ্নের দুনিয়াটা খানিকটা চোখের সামনে দেখিয়েছিলেন জেমস্ ক্যামেরন। তাঁর ছবি অবতার যেন ছিল সেই স্বপ্নের দুনিয়ারই একটা ভার্চুয়াল রূপ। এমন এক স্বপ্নের দুনিয়া যেখানে দিনের বেলার প্রকৃতি যেমনই মনোরম রাতের প্রকৃতি তেমনই মায়াবী। অন্ধকারে নানা ধরনের রহস্যময় আলো অবতারদের দুনিয়াকে আলোকিত করে রাখে।
কিন্তু জানেন কি লীলা মজুমদারের গল্প কিংবা অবতারদের দুনিয়ার মতো স্বপ্নের দুনিয়া আমাদেরই দেশে আছে? সেখানে রূপকথার প্রাণীরা না থাকলেও তার পরিবেশ রূপকথার মতোই মায়াবী। রাতের অন্ধকারেও এই জায়গাগুলি জ্বল জ্বল করতে থাকে। আর সেই আলো দেখতেই পর্যটকরা ভিড় জমান সেসব স্থানে।
পশ্চিম জয়ন্তিয়া পাহাড়, মেঘালয়
মেঘালয়ের পশ্চিম জয়ন্তিয়া পাহাড়ের জঙ্গলে যদি রাতের অন্ধকারে প্রবেশ করেন তাহলে চোখের সামনে দেখতে পাবেন হলিউড ছবি অবতারের সেই দ্বিতীয় বিশ্বকে। জঙ্গলে প্রবেশ করার পর স্থানীয় গাইড প্রথমেই আপনাকে বলবে হাতের টর্চটি নিভিয়ে দিন। তারপরের দেখতে পাবেন প্রকৃতির এক অনবদ্য জাদুর খেলা। চারদিকে আলো আলো আর আলো।এ যেন আলোর মেলা। না জোনাকির আলো নয়, সেগুলি হল ইলেক্ট্রিক মাশরুমের আলো। প্রকৃতির নিয়মেই অন্ধকারে এই মাশরুম জ্বলে ওঠে। স্থানীয়রা অন্ধকারে হাঁটার সময় মাশরুমের এই আলো ব্যবহার করে থাকেন। এটি রোরিডোমাইসিস প্রজাতির মাশরুম। স্থানীয়দের কাছে এটি স্বাভাবিক হলেও গবেষকদের অবাক করে দিয়েছিল এই জ্বল জ্বলে মাশরুম। প্রাকৃতিক এই আলো দেখতে মেঘালয়ের পশ্চিম জয়ন্তিয়া পাহাড়ে ভিড় জমান পর্যটকরা।
পুরুষওয়াড়ি অরণ্য, মহারাষ্ট্র
মহারাষ্ট্রের আদিবাসী গ্রাম পুরুষওয়াড়ি। খুব কম লোকেই এর নাম শুনেছেন। কিন্তু যাঁরা এই অনামী জায়গার নামটা শুনেছেন তাঁরাই শুধু গ্রামের বিশেষত্বের কথা জানেন। গ্রীষ্মকালে রাতের বেলা এখানে ঝাঁক ঝাঁক জোনাকি জ্বলে ওঠে। রাতেরবেলা কয়েক লক্ষ জোনাকির আলো চোখের সামনে দেখে মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই। বিশেষ করে তাদের প্রজননের সময় দৃশ্যটা আরও সুন্দর হয়ে ওঠে। মূলত মে এবং জুন মাস জোনাকিদের প্রজনন সময়। সেই সময় গাছে গাছে থোকা থোকা জোনাকি জ্বলে। প্রত্যেক বছর এই গ্রামে জোনাকি উৎসব পালিত হয়। দেশ বিদেশ থেকে হাজার হাজার পর্যটক এই আলো দেখতে সেই সময় ভিড় জমান।
জুহু বিচ, মহারাষ্ট্র
মহারাষ্ট্রের জুহু বিচ। বলিউডের কল্যাণে বেজায় জনপ্রিয় সাগরতট। এই বিচ কখনও নাকি ঘুমোয় না। সকাল, সন্ধে, রাত, দুপুর এখানে সদাই হইচই। রাতের বেলাও বিচে আলো নেভে না। না শুধু বৈদ্যুতিন আলো নয়, জুহু বিচে আছড়ে পড়া আরব সাগর আলোকিত থাকে প্রাকৃতিক আলো দিয়েও। মোটামুটি রাত ৮টার পর জলে বিন্দু বিন্দু নীল আলো ভেসে বেড়াতে থাকে। সেই আলো না দেখলে পর্যটন জীবনে একটা ফাঁক থেকে যাবে। এই নীল বিন্দুগুলি হল এক ধরনের জলজ উদ্ভিদ জীবাণু। পোশাকী নাম সামুদ্রিক অভ্র বা নকটিলিউকা সিনটিল্যান্স। সূর্য ডোবার পর সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে থাকলে দেখতে পাবেন নীল আলোর ঢেউ সাগরতটে আছড়ে পড়ছে।
বেতালবাতিম বিচ, গোয়া
রাতের অন্ধকারে জ্বল জ্বল করে ওঠে গোয়ার বেতালবাতিম সমুদ্র তট। বিচটি মূলত দক্ষিণ গোয়ায় অবস্থিত। দিনের বেলা সাদা বালি, ডলফিন এবং সন্ধ্যায় সূর্যাস্ত এখানকার প্রধান আকর্ষণ। আর রাতের প্রধান আকর্ষণ সমুদ্রের জলের আলো। সমুদ্রের জলজ প্রাণীর গা থেকে এই আলো ঠিকরে পড়ে। সন্ধ্যা থেকে ভোররাত পর্যন্ত পর্যটকরা গোয়ায় ডিস্কো পাবে ব্যস্ত থাকেন। কিন্তু একবার অন্তত বেতালবাতিম বিচে রাত না কাটালে বিশাল বড় একটা মিস হয়ে যাবে।
মাট্টু বিচ, কর্ণাটক
কর্ণাটকের মাট্টু বিচে লোকে সাধারণত পিকনিক করতে যান। এছাড়াও এখান থেকে সূর্যাস্তের রূপ আরও অপরূপ। আর রাতের বেলা মাট্টু বিচের রূপ যেন আরও ঝলমলিয়ে ওঠে। সমুদ্রে তখন থরে থরে ভেসে বেড়াচ্ছে নীল আলো। কর্ণাটকের সমুদ্রটিও আরব সাগর। তাই এখানেও নকটিলিউকা সিনটিল্যান্স নামের জলজ জীবাণু দেখা যায়। আর রাতের বেলা এগুলিই জ্বলে ওঠে। মাট্টু বিচে দিনে পিকনিক তো সবাই করে কিন্তু রাতের অসাধারণ জ্বল জ্বলে চেহারা না দেখলে প্রকৃতির এক বিস্ময় হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে।
Lifestyle News in Bengali, লাইফস্টাইল খবর, Health Tips, Fashion Trends and Tips in Bangla
2021-07-08 18:43:15
Source link
Leave a Reply