হাইলাইটস
- ড্রেস কিংবা মেক আপের সঙ্গে ম্যাচিং মাস্ক। এটাই এখন লেটেস্ট ফ্যাশন।
- নতুন বর-কনে হোক বা তাঁদের আত্মীয় দামি শাড়ি জামার সঙ্গে ম্যাচিং মাস্ক বিক্রি হচ্ছে পোশাকের দোকানে।
- ওদিকে চায়ে দোকানে চা বিক্রি করতে করতে মজাসে মাস্ক বিক্রি করছেন চা বিক্রেতা।
গত বছরের প্রথম দিকে যখন করোনার সঙ্গে আমাদের দেশের লোকজনের পরিচয় হয় তখন PPE কিট তো বটেই মাস্ক নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠেছিল মানুষের মনে। কোন মাস্ক পরবে কোনটা নয় তা নিয়ে বেজায় সচেতন হয়ে পড়েছিলেন সকলে। ঝোপ বুঝে কোপ ফেলেছিলেন দোকানি এবং ব্যবসায়ীরাও। ৫-১০ টাকার মাস্ক ১০০ টাকাতেও বিক্রি হয়েছে। PPE কিট অবশ্য যে কেউ হাতে পেতেন না। মূলত চিকিৎসক, নার্স, চিকিৎসাকর্মী এবং করোনা রোগীর সংস্পর্শে যাওয়া লোকজনকেই এটি দেওয়া হচ্ছিল। আসলে প্রথম ধাক্কায় দেশজুড়েই পর্যাপ্ত PPE কিট ছিল না। যা ছিল তার দামও অনেক। এদিকে একবার পরার পর সেটি দ্বিতীয়বার ব্যবহার করা যায় না। ফলে নিত্যদিন হাজার হাজার PPE কিটের প্রয়োজন। স্বাভাবিক নিয়মে করোনার সঙ্গেও মানিয়ে গুছিয়ে নেয় মানুষ। যে মাস্ক নিয়ে সকলে দারুণ সচেতন হয়ে উঠেছিলেন সেই মাস্ক নিয়ে পরে রীতিমতো ছেলে খেলা শুরু হয়। যার ফল চায়ের বা চপের দোকানে ঝুলতে থাকা কাপড়ের মাস্ক।
সস্তায় মাস্ক কিংবা PPE কিট তো কিনছেন। কিন্তু সেগুলি কি আদৌ ব্যবহারযোগ্য? সরকারি অনুমোদন বা নিয়ম মেনে কি সেগুলি তৈরি হয়?
সরকারি অনুমোদন
– PPE কিট অনুমোদনের প্রথম সরকারি শর্ত হল যেন রক্ত যেন ভিতরে প্রবেশ করতে না পারেন।
– প্রতিটি কিট (গগল্স, ফেস শিল্ড, মাস্ক, গ্লভস্, গাউন, হেট কভার এবং জুতোর কভার) কোনও প্রতিষ্ঠিত গবেষণাগারে পরীক্ষিত হতে হবে।
– মাস্ক হতে হবে থ্রি লেয়ার। সেটিও প্রতিষ্ঠিত গবেষণাগারের অনুমোদনপ্রাপ্ত হতে হবে।
দেড়শো কোটির দিকে এগিয়ে যাওয়া নাগরিকের দেশ ভারতবর্ষে চাহিদা বাড়ায় প্রতিদিন সাড়ে লক্ষ PPE কিট তৈরি শুরু হয়। এর সুযোগ নিতে থাকে কিছু অসাধু এবং অসচেতন ব্যবসায়ী। মুড়ি মুড়কির মতো PPE কিট তৈরি করতে শুরু করে।
কিন্তু সেফ অ্যাপ্লায়েন্স ম্যানুফ্যাকচার অ্যাসোসিয়েশনেরর (SAMA) হিসেব অনুযায়ী আমাদের দেশে বর্তমানে হাজারেরও বেশি PPE কিট নির্মাণকারী সংস্থা রয়েছে। আর এগুলির মধ্যে ব্যুরো অফ ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ডস্ অ্যাসোসিয়েশনের (BIS) অনুমোদন প্রাপ্ত সংস্থার সংখ্যা মাত্র ৩৩০। এবং এগুলির মধ্যে N95 মাস্ক তৈরির অনুমোদন রয়েছে মাত্র দুটি সংস্থার। যদিও বাজার তা বলছে না। বাজারে PPE এবং মাস্কের সংখ্যা অনেক অনেক বেশি।
বাস্তব অবস্থা
বাজার এখন ছেয়ে গেছে নিম্নমানের PPE কিট এবং মাস্কে। অভিযোগ করছেন বিশেষজ্ঞরাই। মাস্ক তৈরিকে এখন অনেকেই সাইড বিজনেস হিসেবে বেছে নিয়েছেন। নিম্নমানের প্লাস্টিকের PPE কিটও বিক্রি হচ্ছে রমরমিয়ে।
আসল নকল
– বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী PPE কিট সঠিক কিনা তা চেনার একমাত্র উপায় হল পোশাকটি রক্ত শোষণ করতে সেটির মাধ্যমে রক্ত প্রবেশ করতে পারছে কিনা তা দেখা। সঠিক ল্যামিনেশনের কিটের নাম ২৫০-৩৫০ টাকা। বাজারের দেড়শো টাকার বিক্রি PPE কিট কিন্তু নকল।
পরীক্ষার শর্ত মানা হচ্ছে না
– গত বছর BIS-এর নির্দেশ অনুযায়ী সরকারি অনুমোদনপ্রাপ্ত পিপিই উৎপাদনকারী সংস্থাগুলি প্রথম চার মাস সরকারি গবেষণাগারে নিজেদের প্রোডাক্ট পরীক্ষা করাত। চারমাস পর নিজেদের গবেষণাগারে পরীক্ষার অনুমতি পেত তারা। বর্তমানে সেসব নিয়মকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে চলছে
নকল PPE-র ব্যবসা
– আগে সংস্থাগুলি সরাসরি সরকারের কাছে কিট বিক্রি করত। সাধারণ মানুষ সরাসরি তা হাতে পেতেন না। এখন তো অনেক জায়গায় এমনিই কিনতে পাওয়া য়ায।
– আসলে সরকারি নিয়ম মানতে গিয়ে উৎপাদনে দেরি হয়ে যাচ্ছেল। কিন্তু চাহিদা বাড়ছিল হু হু করে। ফলে পরীক্ষা নিরীক্ষার ভার সরকারের পরিবর্তে সংস্থার গবেষণাগারের উপর ছেড়ে দেওয়ায় অনুরোধ জানায় উৎপাদনকারী সংস্থাগুলি। জরুরি ভিত্তিতে অনুমোদন দেয় সরকার। তাদের উদ্দেশ্য সাধু হলেও একদল অসাধু ব্যবসায়ী তার ফায়দা তুলতে শুরু করে।
– একই অবস্থা হয় মাস্কের ক্ষেত্রেও। N95 মাস্কের দাম বেশি হওয়ায় সাধারণ মাস্কের দিকে ঝুঁকতে শুরু করে মানুষ। স্বাস্থ্য সচেতনতার থেকেও আকৃষ্ট হয়ে পড়ে হাল ফ্যাশনে। চাহিদা বাড়লে যোগানো যে বাড়ে তা স্বাভাবিক। মানুষ কিনতে শুরু করেছে। ফলে উৎপাদনও বেড়েছে।
– কোনও প্রতিষ্ঠিত গবেষণাগারে সেগুলির মান পরীক্ষা করা হয় না।
– সবই চলছে খোলা বাজারে। সরকার, বিশেষজ্ঞ, সরকারি আধিকারিক সকলের চোখের সামনেই ব্যবসা চলছে। কারও কোনও হেলদোল নেই। সবচেয়ে অসচেতন সাধারণ মানুষ।
– অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে ফের কঠোর পরীক্ষার দাবি শুরু করেছেন বিশেষজ্ঞরা। যদিও বাজারে নকল এবং অস্বাস্থ্যকর জিনিস কম দামে মিলছে বলে মানুষ যদি তাতে উৎসাহ হিতে থাকেন তাহলে কারও কিছু করার থাকবে না। দ্বিতীয় ঢেউয়ের পর এবার করোনার তৃতীয় ঢেউও দোরগোড়ায় অপেক্ষা করছে। নকল অস্বাস্থ্যকর জিনিস সেই ঢেউ পার করতে কতটা সক্ষম হবে তা বলবে সময়। এপ্রসঙ্গে মনে রাখা দরকার করোনা ভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে মৃতের হার কিন্তু অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই নিজের স্বাস্থ্যের কথা নিজেকে ভাবার সময় কিন্তু বয়ে যাচ্ছে। সাবধান।
Health and Fitness Tips in Bengali শরীর-গতিক, Yoga and Exercise Tips in Bangla
2021-07-07 11:33:50
Source link
Leave a Reply