শীতের হিমেল হাওয়ায় সবারই মন চায় একটু বেড়িয়ে আসতে। ভ্রমণে যাওয়ার আগে কিছু বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখলে ভ্রমণ হবে আরও আনন্দদায়ক ও নিরাপদ।
বেড়াতে যাওয়ার আগে পরিকল্পনা করে নিন। পর্যাপ্ত শীতের কাপড় নিতে ভুলবেন না। ছোটখাটো দুর্ঘটনার জন্য একটি ফাস্ট এইড বক্স তৈরি করে নিন। এটা এমন কঠিন কিছু নয়। ছোট একটি বাক্সে একটি অ্যান্টিসেপটিক সলিউশন (ডেটল, স্যাভলন বা অন্য কিছু), কিছু গজ, ব্যান্ডেজ ও একটি পাতলা কাপড় নিন। সঙ্গে প্যারাসিটামলজাতীয় ওষুধ, ব্যথানাশক, গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ ও স্যালাইন নিতে পারেন। ভ্রমণে যাওয়ার সময় ভালো পরিবহন বেছে নিন। পাবলিক পরিবহনে গেলে অপরিচিত মানুষের কাছ থেকে কিছু খাবেন না।
ব্যক্তিগত গাড়ি থাকলে নিজে গাড়ি না চালিয়ে একজন অভিজ্ঞ চালকের হাতেই দায়িত্বটা ছেড়ে দিন। তবে ভোরে ও রাতে এবং পিচ্ছিল পথে অবশ্যই সাবধানে গাড়ি চালাতে হবে। কোথায় বেড়াতে যাচ্ছেন তার ওপর ভ্রমণের সতর্কতা অনেকখানি নির্ভরশীল। যেমন সিলেট ও পার্বত্য চট্টগ্রামের ম্যালেরিয়াপ্রবণ এলাকায় গেলে বিশেষ সাবধান থাকা উচিত।
এসব এলাকায় রাতে ঘুমানোর সময় মশারি তো টানাবেনই, সেই সঙ্গে সন্ধ্যার পর বাইরে বের হলে শরীর যতটুকু সম্ভব ঢেকে রাখতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয়, এসব এলাকায় ভ্রমণের এক সপ্তাহ আগে থেকেই প্রতিষেধক হিসেবে চিকিৎসকের পরামর্শমতো ডক্সিসাইক্লিন বা মেফ্লোকুইন অথবা এটোভাকুইন বা প্রোগুয়ানিল ওষুধ সেবন করলে।
অন্যান্য রোগের জন্য প্র্রতিষেধক, যেমন জন্ডিসের জন্য হেপাটাইটিস ‘এ’, ‘বি’র ভ্যাকসিন ও ভ্রমণকালে কুকুরের কামড় থেকে রক্ষা পেতে অ্যান্টিরেভিস ভ্যাকসিন নেওয়া উচিত। সমুদ্র, লেক বা যেকোনো জলাশয়ের আশপাশে ভ্রমণের সময় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। সাঁতার না জানলে এসব স্থানে কখনো পানিতে নামা উচিত নয়। সমুদ্রসৈকতে বেড়াতে গেলে ভাটার সময় সমুদ্রে নামা ঠিক নয়। এ ছাড়া গুপ্তখাল থেকেও সাবধান থাকতে হবে। এসব স্থানে কিশোর-তরুণেরাই বেশি দুর্ঘটনার শিকার হয়।
তাই এ বয়সীদের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখুন। ভ্রমণের সময় আরও খেয়াল রাখতে হবে খাওয়াদাওয়ার প্রতি। বিশেষ করে পানি বিশুদ্ধ হওয়াটা জরুরি। ভ্রমণকালীন পুরোটা সময় মিনারেল ওয়াটার অথবা ফোটানো পানি খেতে হবে। কোনো রেস্টুরেন্টে খাওয়ার সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিন।
অতিরিক্ত ঝাল, মসলাযুক্ত খাবার, সালাদ একেবারে কমিয়ে খান। ভ্রমণে কখনো রাস্তার খাবার খাবেন না। কারণ এসব খাবার থেকে ডায়রিয়া ও পেটের অন্যান্য রোগ হতে পারে। অনেক সময়ই দেখা যায় শিশুর অসুখের কারণে ভ্রমণ সংক্ষিপ্ত করতে হচ্ছে। তাই ভ্রমণসঙ্গী হিসেবে যদি শিশুরা থাকে তবে তাদের স্বাস্থ্যের দিকে আলাদা করে খেয়াল রাখতে হবে। ভ্রমণকালীন বিকেলের পর বাইরে বের হলে শিশুকে পর্যাপ্ত কাপড় পরাতে হবে। শিশুর খাবারের প্রতিও বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। সেই সঙ্গে বাড়তি সতর্কতা নিতে হবে, যারা দীর্ঘদিন ধরে অসুখে আক্রান্ত তাদের প্রতিও। ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য ট্যাবলেট বা ইনসুলিন, শ্বাসকষ্টের রোগীদের জন্য ইনহেলার, উচ্চ রক্তচাপসহ অন্য রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত ওষুধ নিয়ে যেতে হবে। সেই সঙ্গে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রের ফটোকপি ও সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের ফোন নম্বর থাকা চাই। সবচেয়ে ভালো হয় একটি কাগজে নাম, যোগাযোগের ঠিকানা, ফোন নম্বর, রক্তের গ্রুপ, কোনো রোগ থাকলে তার নাম, কী কী ওষুধ নিয়মিত খান, ইনহেলার কয়বার নিয়ে থাকেন, ইনসুলিন নিলে কী পরিমাণ নেন ইত্যাদি লিখে রাখলে। এটি শুধু রোগীজন্য নয়, সবার জন্যই প্রযোজ্য। স্বাস্থ্যসচেতন থাকলে ভ্রমণ থেকে ফেরার পর নিজেকে ক্লান্ত মনে হবে না।
ডা· আবু সাঈদ শিমুল
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জানুয়ারী ১৪, ২০০৮
Leave a Reply