হৃৎপিণ্ড প্রতিনিয়তই কাজ করছে। এর প্রধান কাজ সারা দেহে রক্ত সরবরাহ করা। রক্ত সরবরাহ করার জন্য তাকে সাহায্য করে সরু ও পাতলা কিছু নালিকা। নালিকাগুলো পা থেকে মাথা পর্যন্ত বিস্তৃত। মৃত্যুর আগমুহূর্ত পর্যন্ত এবং ঘুমের ঘোরেও এই নালিকাগুলো কাজে ব্যস্ত থাকে। এদের বলা হয় শিরা, ধমনি ও কৈশিক জালিকা।
পানির মেশিন যেমন পানি পাম্প করে আর পাইপলাইনগুলো দালানের প্রতিটি প্রান্তে পানি সরবরাহ করে, তেমনি আমাদের দেহের হৃৎপিণ্ডটি একটি পাম্প আর রক্তবাহী নালিকাগুলো হচ্ছে পাইপলাইন। হৃৎপিণ্ড থেকে রক্তবাহী নালিকাগুলো গাছের শাখা-প্রশাখার মতো সারা দেহে ছড়িয়ে পড়েছে।
ধমনি হৃৎপিণ্ড থেকে অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্ত সারা দেহে বহন করে। আর শিরা বহন করে কার্বন ডাই-অক্সাইড-সমৃদ্ধ রক্ত। ব্যতিক্রম শুধু পালমোনারি ধমনি; এই ধমনি অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্ত বহন করে না। শিরা দেহের উপরিভাগে অবস্থিত। আমাদের হাত ও পায়ে নীলচে সবুজ রঙের শিরা দেখা যায়। কিন্তু ধমনিকে দেখা যায় না। কারণ, ধমনি দেহের ভেতর অবস্থিত। স্যালাইন ও ক্যানোলা দেওয়ার সময় শিরায় সুই ঢোকানো হয়। শিরা পাতলা ও সরু রক্তবাহী নল।
শিরার দেহের প্রাচীর পাতলা আর ধমনির প্রাচীর পুরু। বৃদ্ধ বয়সে শিরায়
কোনো পরিবর্তন হয় না। কিন্তু ধমনি দড়ির মতো শক্ত হয়ে যায়। শিরার রক্তের রং কালচে আর ধমনির উজ্জ্বল লাল। ধমনি কেটে গেলে ফিনকি দিয়ে দ্রুত বেগে রক্ত বের হয়। কিন্তু শিরা কেটে গেলে রক্তপাত হয় চুয়ে চুয়ে।
ধমনি ও শিরার সংযোগস্থলে কৈশিক জালিকা জালিকা আকারে বিন্যস্ত থাকে। ধমনির স্থিতিস্থাপকতা রয়েছে। পক্ষান্তরে শিরার নেই।
দেহের পাইপলাইনের যত্ন নেবেন কীভাবে
— প্রচুর পরিমাণে পানি, শাকসবজি ও মৌসুমি ফল খেতে হবে। পানি বেশি খেলে দেহের দূষিত পদার্থ ও চর্বিজাতীয় বস্তু শিরা-ধমনির দেয়ালে জমতে পারে না।
— ভিটামিন ‘সি’-জাতীয় ফল ও সবজি দেহের চর্বি অপসারণে সাহায্য করে। দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ চর্বিমুক্ত থাকলে শিরা, ধমনি ও কৈশিক জালিকাও চর্বিমুক্ত থাকবে।
— বহুমূত্র, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, কিডনির রোগ, দেহের ওজন সব সময় নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
— ব্যায়াম, বিশেষত মুক্ত বাতাসে কিছু সময়ের জন্য হাঁটা প্রতিটি মানুষের জন্য অত্যন্ত জরুরি। হাঁটাহাঁটিতে দেহের রক্তবাহী নালিসহ প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ভালো থাকে।
— বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গুরুপাচ্য কমিয়ে ফেলতে হবে। এগুলো পুরোপুরি বর্জন করা উচিত।
— ধূমপান ও মাদক একেবারেই নয়।
— যেকোনো ইনজেকশন নেওয়ার সময় খেয়াল রাখা উচিত, ইনজেকশনটি যেন অব্যবহৃত প্যাকেট থেকে বের করা হয়।
ফারহানা মোবিন
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জানুয়ারী ১৪, ২০০৮
Leave a Reply