প্রকৃতিক চিকিৎসা হচ্ছে উৎকৃষ্ট চিকিৎসা। তবে কি মেডিকেল চিকিৎসার কোনো দরকার নেই? অবশ্যই আছে। চিকিৎসার ও চিকিৎসকের সফলতা সেখানেই যেখানে এই প্রাকৃতিক চিকিৎসাকেই কাজে লাগিয়ে রোগী সুস্থ করে তোলা যায়।
ধরা যাক, আপনি সাধারণ সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। এখন চিকিৎসক আপনাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারেনঃ
১. আপনাকে বুঝিয়ে বলবেন, এটি একটি সাধারণ ভাইরাস জনিত সমস্যা যা সাধারণত এমনিতেই অর্থাৎ বিশেষ কোনো ওষুধপত্র ছাড়াই ভালো হয়ে যায়।
২. জ্বর বা সর্দির জন্য সামান্য কিছু ওষুধ যেমন জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল এবং সর্দির জন্য প্রয়োজন হলে অ্যান্টি হিস্টামিন জাতীয় ওষুধ দিতে পারেন।
৩. দু-তিন দিন বিশ্রামে থাকতে বলতে পারেন যেটা রোগীর প্রাকৃতিক চিকিসায় একই সাথে এর সংক্রমণও রোধ করে।
তাহলে দেখা যাচ্ছে প্রাকৃতিক চিকিৎসাকেই আমরা সাহায্য করছি মাত্র। যেহেতু এটি একটি ভাইরাস জনিত সমস্যা তাই এন্টিবায়োটিক ব্যবহারের এর কোনো প্রশ্নই এখানে ওঠে না।
অথবা ধরুন আপনার শিশু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। চিকিৎসক কি করতে পারেন তার জন্য-
- ডায়রিয়ার ধরন ও ইতিহাস বিশ্লেষণ করে যদি মনে হয় এটি কোন ভাইরাসজনিত ডায়রিয়া তাহলে তো এন্টিবায়োটিক দরকার হবে না। তখন লক্ষণজনিত চিকিৎসা যেমন খাবার স্যালাইন বা শিরায় স্যালাইন দিতে পারেন যা আপনার শিশুর পানি শূন্যতা রোধ করবে। সাথে সাথে বমি, জ্বর বা পেটে ব্যথা ইত্যাদি থাকলে তার জন্য কোনো ওষুধ ব্যবহার করতে পারেন। আবার যদি দৃশ্যমান হয় যে এটি জীবাণুঘটিত তবে একটি অ্যান্টিবায়োটিক দিতে পারেন যা শিশুর শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতার পাশাপাশি সাহায্যকারী হিসেবে ওই জীবাণুর বিরুদ্ধে কার্যকর হবে।
এ ক্ষেত্রেও দেখুন আমরা প্রাকৃতিক চিকিৎসাকেই শুধু সমর্থন করছি মাত্র। আমাদের শরীরের ভেতরে সৃষ্টিকর্তা একটি একক প্রতিরোধ ক্ষমতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। যাকে বলি ইম্যুনিটি, এটি কিন্তু পারিপার্শ্বিকতার পরিবর্তনের সাথে সাথে নিজেরও পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করে থাকে আমাদের অজান্তেই। এটাকেই কিন্তু আমরা অভিয়োজনের একটা অংশ হিসেবে ধরে নিতে পারি। শুধু রোগ-জীবাণুই যে পরিবর্তিত হয়, তাদের প্রকৃতি বদলায় তা নয়; সাথে সাথে আমাদের এই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতারও পরিবর্তনসাধিত হয়। এই পরিবর্তন জীবন আছে এরকম সব কিছুই মধ্যেই পরিলক্ষিত হয়; বেঁচে থাকার তাগিদে। অবশ্য আমাদের মানুষের ক্ষেত্রে বলতে হবে শুধু বেঁচে থাকা নয় বাঁচার মতো বাঁচার জন্য। এই জন্য আমাদের শরীরের এ রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা সদাই জাগ্রত। যখনই কোনো ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দেয় তখনই এই ক্ষমতা প্রয়োজনমাফিক প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করে, অবশ্য মাঝে মধ্যে তা মাত্রাতিরিক্ত হয়ে যায়। এতে অনেক সময় নিজের শরীরের প্রচণ্ড ক্ষতিসাধিত হয়। এই প্রতিরোধের মাত্রাটাকেই চিকিৎসকরাই বেশি হলে কমিয়ে সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসাটাই চিকিৎসকদের কাজ। কিন্তু লক্ষণীয় ব্যাপার হলো আমরা এই মূলমন্ত্র ভুলে এখন অদ্ভুতসব আচরণ করছি। ‘গাদা ওষুধ ব্যবহার করলেই রোগ তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে উঠবে’ এই মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে উঠছি।
মানুষের স্বাভাবিক প্রচেষ্টা, পরিমিতির চর্চা, হাঁটাচলা, ব্যায়াম করা ইত্যাদির প্রচার প্রচারণাটা অধিকহারে এবং অধিকহারে চালান উচিত। বিশেষ করে আমরা যারা চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত আছি তাদের। যে কোনো অসুস্থতা মানেই ডাক্তারের কাছে যাওয়া। ডাক্তারের কাছে যাওয়া মানেই অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা আর ওষুধ নতুবা অপারেশন এবং এটাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই লাগাতার পৌনঃপুনিকতায় পর্যবসিত হয়ে ওঠেছে। এসব অভ্যাস পরিহার করা উচিত।
লেখকঃ ডা. মশিউর রহমান (জাহিদ)
লেখকঃ কনসালট্যান্ট ফিজিশিয়ান, জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল, ঢাকা
উৎসঃ দৈনিক নয়াদিগন্ত, ০৯ ডিসেম্বর ২০০৭
Leave a Reply